প্রাণভিক্ষা ‘চাইবেন’ মুফতি হান্নান

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি মুফতি আব্দুল হান্নান ও তার এক সহযোগী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার ইংগিত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2017, 05:22 AM
Updated : 22 March 2017, 07:11 AM

হরকাতুল জিহাদের শীর্ষনেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুলের রিভিউ আবেদন খারিজের রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি মঙ্গলবার মধ্যরাতে কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছায়।

বুধবার সকাল ১০টার পর ওই রায় তাদের পড়ে শোনানো হয় বলে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার মো. মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, “মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে জানা যাবে।”

সিলেটে ১৩ বছর আগে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলা চালিয়ে পুলিশসহ তিনজনকে হত্যার দায়ে এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি দেলোয়ার ওরফে রিপন আছেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে।

সিলেটের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. সফিউল্লাহ বলেন, “রিপনকে রায় পড়ে শোনানো হয়েছে। উনি প্রাণ ভিক্ষা চাইবেন কিনা- তা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে পরে জানাবেন।”

আদালতের সব বিচারিক প্রক্রিয়ার নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ায় এই তিন জঙ্গির সামনে এখন কেবল ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগই বাকি। 

কাশিমপুর কারাগারের জেলার বিকাশ রায়হান জানান, কারাবিধি অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজার আদেশ পাওয়া আসামিরা রায় শোনার সাত দিনের মধ্যে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারেন।

হান্নান ও বিপুল স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন বলেও জানান তিনি।

প্রাণভিক্ষার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে কারাবিধি অনুযায়ী এই আসামিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু করবে কারা কর্তৃপক্ষ। তিন আসামির মধ্যে যে যে কারাগারে আছেন, সেখানেই তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে কারা কর্মকর্তাদের কথায়।

সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজার প্রাঙ্গণে ২০০৪ সালের ২১ মে ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী গ্রেনেড হামলার মুখে পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই পুলিশের এএসআই কামাল উদ্দিন নিহত হন। এছাড়া পুলিশ কনস্টেবল রুবেল আহমেদ ও হাবিল মিয়া নামের আরেক ব্যক্তি মারা যান হাসপাতালে। আনোয়ার চৌধুরী ও সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অন্তত ৪০ জন ওই ঘটনায় আহত হন।

আপিল বিভাগ গত বছরের ৭ ডিসেম্বর এ মামলার আপিলের রায় ঘোষণা করে। গতবছর ১১ ফেব্রুয়ারি তিন আসামিকে হাই কোর্টের দেওয়া সর্বোচ্চ সাজার রায়ই তাতে বহাল থাকে।

এ মামলার বাকি দুই আসামি মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে হাই কোর্ট যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। আপিল না করায় তাদের ওই সাজাই বহাল থাকে।

মৃত্যুদণ্ডের তিন আসামি আপিলের রায় পর্যালোচনার আবেদন করলেও গত ১৯ মার্চ সর্বোচ্চ আদালতে তা খারিজ হয়ে যায়। ফলে চূড়ান্ত বিচারেও ফাঁসির রায় বহাল থাকে।   

রিভিউ শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী তার মক্কেলদের দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার কথা জানিয়ে সাজা কমানোর আবেদন করেছিলেন।

কিন্তু রায়ের সময় বিচারক বলেন, “তারা যে অপরাধ করেছে তা পূর্বপরিকল্পিত একটি অপরাধ। ব্রিটিশ কূটনীতিবিদ ও তার সফরসঙ্গীদের হত্যা করার জন্যই এ হামলা চালানো হয়েছিল। এ অভিযোগের দায় থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া যায় না।”

বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টাসহ হরকাতুল জিহাদের ১৩টি নাশকতামূলক ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যার পেছনে মূল ব্যক্তি হলেন মুফতি হান্নান।

রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনাতেও তার মৃত্যুদণ্ডের রায় এসেছে বিচারিক আদালতে। ওই মামলায় তার আপিল হাই কোর্টে বিচারাধীন।

এই হুজি নেতার বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়৷ তিনি লেখাপড়া করেছেন গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসায়। ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর ঢাকার বাড্ডা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

২০০০ সালের ২০ জুলাই সেই কোটালীপাড়াতেই শেখ হাসিনার সভামঞ্চের কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। মুফতি হান্নান ওই মামলারও আসামি।