বিধিতে আটকাবে বাল্য বিয়ে, আশায় রিয়াজুল

বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনে ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের সুযোগ রাখায় হতাশা প্রকাশ করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2017, 11:23 AM
Updated : 21 March 2017, 12:30 PM

তবে তিনি আশাবাদী, এই আইনের অধীনে যে বিধি প্রণয়ন হচ্ছে, তাতে শিশুদের বাল্য বিয়ের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে।

সদ্য প্রণীত বাল্য বিয়ে নিরোধ আইনে ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ আদালতের সায় নিয়ে মেয়েদের ১৮ বছরের কম এবং ছেলেদের ২১ বছরের কমে বিয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে এই বিশেষ প্রেক্ষাপটের সুযোগ নিয়ে কত কম বয়সীদের বিয়ে দেওয়া যাবে, তা নির্দিষ্ট করা নেই।   

মানবাধিকার ও নারী সংগঠনগুলোর ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেছেন, এই আইনের অধীনে বিধি হচ্ছে, তা হলে আইনটির অপব্যবহারের সুযোগ থাকবে না।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘২১ মার্চ আন্তর্জাতিক বর্ণবৈষম্য দিবস উদযাপন’ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় বাল্য বিয়ে নিরোধ আইন নিয়ে কথা বলেন মানবাধিকার কমিশনের প্রধান রিয়াজুল।

তিনি বলেন, “বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন নিয়ে আমরা নিরাশ হয়েছি। তবে এখন আশার বিষয় হল, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিধির মাধ্যমে শিশুদের সর্বোচ্চ স্বার্থ রক্ষা করা হবে।”

বিয়ের বয়স শিথিলের বিশেষ বিধান বাতিল দাবিতে এমন আহ্বান ছিল, কিন্তু তাতে ফল আসেনি

মানুষের মনে বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনের অপব্যবহারের যে সন্দেহ এসেছে, তা বিধির মাধ্যমে দূর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিধি প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইনপ্রণেতা ও এনজিওগুলোর ভূমিকাও প্রত্যাশা করেছেন রিয়াজুল হক।

এই আইনটি তড়িঘড়ি করে প্রণয়ন করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। বিধি প্রণয়নের ক্ষেত্রে তেমন তড়িঘড়ি না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ দলিত পরিষদ ও পরিত্রাণ নামে একটি সংগঠনের যৌথ আয়োজনে ‘দলিত জনগোষ্ঠির মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ককাস ও বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়নের পক্ষে ‘জাতীয় নীতি সংলাপ’ উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন রিয়াজুল হক।

বৈষম্য বিলোপ আইন পাশ করার বিষয়ে সংসদ থেকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

“বৈষম্য বিলোপ আইন করার বিষয়ে জাতিসংঘ এমন চাপ সৃষ্টি করেছিল, যে কারণে মন্ত্রী (আইনমন্ত্রী) বলেছিলেন, ছয় মাসের মধ্যে আইন করা হবে। যেহেতু জাতিসংঘের কাছে মন্ত্রী কথা দিয়ে এসেছেন, তাই আমাদের আশা হবে এই আইনটি দ্রুত ‍উনারা করবেন।”

কাজী রিয়াজুল হক (ফাইল ছবি)

আলোচনায় মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, “যে সমস্ত আইন ও আইনের ধারা নিয়ে মানুষের প্রশ্ন থাকে, কোনো আলোচনা না করে, অসুবিধার কথা শুনেও নিমিষেই পাস হয়ে যায়।

“প্রধানমন্ত্রী মনে-প্রাণে চান দেশ সোনার বাংলা হোক। কিন্তু তার চাওয়া ও পাওয়ার মধ্যে এত ফাঁক কেন? সেই ব্যাপারে আপনারা নিজেরা (এমপি) কতখানি দায়বোধ করেন। সংসদ সদস্যদের কাছে আমার সরাসরি প্রশ্ন।”

দলিত জনগোষ্ঠির মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সংসদীয় ককাস ও বৈষম্য বিলোপ আইন দ্রুত প্রণয়নের দাবি জানান সুলতানা কামাল।

জাতীয় সংসদের হুইপ মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘বৈষম্য বিলোপ আইন-২০১৫’ শিগগিরই সংসদে উত্থাপন করা হবে।

দলিত সম্প্রদায়ের জন্য চাকরি ক্ষেত্রে যে কোটা রয়েছে তা যথাযথ বাস্তবায়নের উপর জোর দেন তিনি।

আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য কাজী রোজী, হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, রুস্তম আলী ফরাজী, মমতাজ বেগম, মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশি কবির, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম ও পরিচালক (অধিকার) রিনা রায়।