মুফতি হান্নানের রিভিউ খারিজের রায় প্রকাশ

বিচারকদের সইয়ের পর জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ তিনজনের রিভিউ আবেদন খারিজের রায় প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2017, 06:31 AM
Updated : 22 March 2017, 05:05 AM

এই রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি মঙ্গলবারই হাই কোর্ট ও বিচারিক আদালত হয়ে কারাগারে পাঠানো হবে বলে হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মো. সাব্বির ফয়েজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফার ডটকমকে জানিয়েছেন।

সিলেটে ১৩ বছর আগে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলা চালিয়ে পুলিশসহ তিনজনকে হত্যার মামলায় চূড়ান্ত বিচারেও হরকাতুল জিহাদের ওই তিন জঙ্গির ফাঁসির রায় বহাল থাকে।

তারা রায় পর্যালোচনার আবেদন করলেও গত ১৯ মার্চ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে তা খারিজ হয়ে যায়।

রিভিউ খারিজের রায়ে বিচারকদের স্বাক্ষরের পর মঙ্গলবার সকালে তা প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট। পাঁচ পৃষ্ঠার ওই রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটেও প্রকাশ করা হয়।

রায় হাতে পাওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষ ফাঁসির আসামি মুফতি আব্দুল হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার ওরফে রিপনের কাছে জানতে চাইবে- কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনার কথা জানিয়ে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না।

আদালতের সব বিচারিক প্রক্রিয়ার নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ায় এই তিন জঙ্গির সামনে এখন কেবল ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগই বাকি। 

তারা ক্ষমা না চাইলে কিংবা তার ক্ষমার আবেদন রাষ্ট্রপতি প্রত্যাখ্যান করলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু করবে কারা কর্তৃপক্ষ।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছেন, কারাবিধি মেনে সমস্ত আইনি প্রক্রিয়ার পর আসামিদের দণ্ড কার্যকরের পদক্ষেপ নেবে কারা কর্তৃপক্ষ।

সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজার প্রাঙ্গণে ২০০৪ সালের ২১ মে ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী গ্রেনেড হামলার মুখে পড়েন।

এতে ঘটনাস্থলেই পুলিশের এএসআই কামাল উদ্দিন নিহত হন। এছাড়া পুলিশ কনস্টেবল রুবেল আহমেদ ও হাবিল মিয়া নামের আরেক ব্যক্তি মারা যান হাসপাতালে। আনোয়ার চৌধুরী ও সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অন্তত ৪০ জন ওই ঘটনায় আহত হন।

আপিল বিভাগ গত বছরের ৭ ডিসেম্বর এ মামলার আপিলের রায় ঘোষণা করে। গতবছর ১১ ফেব্রুয়ারি তিন আসামিকে হাই কোর্টের দেওয়া সর্বোচ্চ সাজার রায়ই তাতে বহাল থাকে।   

এ মামলার বাকি দুই আসামি মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে হাই কোর্ট যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। আপিল না করায় তাদের ওই সাজাই বহাল থাকে।

দণ্ডিত পাঁচ আসামির সবাই কারাগারে আছেন। তাদের মধ্যে মুফতি হান্নান ও বিপুল আছেন গাজীপুরের কাশিমপুরে হাই সিকিউরিটি কারাগারে। আর দেলোয়ার ওরফে রিপন আছেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে।

গত ৬ মার্চ একটি মামলার শুনানি শেষে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীদের আদালত থেকে কাশিমপুর কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়ার পথে টঙ্গীতে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে তাদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়।

রিভিউ শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী তার মক্কেলদের দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার কথা জানিয়ে সাজা কমানোর আবেদন করেছিলেন।

কিন্তু রায়ের সময় বিচারক বলেন, “তারা যে অপরাধ করেছে তা পূর্বপরিকল্পিত একটি অপরাধ। ব্রিটিশ কূটনীতিবিদ ও তার সফরসঙ্গীদের হত্যা করার জন্যই এ হামলা চালানো হয়েছিল। এ অভিযোগের দায় থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া যায় না।”

বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টাসহ হরকাতুল জিহাদের ১৩টি নাশকতামূলক ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যার পেছনে মূল ব্যক্তি হলেন মুফতি হান্নান।

রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনাতেও তার মৃত্যুদণ্ডের রায় এসেছে বিচারিক আদালতে। ওই মামলায় তার আপিল হাই কোর্টে বিচারাধীন।

এই হুজি নেতার বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়৷ তিনি লেখাপড়া করেছেন গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসায়। ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর ঢাকার বাড্ডা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

২০০০ সালের ২০ জুলাই সেই কোটালীপাড়াতেই শেখ হাসিনার সভামঞ্চের কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। মুফতি হান্নান ওই মামলারও আসামি।