আসামি হাজির না করায় পিছিয়েছে ‘একুশে অগাস্ট মামলার’ শুনানি

নিরাপত্তার কারণে মুফতি হান্নানসহ মামলার কোনো আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করতে না পারায় একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলার দুই মামলায় শুনানি হয়নি।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2017, 05:58 PM
Updated : 20 March 2017, 05:58 PM

সোমবার এ দুই মামলার চূড়ান্ত তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির জ্যেষ্ঠ বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহ্হার আকন্দকে সে কারণে জেরা করাও যায়নি বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম কৌঁসুলি আবু আবদুল্লাহ ভূইয়া।

তিনি বলেন, “আসামিদের উপস্থিতিতে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে আইনে।”

সোমবার ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করার দিন ধার্য ছিল।

এদিন নিরাপত্তাগত কারণে আসামিদের হাজির করতে না পারায় রাষ্ট্রপক্ষ শুনানি পেছানোর জন্য সময়ের আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করে পরবর্তী জেরার জন্য আগামী মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছেন বলে জানান এ ট্রাইব্যুনালের সাঁটলিপিকার ওয়ালিউল ইসলাম বাদল।

গত ১৫ মার্চেও মামলা দুটির দুই আসামি মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলকে হাজির না করায় জেরার শুনানি পিছিয়ে যায়।

ফাইল ছবি

এর আগে একুশে অগাস্টের দুই মামলায় গত ৬ মার্চ শুনানি শেষে মামলার অন্য আসামিসহ জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানকে গাজীপুরের কাশিমপুরে নেওয়ার সময় তাকে ছিনিয়ে টঙ্গীতে আসামিদের প্রিজন ভ্যানে হামলা হয়।

মুফতি হান্নান সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলার মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।

একুশে অগাস্টের মামলায় ৫১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ইতোমধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট ভয়াবহ ওই হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী।

এ ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ।

পুলিশের তদন্তের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তের দায়িত্ব পায়। পরে মামলাটি যায় সিআইডিতে। ২০০৮ সালের ১১ জুন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন।

২০০৯ সালের ৩ অগাস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে। মামলাটি তদন্তের ভার পান সিআইডির পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম যুক্ত করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন।

মামলার আসামিদের মধ্যে যুদ্ধাপরাধে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় এ মামলা থেকে তার নাম বাদ যায়। ফলে এ মামলায় আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫১ জনে।

৫১ আসামির মধ্যে তারেক রহমানসহ পলাতক ১৮ জন। জামিনে রয়েছেন আটজন এবং কারাগারে ২৫ জন।

পলাতকরা হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, সাবেক এমপি কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, হাফেজ ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, রাতুল বাবু, ডিএমপির সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান, ডিএমপির সাবেক ডিসি (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, মেজর (অব.) এটিএম আমিন, মাওলানা তাজউদ্দিন, ঝিনাইদহের ইকবাল, বরিশালের মাওলানা আবু বকর, মাগুরার খলিলুর রহমান, ঢাকা দোহারের জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর ও গোপালগঞ্জের মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার এবং ভারতের তিহার কারাগারে আটক হুজির সদস্য আনিসুল মোরসালিন ও মহিবুল মোত্তাকিন।