তুলে নিয়ে হত্যা: সরকারের ‘উদ্বিগ্ন হওয়া উচিৎ’

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে হত্যা কিংবা গুমের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2017, 05:45 PM
Updated : 20 March 2017, 05:45 PM

“আইনশৃংখলা বাহিনীর দ্বারাই হোক, বা যে কোনো ধরনের হত্যাকাণ্ডই হোক, অবশ্যই তা উদ্বেগের কারণ। সরকারেরও এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিৎ,” বলেছেন তিনি।

নিখোঁজ এক যুবকের র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর মারা যাওয়া নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনার মধ্যে সোমবার ঢাকায় এক আলোচনা অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের একথা বলেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।

সরকারি বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে গুম-হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আগে থেকে করে আসছে বিএনপি। তিন দিন আগে জঙ্গি হামলার পর হানিফ মৃধা নামে ওই যুবকের মৃত্যুর পর তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা উঠেছে।

রিয়াজুল হক বলেন, “সরকারকে তদন্ত করে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। যতদিন আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারবে না, ততদিন এ বিষয়ে কথা চলতেই থাকবে এবং একটি দুষ্টচক্র সেই সুযোগটা নেবে।”

র‌্যাব হানিফ মৃধাকে শুক্রবার জঙ্গি হামলার পর গ্রেপ্তারের দাবি করলেও তার পরিবার বলছে, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তাকে তুলে নেওয়া হয়েছিল।

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “সরকারকে এগুলো তদন্ত করে বের করতে হবে। কোনটি সঠিক, তা প্রমাণ করতে হবে সরকারকেই। 

“তাদের (সরকার) লোক যদি ধরে না থাকে, সেটিও প্রমাণ করতে হবে। আর যদি ধরে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে।”

বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক ও কাপেং ফাউন্ডেশন আয়োজিত 'সরকারের প্রতিশ্রুতি ও আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশুর বর্তমান অবস্থা' শীর্ষক আলোচনায় বক্তব্য রাখেন রিয়াজুল হক।

কাজী রিয়াজুল হক (ফাইল ছবি)

গাইবান্ধায় সাঁওতালদের উচ্ছেদে সরকারদলীয় জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরেই তিনি বলেন, “তাদের উপরে জুলুমটা রাষ্ট্রীয় মদদে হয়নি। কিছু স্বার্থন্বেষী লোক আপনাদের কাছ থেকে চাঁদা নিত, তা বন্ধ করে দেওয়ার পরই নির্যাতন শুরু হয়।”

আলোচনা সভায় আদিবাসীদের উপর সেনাবাহিনীর নিপীড়নের অভিযোগের বিষয়টিও আসে।

এ বিষয়ে রিয়াজুল হক বলেন, “এটাই একমাত্র কারণ নয়। তবে কারণ যে নয়, তা নয়।”

কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের বিচার এখনও না হওয়ার সমালোচনা করেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার।

তিনি বলেন, “এসব সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো দরকার। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া এসব দূর করা সম্ভব না।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম নারীর উপর নিপীড়নে রাজনৈতিক ক্ষমতার যোগসূত্রের বিষয়টি তুলে ধরেন।

“ধর্ষকদেরও রাজনৈতিক দল থাকে, এ থেকে বের হতে না পারলে এসব অপরাধ কমবে না,” বলেন তিনি।

মহিলা পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রাখী দাশ পুরকায়স্থ বলেন, “আদিবাসী নারীদের পথ আটকে কারা তাদের উপর নির্যাতন করে, তা আমরা জানি। আমরা তা বুঝি, কিন্তু বলি না। কারণ বললেই পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু আমাদের এই স্বাধীন দেশটাকে আমরা ক্ষতবিক্ষত দেখতে চাই না বলেই আমরা কথা বলি।”

বাল্য বিয়ে নিরোধ আইনে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের সুযোগ রাখার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আমরা পেছনের দিকে যাচ্ছি। ভুতের তো পা পেছনের দিকে থাকে, মানুষের তো থাকে না। তাহলে দেশের পা কোনদিকে যাচ্ছে?”

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সমন্বয়ক ও কাপেং ফাউন্ডেশনের সদস্য ফাল্গুনী ত্রিপুরা বলেন, ২০১৬ সালে সারাদেশে আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি ৫৩টি মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৫৮ জন আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশু শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

ডেইলি স্টার ভবনে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সুলেখা মুরংয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের ডেপুটি কমিশনার ও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের প্রধান ফরিদা ইয়াসমীন, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের প্রতিনিধি হালিমা বেগম।