‘শিশু হত্যার বিক্ষোভে কাঁপুক বসুন্ধরা’

ধর্মভিত্তিক মৌলবাদী গোষ্ঠীর আগ্রাসন ও রাজনৈতিক-সামাজিক সহিংসতায় শিশু হত্যার প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে বিশ্ব শিশু কিশোর ও যুবনাট্য দিবস।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2017, 05:19 PM
Updated : 20 March 2017, 05:20 PM

দিবসটি উপলক্ষে ‘শিশু হত্যার বিক্ষোভে আজ কাঁপুক বসুন্ধরা’ স্লোগানে সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজন করা হয় আলোচনা ও বিশেষ অনুষ্ঠানের।

ইন্টারন্যাশনাল অ্যামেচার থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ থিয়েটার ফর চিলড্রেন অ্যান্ড ইয়ং পিপল (এএসএসআইটিজে) এর বাংলাদেশ কেন্দ্র পিপলস থিয়েটার এ আয়োজন করে।

২০০১ সালে বিশ্ব শিশু কিশোর ও যুবনাট্য দিবস হিসেবে ঘোষণার পর থেকে পিপলস থিয়েটার তার ২৫০টি সংগঠন নিয়ে দিবসটি সাড়ম্বরে পালন করে আসছে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

লাকী বলেন, “বাংলাদেশের ক্ষমতায়তন আসলে হওয়া উচিত শিশুদের ইচ্ছামতো। শিশুরা যা বলবে, ঠিক সেভাবেই দেশ চলবে। একদিন ওরাই তো ক্ষমতায় আসবে, ওরাই তো আমাদের আগামী। ওরা চাইছে ক্ষেত্র, একটি ক্যানভাস, একটি মাঠ, যেখানে ওরা পারফর্ম করবে নাটকের; আঁকবে ছবি, ইচ্ছামতো খেলে বেড়াবে।”

পড়াশোনার পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “জ্ঞান ও আত্মার বিকাশের জন্য সংস্কৃতি চর্চার দরকার আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, অবসরের কথা। ভয়াবহ ব্যাপার হল, আজ শিশুদের তো অবসরই দেওয়া হচ্ছে না।”

“ওরা যদি অবসর না পায়, তবে সুন্দর চিন্তা করবে কী করে, আর চর্চাই বা করবে কী করে?”

‘জিপিএ-৫ নির্যাতনের’ বিরুদ্ধে শোর তুলেন নাট্য সংগঠক লাকী।

তিনি বলেন, “যেখানে জিপিএ-৫ পাওয়াই মুখ্য, এমন শিক্ষা ব্যবস্থা তো আমাদের দরকার নাই। আসুন আমরা জিপিএ -৫ নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাই।”

তখন তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে শিশুরাও জানায়, তারা জোরালো অবদান রাখবে এই কর্মসূচিতে।

শিশু নির্যাতনের নানা ভয়াল চিত্র উপস্থাপন করে লিয়াকত আলী লাকী বলেন, “মানবিক, সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল দেশ হতে হলে আমাদের শিশুদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আর সবার আগে জনপ্রতিনিধিদেরই শিশুদের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।”

তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে এক সুন্দর, আনন্দময় ও বাসযোগ্য পৃথিবী নির্মাণের শপথ জানায়।

লিয়াকত আলী লাকী জানান, এ বছর সারা দেশজুড়ে জাতীয় শিশু কিশোর নাট্যোৎসবের আয়োজন করবে শিল্পকলা একাডেমি। মে মাসে ঢাকায় হবে মূল পর্ব। এছাড়া স্কুলে-স্কুলে সিলেবাসের গল্প-কবিতা-নাটকের মঞ্চায়ন কর্মসূচি চলছে তাদের। আয়োজিত হবে একক অভিনয় উৎসব।

অনুষ্ঠানে ইন্টারন্যাশনাল অ্যামেচার থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ থিয়েটার ফর চিলড্রেন অ্যান্ড ইয়ং পিপল (এএসএসআইটিজে)-র বাণী পাঠ করে শোনানো হয়।

এএসএসআইটিজের সভাপতি ফ্রান্সিস ফজেল তার বাণীতে বলেন, “এএসএসআইটিজের বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের পেশাদার অনেকের সংস্পর্শে এসেছি; জানতে পেরেছি অনেক দেশের শিশুদের অবস্থা। বিশেষ করে তিন বছর আগে ওয়ারসো কনগ্রেস এর পরে শিশুদের বিভিন্ন বিরূপ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করার গুরুত্ব বুঝতে পারি।

“শিশুরা কিভাবে সৃষ্টিশীল কাজের সাথে জড়িত থাকতে পারে, তাদের কল্পনাশক্তি, মুক্ত চিন্তা নতুন উপায়ে উন্মুক্ত হতে পারে, সেই সব উপায় উদ্ভাবন করছি আমরা।”

অনুষ্ঠানে আসা ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহিমা আক্তার বলে, “আজকে বিশ্ব শিশু কিশোর দিবসে এসে আমি চাই, পৃথিবীর কোনো শিশুর উপর যেন কোনো নির্যাতন না হয়। আমি বড় হয়ে একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চাই। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করতে চাই।”

গাজীপুরের জয়দেবপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী তানহা তানজিন কন্যাশিশুর অধিকার আদায়ের দৃপ্ত প্রত্যয় ব্যক্ত করে।

সে বলে, “মেয়ে শিশুদের উপর অত্যাচার বন্ধ হোক। সব শিশুর উচ্চ পর্যায়ে শিক্ষাগ্রহণ নিশ্চিত করা হোক।”

উৎসব সংগীত ‘আমরা সবাই মঞ্চকুড়ি’ পরিবেশন করে সমবেত শিশুরা।  পিপলস লিটল থিয়েটারের শিশুরা ‘অবহেলার মৃত্যু আর নয়’ শিরোনামে এক কোরিওগ্রাফি পরিবেশন করে। সম্মেলক নৃত্য পরিবেশন করে বন্ধুমহল শিল্পীসংস্থা, স্পন্দন, ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চ বিদ্যালয়।

নাট্যাংশ পরিবেশন করে জেনেসিস থিয়েটারের নাট্যাংশ, পিদিম থিয়েটার, পিপলস লিটল থিয়েটার। বাংলা কলেজ যুব থিয়েটারের কিশোররা পরিবেশন করে সম্মেলক গান। লোক নাট্যদল পরিবেশন করে ক্লাউন শো। ‘এ মাটি নয় জঙ্গিবাদের’ শিরোনামে গান-নৃত্যের পরিবেশনায় শেষ হয় অনুষ্ঠান।

বিগত ২৭ বছর যাবৎ পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন শিশু-কিশোর ও যুবনাট্য আন্দোলন পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে সারা দেশের প্রায় ২৫০টি শিশু-কিশোর ও যুবনাট্য সংগঠন এই অ্যাসোসিয়েশনের অন্তর্ভুক্ত।

১৯৯৫ সাল থেকে জাতীয় শিশু-কিশোর নাট্যোৎসব ও যুব নাট্যোৎসব আয়োজন শুরু করে ইতোমধ্যে পাঁচটি যুব নাট্যোৎসব ও ১৩টি শিশু-কিশোর নাট্যোৎসব আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন করে।