সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইটে থাকছে বাংলাদেশ

ভারতের উদ্যোগে ‘সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট’ এর উৎক্ষেপণে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2017, 01:05 PM
Updated : 20 March 2017, 01:05 PM

এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে খসড়া অনুমোদন করা হয়।

সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, এই চুক্তির শিরোনাম হবে ‘এগ্রিমেন্ট বিটুইন দ্য গভর্নমেন্টস অব রিপাবলিক অব ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ কনসার্নিং টু অরবিট ফ্রিকোয়েন্সি কো-অর্ডিনেশন অব সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট প্রোপোজড অ্যাট ফোর্টি এইট ডিগ্রি ই’।

সার্ক ও আশপাশের কয়েকটি দেশ মিলে ‘সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট’ নামে এই কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করবে। ভারতের উদ্যোগে এই প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য নেপাল, ভুটান, ইন্দোনেশিয়াসহ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে সম্মতি দিয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি বলেন, “আমাদের মন্ত্রিসভা এই স্যাটেলাইট কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সম্মতি দিয়েছে। তবে শর্ত দেওয়া হয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কার্যক্রমে এই স্যাটেলাইট বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।”

শফিউল আলম জানান, কক্ষপথে সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইটের অবস্থান হবে বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে ‘অনেক দূরে’।

“বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১১৯ ডিগ্রি ইস্টে। আর অন্যটা ৪৮ ডিগ্রি ইস্টে। শর্ত দেওয়া হয়েছে, আমাদের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে যেন কোনো কারণে ইন্টারফেয়ার না করে।”

ফ্রান্সের থালিস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিতে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ নির্মাণের অর্ধেকের বেশি কাজ শেষ হয়েছে।

এ স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।

সব ঠিক থাকলে চলতি বছর ডিসেম্বরে উৎক্ষেপণের পর ২০১৮ সালের এপ্রিল নাগাদ এ স্যাটেলাইট বাণিজ্যিক অপারেশন শুরু করতে পারবে। তখন বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বাংলাদেশের বছরে ১৪ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে বলে সরকার আশা করছে।

বিপা’র ব্যাখ্যা মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

দ্বিপক্ষীয় পুঁজি বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা চুক্তির সম্পূরক অংশ হিসেবে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত জয়েন্ট ইন্টারপ্রেটেটিভ নোটস (জেআইএন) স্বাক্ষরের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০০৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় পুঁজি বিনিয়োগ চুক্তি হয়। ‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া বাইল্যাটারেল ইনভেস্টমেন্ট প্রোটেকশন অ্যান্ড প্রোমোশন এগ্রিমেন্ট’ নামের এই চুক্তিকে সংক্ষেপে ‘বিপা’ বলা হয়।

“এই বিপার কোনো পরিবর্তন করা হচ্ছে না। বিপার ব্যাখ্যা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য ছিল। এজন্য এনালাইসিস বা ব্যাখ্যা তৈরি করা হয়েছে। দুই পক্ষ যে ব্যাখ্যা দিয়েছে- তা গৃহীত হয়েছে। মন্ত্রিসভা নোটসগুলোকে স্বীকার করে নিয়েছে যে আমরা এই ব্যাখ্যার সাথে একমত।”

আগামী এগ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় এই ‘জয়েন্ট ইন্টারপ্রিটেটিভ নোটস’ স্বাক্ষর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

বস্ত্র আইন

দেশে যে কোনো ধরনের বস্ত্রশিল্প প্রতিষ্ঠায় নিবন্ধনের বিধান রেখে বস্ত্র আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

শফিউল আলম বলেন, বস্ত্র শিল্পগুলোকে দেখভালের জন্য এই আইন হচ্ছে। বস্ত্র শিল্পগুলোকে এই আইনের অধীন বিধির আলোকে নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিবন্ধন করতে হবে। যেসব বস্ত্র শিল্প চলছে সেগুলোকে নতুন করে নিবন্ধন নিতে হবে না।

সরকারের বিরাষ্ট্রীকরণ ও বিরাষ্ট্রীকরণ নীতির আওতায় হস্তাস্তরিত বা বিক্রি হওয়া বস্ত্রকল সরকারের সঙ্গে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করলে এই আইনের আওতায় সরকার আবার সেগুলো অধীগ্রহণ করতে পারবে। 

রঙ, রাসায়নিকসহ আমদানিকৃত বস্ত্র উপকরণ বাজারজাত করার সময় ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমদানিকারকের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে মান যাচাই করতে পারবেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে খসড়ায়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নতুন এই আইনের মাধ্যমে বস্ত্রশিল্পের ‘সুপারভাইজরি ও মনিটরিং’ প্রক্রিয়া জোরদার করা হবে।

প্রবাসীকর্মীদের কল্যাণে হচ্ছে বোর্ড

প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অধিকার সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিতে ‘প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড আইন, ২০১৭’ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

শফিউল আলম জানান, প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অধিকার সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিতের জন্য জাতিসংঘের ১৯৯০ সালের একটি কনভেনশন আছে।

“এই কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে একটি আইন করার বাধ্যবাধকতা আমাদের ছিল। সেজন্য এ নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে।

“আমরা এতদিন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বিধিমালা দিয়ে কাজটি করে আসছি। সেটাকে একটু গুছিয়ে আইনের আকারে নিয়ে আসা হচ্ছে। প্রস্তাবিত আইনে প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড নামে একটি বোর্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে।”

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এই বোর্ডের ২১টি দায়িত্ব থাকবে। বিদেশগামী কর্মীদের জন্য প্রাক-বহির্গমন ব্রিফিং সেন্টার করে ব্রিফিং দিতে হবে।

“বিদেশগামী কর্মীদের সহায়তা দেওয়া, তাদের নির্ভরশীলদের কল্যাণে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্প নেওয়া, প্রবাসীদের কেউ মারা গেলে মৃতদেহ আনা বা ক্ষেত্র অনুযায়ী সৎকারের ব্যবস্থা করতে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা দেবে বোর্ড।”

এছাড়া অসুস্থ, আহত বা শরীরিকভাবে অক্ষম প্রবাসীদের দেশে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রবাসী কল্যাণ বোর্ডে ১৬ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকবে। এতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব হবেন চেয়ারম্যান। প্রবাসী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক পর্ষদের সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। আর কল্যাণ বোর্ডের প্রধান হবেন এর মহাপরিচালক।

“নারী অভিবাসী কর্মীদের কল্যাণে বোর্ডকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া আছে। বিদেশে কর্মরত কোনো নারী অভিবাসী বিপদে পড়লে তাকে উদ্ধার, আইনগত সহায়তা দেওয়া ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের পদক্ষেপ নেবে বোর্ড।”

বালাইনাশক আইনে শাস্তি বাড়ছে

বিভিন্ন ধরনের বালাইনাশকের বিক্রি, মজুদ বা বিজ্ঞাপন প্রচারে নিয়ম না মানলে শাস্তি বাড়িয়ে বালাইনাশক আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পেস্টিসাইড অর্ডিন্যান্স ১৯৭১-কে বাংলায় অনুবাদ করে ‘বালাইনাশক আইন’ করা হচ্ছে। খুব বেশি পরিবর্তন তাতে থাকছে না।

“নতুন আইনে অপরাধগুলোর ধরন একই রয়েছে, তবে কোনো কোনো জায়গায় শাস্তি একটু বাড়ানো হয়েছে।”

এর আগে ২০০৭ ও ২০০৯ সালেও অধ্যাদেশ সংশোধন করে শাস্তি বাড়ানো হয়েছিল।

শফিউল আলম জানান, নিবন্ধিত ব্র্যান্ড ছাড়া অন্য বালাইনাশক বিক্রি বা মজুদ করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে বালাইনাশনের বিজ্ঞাপন প্রচারও হবে অপরাধ।

খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রথমবার এসব অপরাধ করলে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে জরিমানা হবে এক লাখ টাকা (সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা)।

আগে এসব অপরাধ প্রথমবার করলে ৫০ হাজার টাকা, দ্বিতীয়বার করলে ৭৫ হাজার টাকা (সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা।) জরিমানার বিধান ছিল।

এসব অপরাধের জন্য জরিমানা ছাড়াও আগের মতোই সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ডের বিধান থাকছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।

আইসিটি গবেষণায় অনুদান বাড়ল

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের (আইসিটি) গবেষণায় ফেলোশিপ ও উদ্ভাবনী কাজের জন্য সরকারি অনুদান বাড়াতে নীতিমালায় সংশোধনী এনেছে সরকার।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনুদান বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। যেমন- বিদেশে অধ্যায়নের ক্ষেত্রে মাস্টার্স কোর্সে মাসিক ৩০ হাজার টাকার সমপরিমাণ ইউএস ডলার দেওয়া হবে, যেটা আগে নির্দিষ্ট করা ছিল না।”

নীতিমালায় এ ধরনের বেশ কিছু আর্থিক বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে জানালেও সেসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেননি তিনি।