জাল পাসপোর্ট-ভিসায় ‘সহজেই’ দেশ ছাড়ছে অপরাধীরা: র‌্যাব

পাসপোর্ট-ভিসা ‘জালিয়াত চক্রের’ তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব বলছে, এই চক্রের সহযোগিতায় দেশের বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর ঘটনায় জড়িত অপরাধীরাও ‘সহজেই’ বিদেশে পালিয়ে যেতে পারছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2017, 12:03 PM
Updated : 20 March 2017, 02:20 PM

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে রোববার রাতে ৩২টি নকল পাসপোর্ট, বিভিন্ন দেশের নকল ভিসা, স্ট্যাম্প টিকেট তৈরির কাগজপত্র ও সরঞ্জামসহ নাসিবুর রহমানকে (৩৯) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আতিকুল ইসলাম লিমন (৪০) ও আব্দুল কুদ্দুস (৩৫) নামে আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সোমবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযানের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর।

তিনি বলেন, “দেশে চাঞ্চল্যকর হত্যা, ধর্ষণ বা বিভিন্ন গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়। কিন্তু কিছুদিন পর আসামিকে আমরা আর খুঁজে পাই না। তদন্ত করে প্রায়ই দেখা যায়, ওই অপরাধী দেশের বাইরে চলে গেছে।

“আসল পাসপোর্ট-ভিসা করতে সময় লাগে। এক্ষেত্রে ওইসব অপরাধী জাল ভিসা-পাসপোর্ট তৈরি চক্রের সাহায্য নিয়ে সহজেই যেতে পারছে। এর সঙ্গে অনেকেই জড়িত, কারণ ভুয়া ভিসা ও আসল ভিসার রঙে অনেক পার্থক্য থাকে। ট্র্যাভেল এজেন্সি আর ইমিগ্রেশনে যারা বোর্ডিং কার্ড দেয়, যারা ইমিগ্রেশন যাচাই করে- তাদের হাতে এগুলো ধরা পড়ার কথা।”

অভিযানে উদ্ধার জিনিসপত্রের মধ্যে ভারতের হরিদাসপুর স্থল ইমিগ্রেশনের একটি সিল পাওয়া গেছে জানিয়ে জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বলেন, “ওইসব নকল পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে অবৈধপথে ভারতে যায় অপরাধীরা, তারপর ভারত থেকে দায়িত্বরত কেউ যদি তল্লাশি করে, তখন সেই ভুয়া সিল লাগানো পাসপোর্ট-ভিসা দেখানো হয়, কিন্তু সহজে ধরা পড়ে না।”

এই চক্র বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশিদের কুরিয়ারের মাধ্যমেও নকল পাসপোর্ট-ভিসা পাঠায় বলে জানান এই র‌্যাব কর্মকর্তা। 

“তারা হাতে লেখা পাসপোর্ট তৈরি করে, বিদেশ থেকে চাহিদা পেলে সে অনুযায়ী অনেক আগের তারিখ দিয়ে সেগুলো বাইরে পাঠানো হয়। পরে সেগুলো বাংলাদেশ দূতাবাসে জমা দিয়ে জিডিটাল পাসপোর্টও নিচ্ছে।”

মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি লোক নেওয়া বন্ধ রাখলেও এ চক্র সেসব দেশেও মানব পাচার করছে জানিয়ে র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক বলেন, প্রথমে বাংলাদেশি পাসপোর্ট জাল করে ভারতে পাঠানো হয়। এরপর সেখান থেকে ভারতীয় পাসপোর্টের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাচার হচ্ছে।

“এ চক্রের সঙ্গে আরও বহুলোক জড়িত। এরা জাল ভিসা ও পাসপোর্ট বিভিন্ন ট্র্যাভেল এজেন্সিতে বিক্রিও করে থাকে। প্রতিটি জাল পাসপোর্ট সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করে।”

র‌্যাব বলছে, গ্রেপ্তার হওয়া নাসিবুর ২০১০ সাল থেকে এই জালিয়াত চক্রে জড়িত। তার কাছে ভারত, নেপাল, ওমানসহ বিভিন্ন দেশের নকল ভিসা ও পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও তাদের যোগাযোগ আছে।

গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে বলেও র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।