আশকোনায় গ্রেপ্তারের পর মৃত যুবকের নিখোঁজের জিডি উধাও

আশকোনায় আত্মঘাতী জঙ্গির হামলার মধ্যে সন্দেহভাজন হিসেবে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর মারা গেছেন যে যুবক, তিনি নিখোঁজ দাবি করে যে জিডিটি পরিবার করেছিল, তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

লিটন হায়দারও মুজিবুল হক পলাশবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2017, 05:37 PM
Updated : 19 March 2017, 06:03 PM

হানিফ মৃধা নামে ওই যুবক ও তার এক বন্ধুকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছিল দাবি করে কয়েকদিন পর নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিল তার পরিবার।

এরপর তার সন্ধান না মেলার মধ্যে শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজে মর্গে একটি লাশ যায়, যার নাম হানিফ মৃধা বলে জানায় র‌্যাব।

শুক্রবার ঢাকার আশকোনায় ব্যারাকে আত্মঘাতী হামলার পর ওই যুবককে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তারের কথাও তার মৃত্যুর একদিন পরে জানায় র‌্যাব। বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়।

এরপর হানিফ মৃধার ভাই আব্দুল হালিম মৃধার জিডির খবর নিতে গেলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মুহা. সরাফত উল্লাহ রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত ১ মার্চ থেকে করা জিডির বই হারিয়ে গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তা পাওয়া যাচ্ছে না।”

ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা হালিম মৃধার সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় করা জিডির নম্বর ১৩৫। জিডি হলে তা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে। এই জিডির তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই  মো. রাসেল।

এসআই রাসেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জিডি হয়েছিল, আমি এতটুকু আপনাদের বলতে পারব। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারব না।”

র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খানের ভাষ্য অনুযায়ী, শুক্রবার জুমার নামাজের আগে আত্মঘাতী জঙ্গি হামলা চালানোর পর আশকোনা এলাকা থেকে বিকাল ৪টার দিকে হানিফ মৃধাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

শুক্রবার এই ব্যারাকে এক যুবক আত্মঘাতী হওয়ার পর হানিফ মৃধাকে গ্রেপ্তারের কথা বলেছিল র‌্যাব

অন্যদিকে ৪ মার্চ করা ওই জিডির বক্তব্য অনুযায়ী, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টা ২০ মিনিটে প্রাইভেটকারে মোহাম্মদপুরের বাসায় ফেরার পথে কাঁচপুর এলাকা থেকে হানিফ মৃধা ও তার বন্ধু সোহেল মন্টুকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়।

জিডি তদন্ত করে কী পেলেন- জানতে চাইলে এসআই রাসেল বলেন, “আমরা মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করলেও সেসব বিষয়ে বক্তব্য দেন আমাদের ঊর্ধ্বতন অফিসাররা। আপনারা তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন।” 
ওসির বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, “জিডির বই পাওয়া না গেলে এ বিষয়ে আমি কীভাবে বলব?”

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মঈনুল হক রোববার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জিডির বই হারিয়ে গেছে, এই প্রথম আমি আপনার কাছ থেকে শুনলাম। বিষয়টি আমি জানি না। এবিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হবে।”

শুক্রবার গ্রেপ্তারের ঘণ্টাখানেকের মধ্যে অসুস্থ হানিফ মৃধাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়েছিল র‌্যাব। সেখানে কিছুক্ষণ পরই তার মৃত্যু ঘটে। পরের দিন বিকালে লাশ পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে।

লাশটি এখনও ঢাকা মেডিকেল মর্গের মরচুয়ারিতে রয়েছে।

শনিবার তার ময়নাতদন্তের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে ভিসেরা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংরক্ষণ করা হয়েছে।”

র‌্যাব মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান জানিয়েছিলেন, হানিফ মৃধার বাড়ি বরগুনার আমড়াগাছিয়ায়।

তবে সোমবার জানা যায়, ঢাকার রায়েরবাজারে বাসা রয়েছে হানিফ মৃধার।

পরিবারের বক্তব্য অনুযায়ী, ২৪ ফেব্রুয়ারি বরিশাল গিয়েছিলেন হানিফ এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি সেখান থেকে ফেরার পর কাচপুর থেকে অপহৃত হন।