নেতা হয়ে বসে থাকলে চলবে না: প্রধানমন্ত্রী

তাঁতী লীগের পরবর্তী নেতৃত্বকে সংগঠনের পাশাপাশি তাঁতীদের জন্য কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2017, 11:10 AM
Updated : 19 March 2017, 01:34 PM

রোববার আওয়ামী লীগের এই সহযোগী সংগঠনের জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “নেতা হয়ে শুধু বসে থাকলে চলবে না। তাঁতীদের কল্যাণে কাজ করতে হবে। তাদের সমস্যাগুলো কী তা দেখতে হবে। তাদের দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। তাদের মধ্যে যে মেধা রয়ে গেছে… এই ঐতিহ্যটাকে যেন তারা লেখাপড়ার সাথে সাথে ধরে রাখতে পারে।”

সরকার প্রধান বলেন, তাঁত খাত দেশের তৃতীয় বৃহৎ শিল্প হলেও এ খাত অতীতে যথাযথ ‘গুরুত্ব পায়নি’। তাঁতী লীগ গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন হলেও এ সংগঠন সব সময় ‘অবহেলার শিকার’।

তাঁতী লীগ ছাড়াও কৃষক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ এবং আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ দেশের অন্যতম পুরনো দল আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে রয়েছে।

এছাড়া ছাত্রলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ এবং স্বাধীতা চিকিৎসক পরিষদ  এক সময় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে থাকলেও এখন আর নেই।

কৃষিবিদ ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে তাঁতী লীগের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের বিভিন্ন সংগঠন রয়েছে… সহযোগী সংগঠন ও তার বাইরেও। আমরা চাই প্রতিটি সংগঠন নীতি ও আদর্শ মেনে চলবে। যে যে বিষয়ে সংগঠন করছে, সেখানে সেই সম্প্রদায়ের মানুষের যাতে কল্যাণ হয়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন।” 

তাঁতের তৈরি বস্ত্রের জন্য একসময় এ অঞ্চলের খ্যাতি থাকলেও সময়ের পরিক্রমায় তা হারিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “যে সব অঞ্চলে তাঁতের খট খট আওয়াজ পাওয়া যেত... সেগুলো যেন নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।”

এক সময় টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা থেকে শুরু করে ফরিদপুর, নরসিংদী রাজবাড়ী, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যে তাঁত শিল্পের প্রচলন ছিল এবং শাড়ি থেকে শুরু করে গামছা-লুঙ্গি সব কিছুই যে সেখানে তৈরি হত, সে কথা অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এই শিল্প ছেড়ে তাঁতীরা অন্য পেশায় চলে যাওয়ায় আক্ষেপ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এটা তো একটা শিল্প, এটা একটা কলা, এটা একটা আর্ট, সেখান থেকে কেউ রিকশাচালক হয়ে যায়, কেউ মাটি কাটতে শুরু করে।”

খদ্দর কাপড়ের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের খদ্দরটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা শিল্প। খদ্দরের তৈরি কাপড় এক সময় আমাদের দেশে একটা ফ্যাশনই ছিল। কীভাবে যেন ধীরে ধীরে চাহিদা আর গুরুত্বটা হারিয়ে যেত বসল।”

বাংলাদেশের আবহাওয়ায় খদ্দরের পোশাক সবচেয়ে বেশি আরামদায়ক মন্তব্য করে এ কাপড় তার পুরনো ঐতিহ্য ফিরে পাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। 

তিনি বলেন, ভারতে খদ্দরের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। উন্নতমানের খদ্দরের কাপড় সেখানে তৈরি হয়। কিন্তু বাংলাদেশ এই জায়গায় খুব বেশি এগোতে পারেনি।

“আমরা চাই, আমাদের এই ঐহিত্যগুলো আবার ফিরে আসুক। আমরা যেন উন্নতমানের কাপড় তৈরি করতে পারি।” 

দেশীয় পোশাকের প্রতি নিজের দুর্বলতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ফ্রেঞ্চ শিফন কখনো পরিনি। আমি বাংলাদেশের তৈরি... আমাদের তাঁতীদের তৈরি কাপড়টাই সব সময় ব্যবহার করি। সেটা সুতির কাপড় হোক, সিল্কের হোক, এমনকি আমার খদ্দরের শাড়িও আছে… সেটাও আমি পড়ি।”

বাংলাদেশের নারী রাজনীতিবিদদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্রায়ই ফ্রেঞ্চ শিফনের শাড়িতে দেখা যেত। এ কারণে আওয়ামী লীগ নেতারা প্রায়ই খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে থাকেন। 

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি চেষ্টা করি দেশের সম্পদটাকে তুলে ধরার। বিদেশে যে উপহার দিই, সেই উপহারের খাতায় আমাদের দেশের তৈরি কাপড় আমরা রাখি।”

তাঁতীদের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের কথাও প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই প্রথম তাঁতীদের ঋণ দেওয়া শুরু হয়। চলতি বছরও ৪২৬টি তাঁতের বিপরীতে ১৪২ জন তাঁতীকে ৪৯ লাখ ২৬ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে।

“মসলিন সুতাটা কোন কোন এলাকায় হত... সেটা আবার করা যায় কিনা, আমরা সে সার্ভে করছি। আমরা গবেষণাও করছি।… সিল্ক সুতার জন্য অনেক চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি। কিন্তু খুব বেশি আমরা এগোতে পারি না।”

ঘরের কাজে তাঁতের কাপড়ের বহুমুখী ব্যবহারে উৎসাহিত করার পাশাপাশি তাঁতীদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের পাশেই তো ভারত রয়েছে। তাদের সাথে আমাদের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হয়।” 

তাঁতীদের সমস্যাগুলো নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

“আমি নিজে তাঁতীদের সাথে কথা বলে দেখেছি। সব থেকে অভাব হচ্ছে ডিজাইন, সুতা, রঙ… রঙগুলো যাতে পাকা রঙ হয়; এরকম অনেকগুলো সমস্যা আছে।… আমাদের লক্ষ্য; তাঁত শিল্পের কী করে প্রসার ঘটানো যায়, তাঁতের আধুনিকায়ন করা যায়।” 

বেলা ১১টায় অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছানোর পর প্রধানমন্ত্রী তাঁতী লীগের নেতাদের নিয়ে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর তিনি কবুতর ওড়ান।

মিলনায়তনে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী সেখানে বসানো তাঁত কল পরিদর্শন করেন। উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন তাঁতী লীগের আহ্বায়ক এনাজুর রহমান চৌধুরী।

কাউন্সিল অধিবেশনের পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইঞ্জিনিয়ার মো. শওকত আলীকে সভাপতি এবং খগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথকে সাধারণ সম্পাদক করে তাঁতী লীগের নতুন কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়।