যে চেয়ারে বসেন, তাতে নিজামী বসত, তাই ‘ভয়’ নাসিমের

একাত্তরে পরাজিত শক্তি বাংলাদেশে মন্ত্রীর আসন পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ায় পুনরায় তাদের উত্থানের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2017, 04:52 PM
Updated : 13 March 2017, 04:55 PM

তিনি বলেছেন, “আজকে আমি যে চেয়ারে বসি, সেটাতে এক সময় নিজামী (মতিউর রহমান নিজামী) বসত। তাই ভয় হয়। তারা আবার ফিরেও আসতে পারে। বলা যায় না দেশের মানুষ সামনে কী করে।”

খালেদা জিয়া মন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়েছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির নিজামীকে। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদও মন্ত্রী ছিলেন। দুজনকেই যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায়ে ফাঁসিতে ঝুলতে হয়েছে।

তাদের আগে জিয়াউর রহমান ও এইচ এম এরশাদও স্বাধীনতাবিরোধীদের মন্ত্রী করেছিলেন।

সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসনের জন্য জিয়া-এরশাদ-খালেদাকে দায়ী করে নিজের আশঙ্কার কথা জানান।

আওয়ামী লীগ নেতা নাসিম বলেন, “বিএনপি-জামায়াত অপশক্তি যদি আবার ক্ষমতায় আসে, তাহলে দেশের সকল অর্জন শেষ হয়ে যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রক্তাক্ত হবে, এই বাংলা আবার বধ্যভূমিতে পরিণত হবে।

“তাই আমাদের শপথ নিতে হবে এই অপশক্তি যেন আর কখনও দেশের শাসন ক্ষমতায় আসতে না পারে।“

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম রচিত ‘বঙ্গবন্ধু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

মন্ত্রীর চেয়ারে মোহাম্মদ নাসিম

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ জামাতা অধ্যাপক শফিক আহমেদ সিদ্দিক বলেন, ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসন দিয়েছেন। স্বার্ধীনভাবে জ্ঞান চর্চার দ্বার উন্মোচন করেছেন। এর ফলে দেশ এগিয়ে গেছে। এই ধরনের সঠিক চিন্তা ধারা বঙ্গবন্ধুর মধ্যে ছিল।

“জাতির পিতা, প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু-এই তিনটির মধ্যে পার্থক্য থাকতে পারে। জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু এই দেশের মানুষের হৃদয়ে হাজার বছর থাকবে। রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ শাসনের সময় বঙ্গবন্ধুর দুই-একটি ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। কারণ বঙ্গবন্ধুও একজন মানুষ। ভুল করে না ফেরেশতা কিংবা শয়তান।”

তবে বঙ্গবন্ধুর শাসনকালে জাসদের ভূমিকা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন শেখ রেহানার স্বামী শফিক সিদ্দিক।

তিনি বলেন, “ভারতে গান্ধী বা নেহেরুর ভুলত্রুটির সমালোচনা করা হয় ৩০ বছর পর। ভারতীয় জাতীয়তাবাদের স্বার্থে এমনটি করা হয়। কিন্তু আমাদের জাসদের নেতারা দুই বছর না যেতেই বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা শুরু করে। তারাই সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে।

“এতে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছে আল বদর-জামায়াত ইসলাম। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হিসেবে জাসদের এত বড় ভুল করা উচিত হয়নি। বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদের স্বার্থে তাদের অপেক্ষা করা উচিত ছিল।“

কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, “বঙ্গবন্ধুর মতো মহামানবদের নিয়ে বই লেখার অনেক উপাদান আছে। ‘বঙ্গবন্ধু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ এই নামে এর আগে কোন বই লেখা হয়নি এটা আশ্চর্যের বিষয়। কারণ বঙ্গবন্ধু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

“চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অধিকারের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর বহিষ্কার আমাদের জন্য আশীর্বাদ ছিল। তাই আমরা তাকে জাতির জনক হিসেবে পেয়েছি। না হলে হয়ত শেখ মুজিবকে আমরা একজন ভালো মানের উকিল হিসেবে পেতাম।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বঙ্গবন্ধু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অবিচ্ছেদ্য অংশ।

অনুষ্ঠানে  বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালমনাই এ্যাসোসিয়েশনের(ডুয়া) সভাপতি এ কে আজাদ, মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এ্যালমনাই এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু আলম মো. শহীদ খান ও  সাধারণ সম্পাদক ও বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মফিজুর রহমান প্রমুখ।