প্রতিবন্ধী ক্রিকেট প্রতিভা খুঁজতে ক্যাম্প বসছে বুধবার

শারীরিক প্রতিবন্ধীদের মধ্যে থেকে প্রতিভাবান ক্রিকেটার খুঁজে নিতে সাভারের জিরানিতে বুধবার বসছে একদিনের ক্যাম্প।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2017, 12:27 PM
Updated : 7 March 2017, 12:56 PM

বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) সকাল ৯টা থেকে তিন ঘণ্টার এই ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারীদের মধ‌্যে থেকে সেরা ২০ জনকে বাছাই করা হবে।

তাদের মধ‌্যে প্রশিক্ষণে যারা ভালো ফল দেখাতে পারবেন, তাদের বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলে খেলার সুযোগ তৈরি হবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি)।

আইসিআরসি-ই এক ক্যাম্পের আয়োজক। তাদের সহযোগিতা করছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

বিবৃতিতে বলা হয়, “খেলাধুলার মাধ্যমে সামাজিকভাবে অন্তর্ভুক্তির ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই ক্যাম্প প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের উদ্যমকে তুলে ধরা এবং তাদের সমাজের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে ভূমিকা রাখবে বলে আইসিআরসি আশা করছে।”

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্যাম্পে অংশ নিতে নিবন্ধন শুরু হয়। এরই মধ্যে প্রায় আড়াইশ প্রতিবন্ধী নিবন্ধন করেছেন বলে আইসিআরসি জানিয়েছে।  

দৃশ্যমান কোনো শারিরীক প্রতিবন্ধকতা থাকলে এবং ক্রিকেট সম্পর্কে জানলে ও ভাল খেলতে পারলে যে কেউ প্রাথমিক বাছাইয়ে অংশ নিতে পারবেন বলে আয়োজকরা এর আগে জানিয়েছিলেন।

তবে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, মাইনর অ্যামপুটেশন, হাড়ভাঙা ও হুইল চেয়ার ব্যবহারকারীদের নিবন্ধন করতে নিরুৎসাহিত করা হয়। 

ক্যাম্প থেকে বাছাই করা ২০ জনকে নিয়ে তিনদিনের প্রশিক্ষণ হবে। সেই প্রশিক্ষণে বাছাই করা ১০ জনকে রাখা হবে প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের ক্যাম্পে।

ছয় থেকে আট সপ্তাহের ওই ক্যাম্পে আগের দুই দফায় বাছাই করা ২৯ প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারও অংশ নেবেন। সেই ক্যাম্প থেকে চূড়ান্ত হবে ২০ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দল।

বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালে। ওই বছর রেডক্রস পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন নিয়ে কাজ করা সিআরপিকে (সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলেটেশন অফ দ্য প্যারালাইজড) একটি ক্রিকেটদল গড়তে সহায়তা দেয়।

একই বছর প্রতিবন্ধীদের নিয়ে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করে রেডক্রস। এছাড়া সিআরপির প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দল ওই বছরের ১৭ থেকে ২০ মার্চ ভারতের ডিজ্যাবলড স্পোর্টিং সোসাইটি (ডিএসএস) দলের বিরুদ্ধে তিন দিনের একটি টুর্নামেন্টে অংশ নেয়।

২০১৪ সালে সিআরপির পাশাপাশি, বাংলাদেশ ফিজিকালি চ্যালেঞ্জড ডিজ্যাবলড অ্যাসোসিয়েশন ও ফিজিকালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ) প্রতিবন্ধীদের মধ্যে ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করে।

রেডক্রস কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি), প্যারা অলিম্পিকস, স্পেশাল অলিম্পিকস ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) সঙ্গে নিয়ে ওই বছরের নভেম্বরে সেমিনার ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে।

বিসিবি, ব্রিটিশ হাই কমিশন এবং ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড ওই আয়োজনে সহায়তা দেয়।

পরের বছরের ফেব্রুয়ারিতে পিডিএফ এবং সিআরপির তত্ত্বাবধানে থাকা পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের উপযোগী খেলার সরঞ্জাম দেয় আন্তর্জাতিক রেডক্রস।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে এরপর শুরু হয় প্রতিবন্ধী ক্রিকেটদল গড়ার কাজ।

রেডক্রসের সহযোগিতায় ওই বছরের মার্চে প্রথমবারের মত ‘ট্যালেন্ট হান্ট ক্যাম্প’  হয়। ক্যাম্পে আসা ১৪৯ জন প্রতিবন্ধীর মধ্যে থেকে প্রাথমিকভাবে ২৬ জনকে নির্বাচন করা হয়।

আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির (আইসিআরসি) আয়োজনে ২০১৫ সালে ঢাকায় বসে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের আসর, যাতে স্বাগতিক বাংলাদেশ ছাড়াও ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, ভারত ও আফগানিস্তান অংশ নেয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ওই টুর্নামেন্টের ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর’ ছিলেন। মিডিয়া পার্টনার ছিল দেশের প্রথম ইন্টারনেট সংবাদপত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। 

২০১৬ সালে দুবাইয়ে আরেকটি টুর্নামেন্টের আয়োজন করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল। সেখানেও বাংলাদেশ দলকে সহযোগিতা দেয় আইসিআরসি। ওই টুর্নামেন্টের আগে দ্বিতীয় প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি হয়।