যশোরে উদীচী সম্মেলনে বোমা হামলার ১৮ বছরপূর্তিতে নিহতদের স্মরণ

যশোরে উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনে বোমা হামলা ও হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারীরা এখনও ‘ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় নেতারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2017, 04:05 PM
Updated : 6 March 2017, 04:05 PM

উদীচীর সমাবেশে সেই হত্যাকাণ্ডের ১৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে সোমবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে আয়োজিত এক সাংস্কৃতিক সমাবেশ থেকে উঠে আসে এমন অভিযোগ।

সেই ঘটনায় নিহতদের স্মরণ অনুষ্ঠানে এসে উদীচীর কেন্দ্রীয় নেতারা হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করে প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।

পরে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে অস্থায়ী বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আলোক প্রজ্বলন কর্মসূচি আয়োজন করে উদীচী।

আলোচনা সভায় উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সভাপতি সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, “যশোর হত্যাকাণ্ডের পর সরকার কয়েকটি উগ্র সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে নিষিদ্ধ ও আইনের আওতায় আনলেও এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে এসব হত্যাকারীরা।”

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক সফিউদ্দিন আহমদ বলেন, “মৌলবাদী অপশক্তির ঘৃণ্য হামলার শিকার সেসব সংস্কৃতিকর্মী এখনও পঙ্গুত্বের অভিশাপ বয়ে নিয়ে জীবনযাপন করছেন।”

উদীচীর বর্তমান সভাপতি বলেন, “একটি অসাম্প্রদায়িক, সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ, ধর্মভিত্তিক রাজনীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে আসছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। আর তাই উদীচীর উপরই নেমে আসে এ ধরনের হামলা।”

আলোচনায় আরও অংশ নেন উদীচীর সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম।

বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, ধর্মীয় উপাসনালয়, আদালত, সিনেমা হলসহ সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলার মতো ‘নৃশংসতম’ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যশোরে বোমা হামলার যোগসূত্র রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তারা।

১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোর টাউন হল মাঠে আয়োজিত বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ দিনে  বাউল গানের আসরে দুই দফা বোমা বিস্ফোরণ ঘটে।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে মঞ্চের নিচে আগে থেকে রেখে দেওয়া হয়েছিল বোমা। হামলায় প্রাণ হারান নূর ইসলাম, সন্ধ্যা রানী, রামকৃষ্ণ, তপন, বাবুল সূত্রধরসহ অন্তত ১০ জন শিল্পী-কর্মী ও সাধারণ মানুষ। আহত হন দেড় শতাধিক শিল্পী-কর্মী ও সাধারণ মানুষ।

আলোচনা সভা শেষে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি বেলায়েত হোসেন, ঝর্ণা সরকার ও মিজানুর রহমান সুমন। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে উদীচী সঙ্গীত বিভাগ এবং লালবাগ শাখা সংসদের শিল্পী-কর্মীরা।

৬ মার্চের রক্তাক্ত ঘটনার প্রতিকৃতি স্বরুপ ‘লাইভ ইনস্টলেশন’ করেন উদীচী শিল্পী-কর্মীরা। সবশেষে পরিবেশিত হয় প্রামাণ্যচিত্র ‘ক্ষতচিহ্ন’।

১৯৯৯ সালে যশোর থেকে শুরু করে ২০০৫ সালের ০৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনায় উদীচী কার্যালয়ে বোমা হামলার ঘটনা পর্যন্ত উদীচীর রক্তাক্ত ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল নিয়ে উদীচী কেন্দ্রীয় চলচ্চিত্র ও চারুকলা বিভাগের প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র ‘ক্ষতচিহ্ন’।

এই দিনটি উপলক্ষে উদীচীর বিভিন্ন জেলা ও শাখা সংসদও দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ আয়োজন করেছে।