ঘুষ দিয়ে আসা ডিসি-এসপি টাকা উঠাতে ব্যস্ত: আইভী

নারায়ণগঞ্জে যানজটের ভোগান্তি লাঘবে কার্যকর পদক্ষেপের অভাবের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের দায়ী করেছেন মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 March 2017, 05:41 PM
Updated : 5 March 2017, 05:41 PM

নগর ভবনে রোববার ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করেছেন তিনি।

“নারায়ণগঞ্জে ডিসি-এসপি হয়ে আছেন, তারা সবাই ঘুষ দিয়ে এখানে আসেন। তাই জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা না করে তারা টাকা উঠানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন,” বলেন মেয়র।

সন্ধ্যা থেকে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার আলাপচারিতায় যানজটের ভোগান্তি থেকে নারায়ণগঞ্জবাসীর মুক্তির জন্য মেয়রের পরিকল্পনা জানতে চান নাগরিক সাংবাদিক নিতাই বাবু।

জবাবে আইভী বলেন, “নগরীবাসীর হাঁটা-চলার রাস্তা দখল করে ফুটপাতগুলো অবৈধ দখলে চলে গেছে। এসব অবৈধ ফুটপাতের দোকান থেকে পুলিশ টাকা আদায় করছে। ফুটপাতের দোকানে অবৈধভাবে বিদ্যুতের সংযোগ ব্যবহার করা হচ্ছে। এক সময় এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। এগুলো কি শুধু মেয়রের একার দায়িত্ব? ডিসি/এসপির কোনো দায়দায়িত্ব নেই?”

তিনি বলেন, যানজট নিরসনে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রায়ই অবৈধ রিকশা আটকের পর ধব্বংস করা হয়।

“কিন্তু নিম্ন মধ্যবিত্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও নগরীতে অবৈধ বাস ও ট্রাকের যে ছড়াছড়ি সে বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।”

যানজট নিরসনে সড়কে অবৈধ দখল ও অবৈধ যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ঢাকার মেয়রদের আইনৃশঙ্খলা বাহিনী সাপোর্ট দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের এখানে সহযোগিতা মেলে না।”

নগরীতে যানজটের জন্য বঙ্গবন্ধু সড়কের নিতাইগঞ্জে অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ডকে দায়ী করে মেয়র বলেন, “এসব ট্রাকস্ট্যান্ড থেকে পুলিশ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নামে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। ট্রাক রাখার জন্য নগরীর পঞ্চবটিতে সিটি কর্পোরেশনের জায়গায় ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু ট্রাক চালকেরা সেখানে যাচ্ছেন না। বিগত ওয়ান ইলেভেনের সময় সড়কে অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড ছিল না। কিন্ত এখন সড়কের ট্রাক পার্ক করে মালামাল লোড-আনলোড করা হচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না।”

অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে বিবাদী করে মামলার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “ডিসি/এসপি এখন উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও মানেন না।”

প্রশাসন চাইলে দুই মিনিটের মধ্যে বঙ্গবন্ধু সড়ক থেকে অবৈধ এই ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

যানজটের জন্য ‘অনুমোদনহীনভাবে’ নগরীর চাষাঢ়া থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ এবং চাষাঢ়া-সাইনবোর্ড রুটে লেগুনা সার্ভিস চালুর কথা তুলে ধরেন আইভী।

“আমাদের সাথে আলোচনা না করেই জেলা প্রশাসন থেকে এগুলোর পারমিশন দেওয়া হচ্ছে।”

এছাড়া অবৈধভাবে নতুন ৩০টি এসি বাস নামানো হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

‘বড়লোকদের’ এসব গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে নিম্ন ও মধ্য বিত্তের  বাহন রিকশার বিরুদ্ধে ‘অভিযান চালাব না’ বলেও ঘোষণা দেন মেয়র।

নগরীতে ধুলাবালির জন্য নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করেন আইভী: “এটা সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব হলেও তা আমরা পালন করতে পারছি না। বিভিন্ন বাড়ি ও স্থাপনা নির্মাণের ইট ও বালি থেকে নগরীতে ধুলাবালি উড়ছে। বার বার অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।”

তবে এ প্রসঙ্গেও সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ না থাকার কথা উল্লেখ করেন তিনি। 

তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকের বাসভবনের উল্টো পাশে বিআইডব্লিউটিএ’র ঘাট থেকে ট্রাকে করে গলা চুনা  বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয়। ট্রাক থেকে এসব চুনা পড়ে পিচ উঠে রাস্তা  নষ্ট হয়ে গেছে। বিভিন্ন সময় সিটি করপোরেশন থেকে অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করা হলেও তা বন্ধ করা যায়নি।

মেয়রের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে আইভী বলেন, “সে কতটুকু কাজ করতে পারে?  আমাদের দেশে সিটি গর্ভনেন্স নেই। কিন্তু উন্নত বিশ্বের সবখানে সিটি গর্ভনেন্স রয়েছে।  বিষয়টি তরুণ সমাজ যদি জানে তারা এগিয়ে আসবে। ”

জাইকা এখন  সিটি গর্ভনেন্স সামনে নিয়ে কাজ শুরু করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, সিটি গর্ভনেন্স হলে মেয়রের ক্ষমতা বাড়বে। সব কিছু এক জায়গায় চলে আসবে। কাজ  করা  সহজ হবে।

দূষণ থেকে শীতলক্ষ্যাকে রক্ষায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তাও জানতে চান নিতাই বাবু।

জবাবে মেয়র বলেন, “আমি আপনাদের নিয়ে আন্দোলন করতে পারি। যদিও এর আগে বহুবার আন্দোলন হয়েছে। শীতলক্ষ্যা নদী দূষণের জন্য নৌকায় করে প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর কী কাজ করবে তারাই ভালো জানে।”

তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে শীতলক্ষ্যার পূর্বপাড় বাঁধাইয়ের পরিকল্পনা হয়েছে, যাতে কেউ পাইপ বা ড্রেনেজের মাধ্যমে ডাইং কারখানার বর্জ্য নদীতে ফেলতে না পারে।

এছাড়া বর্জ্য পরিশোধন করে ফেলার বিষয়টিও পরিকল্পনায় রয়েছে বলে জানান তিনি।

ঢাকার হাতির ঝিলের আদলে জিমখানা লেকের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির কাজ আগামী বছরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মেয়র।

এক নম্বর বাবুরাইল খাল সংস্কার ও খনন করে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ধলেশ্বরী নদীর সঙ্গে সংযোগ করার জন্য কাজ শুরু হয়েছে।

নগরীর হাজীগঞ্জে অবস্থিত মোঘল স্থাপত্য হাজীগঞ্জ কিল্লা রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এর বেশিরভাগ জমি দখল হয়েছে। কিছু জমি পাট অধিদপ্তর থেকে লিজ দেওয়া হয়েছে। আমরা কিল্লাটিকে রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছি।”

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার নাগরিক সমস্যা সংক্রান্ত ২৫টি লেখা নিয়ে বিপিএলের প্রকাশনা ‘নগর নাব্য-মেয়র সমীপেষু’ মেয়রের হাতে তুলে দেন ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নাগরিক সাংবাদিকরা।

পরে ব্লগ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ একটি ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয় মেয়রের হাতে। ‘ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম’র পরিচালক আইরিন সুলতানা, নাগরিক সাংবাদিক ফয়সাল, আশিক, জয়নাল আবেদীন, শফিক মিতুল উপস্থিত ছিলেন মেয়রের সঙ্গে এই আড্ডায়।