আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ‘নারী শ্রমিক কণ্ঠ’ আয়োজিত এক মত বিনিময় সভায় এই মন্তব্য করেন তিনি।
নারী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আপত্তি উপেক্ষা করে সংসদে গত সোমবারা পাস হয়েছে বাল্য বিয়ে নিরোধ আইন, যাতে ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছরের কম বয়সে বিয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে।
বিশেষ প্রেক্ষাপটের সুযোগে বাল্য বিয়ে বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করে সংসদে পাস হওয়া এই আইনে সই না করতে রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের নারী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
তাদের বিরোধিতার পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, “এই আইনটির বিশেষ ক্ষেত্রে বোঝানো হয়েছে যে, যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে অভিভাবক আদালতের কাছে গিয়ে আর্জি দিবেন। বিচারক যদি অনুমতি দেন, তবে কেবল কাজী সাহেব বিবাহ দিতে পারবেন।”
এর পাশাপাশি আইনে বাল্য বিয়ে বন্ধ করতে কাজীদের অপরাধের সাজা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আইনে স্পষ্ট না করা ‘বিশেষ প্রেক্ষাপট’র ব্যাখ্যায় ইনু বলেন, “ধরেন ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর সে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। সেই ছেলের বিরুদ্ধে যদি মামলা হয়, তবে রেইপ কেসে তার কঠোর সাজা আছে।
“এখন এই ছেলে আর মেয়েকে যদি তাদের পরিবার বিয়ে দিতে রাজি হয়, তাহলে তাদের বিয়ে কে দেবে? ১৮ বছরের আইনানুযায়ী তো তা হয় না। তাহলে বাচ্চা হয়ে যাবে, ১৮ বছর পার হলে তার বিয়ে দিতে হবে।”
আরেকটি প্রেক্ষাপটের কথাও বলেন ইনু।
“কোনো মেয়ে প্রেম করে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে, এদিকে ছেলেও ১৮ বছরের নিচে। তখন কী করবেন আপনি? তখন ছেলের পরিবার যদি বাচ্চাসহ মেয়েটিকে স্বীকৃতি দিতে রাজি হয় তবে তাদের তো বিয়ে দিতে হবে।”
এই ধরনের ঘটনা ঘটলে মেয়েটির জন্যই আইনে এই সুযোগ রাখা হয়েছে বলে দাবি করেন ইনু।
যেহেতু এ্ই ধরনের বিয়ের ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি লাগবে, সেহেতু এর অপব্যবহারের সুযোগও থাকছে না বলে মনে করেন তিনি।
তবে জাসদ সভাপতি ইনুর এই বক্তব্যের সমালোচনা তার দলের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য শিরীন আখতারের কাছ থেকেই এসেছে বলে একটি সংবাদপত্রে খবর এসেছে।
নারী শ্রমিক কণ্ঠের প্রধান শিরীন আখতার ওই অনুষ্ঠানের পর প্রথম আলোকে বলেন, “আমার কন্যাকে কি তবে ধর্ষক, অপহরণকারীর কাছে বিয়ে দিতে হবে? ধর্ষণ করে বিয়ে করলে কি আর সাজা হবে না?”
অনুষ্ঠানে বক্তব্য মন্ত্রী ইনু মানবাধিকার ও নারী অধিকারকর্মীদের বাল্য বিবাহ আইনের মূল বিষয়ের দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, “১৮ বছরের নিচে বিবাহ নিষিদ্ধ, আপনারা মূল শিরোনামের উপরই গুরুত্ব দিলেন না, আপনারা বললেন বিশেষ দ্রষ্টব্য ‘যদি’, ‘তবে’ তুলে দিলেই না কি নারীর ক্ষমতায়ন হবে, নইলে নারীকূল পিছিয়ে যাবে। আমি পিছিয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।”
সাম্প্রদায়িকতা, কুসংস্কার ও জঙ্গিবাদকে নারী সমাজের সবচেয়ে বড় শত্রু বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।
‘২০৩০ সালে নারী-পুরুষের সমতা অর্জন : ট্রেড ইউনিয়নসহ সকল ক্ষেত্রে এখনই এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে বাস্তবতা ও করণীয়’ শিরোনামের এই মতবিনিময় সভায় শ্রম অধিদপ্তরের শ্রম পরিচালক আবু হেনা মস্তফা কামাল, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিনও আলোচনা করেন।