গ‌্যাসের দাম: দ্বিতীয় ধাপের বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন দুই ধাপে গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, তার দ্বিতীয় ধাপের কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2017, 06:57 AM
Updated : 28 Feb 2017, 10:41 AM

সেই সঙ্গে ‘আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে’ দেওয়া ওই গণবিজ্ঞপ্তি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।

এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম‌্যান ও সচিবকে চার সপ্তাহের মধ‌্যে এই রুলের জবা দিতে হবে।

ভোক্তা সংগঠন ক্যাবের এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুরু করে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের হাই কোর্ট বেঞ্চে মঙ্গলবার এই আদেশ দেয়।

আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাইফুল আলম। রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু্।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গৃহস্থালিতে ও গাড়িতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়িয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দেয়।

সেখানে বলা হয়, আবাসিক গ্রাহকদের আগামী ১ মার্চ থেকে এক চুলার জন্য মাসে ৭৫০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৮০০ টাকা দিতে হবে। আর দ্বিতীয় ধাপে ১ জুন থেকে এক চুলার জন্য মাসিক বিল ৯০০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৯৫০ টাকা হবে।

পাশাপাশি যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম ১ মার্চ থেকে প্রতি ঘনমিটারে ৩৮ টাকা এবং ১ জুন থেকে ৪০ টাকা হবে।

পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার, শিল্প ও বাণিজ্যক খাতেও গ্যাসের দাম দুই ধাপে ৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয় ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে।

এই গণবিজ্ঞপ্তিতে ‘আইনের ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে’ অভিযোগ করে এর কার্যকারিতা স্থগিতের জন‌্য সোমবার ক্যাবের পক্ষে প্রকৌশলী মোবাশ্বের হোসেন হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন।

২০০৩ সালের বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইনের ৩৪ ধারায় বলা হয়েছে, “কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ট্যারিফ কোনো অর্থবছরে একবারের বেশি পরিবর্তন করা যাবে না, যদি না জ্বালানি মূল্যের পরিবর্তনসহ অন্য কোনো পরিবর্তন ঘটে।”

ক্যাবের আইনজীবী সাইফুল আলম আদেশের পর সাংবাদিকদের বলেন, “সরকার ২৩ তারিখে গণগবিজ্ঞপ্তি জারি করে ১ মার্চ ও ১ জুন থেকে দুই দফায় দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। আদালত দ্বিতীয় দফায় গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ওপর ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দিয়ে রুল জারি করেছে।”

ওই আইনের ৬ ধারার বলা হয়েছে, “লাইসেন্সধারী ট্যারিফ পরিবর্তনের প্রস্তাব বিস্তারিত বিবরণসহ কমিশনে উপস্থাপন করতে পারবে এবং কমিশন, আগ্রহী পক্ষগণকে শুনানি দেওয়ার পর ট্যারিফ পরিবর্তনের প্রস্তাবসহ সব তথ‌্যপ্রাপ্তির ৯০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত সম্বলিত বিজ্ঞপ্তি জারি করবে ।”

সাইফুল আলম বলেন, রিটে এ ধারাটিকেও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। কারণ বিআরসি গণশুনানি করেছে গত বছরের ১৮ অগাস্ট। আর দাম বাড়ানোর গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ২৩ ফেব্রুয়ারি।

“এটা আইনের ব্যত্যয়। আদালত শুনানি নিয়ে বিআরসির জারি করা গণবিজ্ঞপ্তিটি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছে।”

ভোক্তা অধিকারকর্মীরা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব‌্যবসায়ী সংগঠন গ‌্যাসের দাম বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে। বাম দলগুলো মঙ্গলবার ঢাকায় আধাবেলা হরতালও পালন করেছে।