বিক্ষোভের সময় সমাজতান্ত্রকি ছাত্র ফ্রন্টের একাংশের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্সসহ অন্তত দশজনকে আটক করা হয়েছে।
হরতাল শেষে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলসহ সাত দফা দাবিতে আগামী ১৫ মার্চ জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও এবং ১ থেকে ১৫ মার্চ বিক্ষোভের নতুন কর্মসূচি দিয়েছে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গত বৃহস্পতিবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর শুক্রবার সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা আলাদাভাবে এই হরতালের ঘোষণা দেয়। তাতে সমর্থন জানায় আরও কয়েকটি দল।
সকালে হরতালের শুরুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড় থেকে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। ফলে ওই পথে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে। পরে রবার বুলেট ছুড়ে সেখান থেকে হরতাল সমর্থকদের সরিয়ে দেওয়া হয়।
হরতালকারীরা শাহবাগ থেকে সরে গিয়ে কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান নিতে চাইলে সেখান থেকেও পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশের দিকে ঢিল ছুড়তে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি তুহিন কান্তি দাস দাবি করেন, দুই দফায় তাদের ১০-১৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, “কর্তব্যরত পুলিশ সকাল থেকে অনেক ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছে। শাহবাগ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্পট; ঢাকা মেডিকেলের রোগীরা এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে পারছেন না, এসএসসি পরীক্ষার্থীও আছে।
“এ কারণে আমরা তাদের আইনসঙ্গতভাবে বাধা দিয়েছি, কিন্তু তারা শোনেনি, অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। পরে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে। স্পট থেকে ১০-১২ জনকে আটক করা হয়েছে, তাদের বিষয়ে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বেলা ১২টা পর্যন্ত এই হরতালে সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার কর্মীরাও সকাল থেকে আলাদাভাবে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে কদম ফোয়ারা, পল্টন, দৈনিক বাংলা ও জিরো পয়েন্টের সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।
পরে বেলা ১১টার দিকে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার কর্মীরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে সমাবেশ থেকে ১৫ মার্চ জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেন গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শহীদুল ইসলাম সবুজ।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলসহ সাত দফা দাবিতে ১ থেকে ১৫ মার্চ বিক্ষোভ পক্ষ ঘোষণা করেন গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।
তিনি বলেন, “হরতালে লড়াকু ছাত্ররা পুলিশের টিয়ারশেল লাঠিচার্জ মেকাবেলা করে গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে রাজপথে ছিল। তাদের অভিনন্দন। সরকার জনগণের দাবির বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়োগ করে দমনপীড়ন চালাচ্ছে। উন্নয়নের নামে লুট্পাট চলছে। বিআরসি আইন ভঙ্গ করেছে, তারা শুনানি ছাড়া দুইবার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে।”
এদিকে বাম দলগুলোর সমাবেশের সময় পাশে কর্মসূটি পালনরত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের কর্মীদের সঙ্গে তাদের উত্তেজনা তৈরি হয়।
পাশাপাশি দুই দলের কর্মসূচির মধ্যে বেলা পৌনে ১২টার দিকে একটি বাস প্রেসক্লাবের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হরতাল সমর্থকরা আটকে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় শ্রমিক লীগের কর্মীরা বাম মোর্চার কর্মীদের বাধা দেন।
এ সময় শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা হরতালবিরোধী স্লোগান ধরলে শুরু হয় উত্তেজনা। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং প্রেসক্লাবের সামনে দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।
পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আধাবেলা হরতালে শাহবাগ ও প্রেসক্লাব ছাড়া অন্য কোথাও যান চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়নি। বড় কোনো গোলযোগও অন্য কোথাও ঘটেনি।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আবাসিক গ্রাহকদের চুলায় ব্যবহারের গ্যাসের বিল দুই ধাপে ৫০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। আর যানবাহনে ব্যবহারের সিএনজির দাম বাড়ানো হয়েছে ১৪ শতাংশের বেশি।
সরকারের বাইরে থাকা বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করেছে। বিএনপি বলেছে, তারা ‘যথাসময়ে’ কর্মসূচি দেবে।