মঙ্গল শোভাযাত্রা হবে সারা দেশে: মন্ত্রী

কেবল ঢাকা নয়, আসন্ন বাংলা নববর্ষে সারা দেশে সরকারিভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2017, 11:47 AM
Updated : 13 April 2017, 10:44 AM

পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে সোমবার শিল্পকলা একাডেমিতে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের শুরুতেই মন্ত্রী এ তথ্য জানান। তিনি আরও জানান, আয়োজনের বিস্তারিত নিয়ে শিগগির এক প্রজ্ঞাপন জারি করবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।

সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, “এতদিন শুধু ঢাকায় উৎসবমুখর পরিবেশে পহেলা বৈশাখ আর মঙ্গল শোভাযাত্রা উদযাপিত হত। এবার সারা দেশে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও উদযাপিত হবে বাংলা নববর্ষ।”

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, উপসচিব ও বিভিন্ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন এ বৈঠকে। সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ইব্রাহীম হোসেন খান।

শুরুতে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “পুরো বাংলাদেশে মঙ্গল শোভাযাত্রা উদযাপনের মাধ্যমে গোটা পৃথিবীর কাছে এক নতুন পরিচয় আমরা তুলে ধরব। আমরা প্রমাণ করতে চাই, এ দেশ সংস্কৃতির দেশ, আবহমান কালের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দেশ।

“উগ্র মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদকে গোটা বাঙালি যে প্রত্যাখান করেছে, অসাম্প্রদায়িক মঙ্গল শোভাযাত্রা সারা দেশে উদযাপনের মাধ্যমে তা আমরা গোটা বিশ্বকে জানিয়ে দিতে চাই।”

বৈঠকে জানানো হয়, রমনা বটমূলে ছায়ানটের পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান ও চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্যে বিরতি এবার দীর্ঘায়িত হবে। সারা দেশে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান ও মঙ্গল শোভাযাত্রায় দুই থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংস্কৃতিমন্ত্রী জানান, এবার পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানের সময় বাড়াতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন।

জেলা, উপজেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য আর্থিক বরাদ্দ এবার বাড়ানো হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, বরাবরের মতোই শিল্পকলা একাডেমি তিন দিনব্যাপী নববর্ষের অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে, যাতে চৈত্র সংক্রান্তির অনুষ্ঠানও থাকবে। এছাড়া জাতীয় গণগ্রন্থাগার, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, শিশু একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট ও একাডেমিগুলোতেও আলাদা আয়োজন থাকবে।

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে হবে দশ দিনব্যাপী বাংলা নববর্ষের মেলা। বাংলা একাডেমি ও বিসিক যৌথভাবে এই মেলার আয়োজন করবে।

প্রতি বছরের মতো বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতেও নববর্ষের বিশেষ আয়োজন থাকবে। দেশের প্রতিটি কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানায়) ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার সরবরাহ করা হবে; থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও।

চারুপীঠ নামের একটি সংগঠন ১৯৮৫ সালে যশোরে প্রথমবারের মতো নববর্ষের উৎসবে পাপেট ও মুখোশ নিয়ে বাদ্যা বাজিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে।

এরপর ১৯৮৯ সাল থেকে ঢাকা চারুকলার শিক্ষার্থীরা পহেলা বৈশাখের সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে আসছেন। এই শোভাযাত্রা এখন কেবল বর্ষবরণ উৎসবের অনুসঙ্গই নয়, এর মধ্য দিয়ে বাঙালি সংস্কৃতিকে মেলে ধরার পাশাপাশি সমাজে অবক্ষয় থেকে মুক্তি, পেছনের দিকে হাঁটা প্রতিরোধের আহ্বানও জানানো হয়।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আবেদনে গতবছর ৩০শে নভেম্বর জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেস্কো বাংলাদেশের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে তাদের ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

ইউনেস্কো বলেছে, এই মঙ্গল শোভাযাত্রা বাংলাদেশের মানুষের সাহস আর অশুভের বিরুদ্ধে গর্বিত লড়াই আর ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষার প্রতীকী রূপ।

ধর্ম, বর্ণ, জাতি, লিঙ্গ পরিচয় নির্বিশেষে মঙ্গল শোভাযাত্রায় সবার অংশগ্রহণের বিষয়টিও ইউনেস্কোর ওই সিদ্ধান্তের পেছনে ভূমিকা রেখেছে।