আগামী প্রকাশনীর মালিক ওসমান গণি বলেন, “তরুণদের বই কিন্তু দারুণ চলছে। তবে কয়েকজন তরুণ প্রকাশক এমন কিছু অ-প্রকাশক থেকে বই প্রকাশ করছেন, যাদের কোনো মান নেই। প্রকাশক নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের আরও সতর্ক হতে হবে।”
গত বছর ‘ইসরাফিলের প্রস্থান’ ও ‘শীতার্ত পৌষ অভিমুখে’ নামে দুটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশ হয় মারুফের। এবারও বেহুলাবাংলা থেকে ‘রেইল ক্রসিং’ নামে তার একটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে।
পুঁথিনিলয় থেকে প্রকাশিত ভ্রমণকাহিনি ‘উইথআউট বর্ডার’র লেখক মাজেদুল নয়ন বলেন, “আমাদের বইগুলো কিনছে মূলত তরুণ পাঠকরা। এদের কেউ বাড়ি থেকে আসা টাকা জমিয়ে, কেউ ছাত্র পড়ানোর টাকা থেকে আমাদের বইগুলো কিনছেন। তাদের এই ভালোবাসাই তো আমাদের উৎসাহিত করে।”
তরুণ লেখকদের নিয়ে আশার কথা বললেন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি মাজহারুল ইসলামও।
তবে তরুণ লেখকদের অনেকেই বললেন, বই প্রকাশে অনেক জটিলতা পেরোনোর কথা। প্রকাশকদের সুদৃষ্টি চাইলেন তারা।
এবার চৈতন্য প্রকাশনী থেকে বইমেলায় এসেছে তরুণ কবি, লেখক বিনয় দত্তের ছোটগল্পের বই ‘চিলতে মেঘ ও কুহুকেকার গল্প’।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তরুণ লেখক মরে যায় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে। আমাদের সবারই মনে রাখা উচিত- সব জনপ্রিয় লেখকই এক সময় তরুণ লেখক ছিলেন। তারা ভালো পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছেন বলে আজকের জনপ্রিয় লেখক হয়ে উঠতে পেরেছেন।”
মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জয়নাল আবেদীনের উপন্যাস ‘আরাকান থেকে বাংলাদেশ’ এসেছে বলাকা প্রকাশনী থেকে। তরুণ লেখকদের জন্য প্রকাশনা সংস্থা থেকে বড় কোনো সহযোগিতা মেলে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
“তরুণদের বই ছাপাতেও তাদের নানা রকমের চিন্তাভাবনা করতে হয়। অনেকটা দ্বিধায় ভোগে, তরুণের লেখা প্রকাশ করবে কি না।”
এবার বইমেলায় লিটল ম্যাগ চত্বরের প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রকাশিত হয়েছে তরুণ কবি, লেখক মাজহার সরকারের উপন্যাস ‘রাজনীতি । স্বাধীন বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতি নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস ‘রাজনীতি’।
তিনি বলেন, “প্রকাশকরা তরুণ লেখকের লেখা সম্পর্কে ধারণা রাখেন না। কারণ তারা পড়েন না। ভালো প্রকাশক হতে গেলে এই সময়ে কারা কারা লিখছেন সেই বই বা লেখা খুঁজে পড়ে দেখা উচিৎ। তাহলে বই প্রকাশ করতে লেখককে প্রকাশকের কাছে ধর্না দিতে হবে না। প্রকাশকই পান্ডুলিপি চেয়ে নেবেন।”
নাইস নূরের নতুন বই ‘জেবার প্রিয় বারবি ডল’ শিশুতোষ এই গল্প গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে সাহস পাবলিকেশন্স।
তিনি বলেন, “তরুণ লেখকদের বই প্রকাশের আগে পান্ডুলিপি আরও ভালোভাবে সম্পাদনা করা প্রয়োজন। আরও ভালো প্রুফ আর সম্পাদনাও দরকার।”
অবসর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘পৌরাণিক বাগধারা’র লেখক নাবীল অনুসূর্য প্রকাশনা সংস্থার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, “নতুন প্রকাশনীগুলোর মধ্যে পেশাদারিত্বের অভাব প্রকট। এমনকি হাতে গোনা কয়েকটি প্রকাশনী বাদ দিলে, বাকিগুলোর সম্পাদকীয় পর্ষদও নেই, যারা প্রকাশিত হতে যাওয়া বইগুলো যাচাই-বাছাই করবে।
“প্রকাশনীগুলোর পেশাদার হয়ে ওঠা, পাণ্ডুলিপি বাছাই থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত আধুনিক প্রকাশনা ব্যবস্থার প্রক্রিয়া আত্মস্থ করা এগুলো একেবারেই প্রাথমিক শর্ত।”
ঢাকার বাইরের তরুণ লেখকদের বই নিয়ে আরও বেশি প্রচারের জন্য প্রকাশকদের ভূমিকা প্রত্যাশা করেন তিনি।
“ঢাকার বাইরে থেকে অনেক লেখক বই প্রকাশ করেন। তাদের বইগুলো যেন আরও বেশি ফোকাসড হয়, তাতে প্রকাশকদের আরও ভালো ভূমিকা থাকা উচিত,” বলেন এই লেখক।
তরুণদের বই প্রকাশে অনীহার অভিযোগ নাকচ করে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম বলেন, “ভালো মানের পাণ্ডুলিপি আনলে বড় প্রকাশকরাও তাদের বই ছাপে।”