জঙ্গল ঘোরার সঙ্গী ‘বনে বেড়াই’ বইমেলায়

‘পেশায় আলোকচিত্রী, নেশায় পর্যটক’ মুস্তাফিজ মামুনের ‘বনে বেড়াই’ এখন বইমেলায়, বইটি হয়ে উঠতে পারে জঙ্গলের নির্জনতায় ভ্রমণ পিপাসুদের সঙ্গী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2017, 05:07 PM
Updated : 27 Feb 2017, 10:35 AM

বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন বনে ভ্রমণের বিস্তারিত গাইড হিসাবে লেখা এই বই এনেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর পাবলিশিং লিমিটেড (বিপিএল)।

বইয়ের লেখক মুস্তাফিজ মামুনের মূল পরিচয় আলোকচিত্রী হলেও এরইমধ্যে ভ্রমণ লেখক হিসাবেও নজর কেড়েছেন তিনি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান আলোকচিত্রী মামুন বইয়ে গল্পচ্ছলে একদিকে যেমন বনের বর্ণনা দিয়েছেন, তেমনি সেই বনে বসবাসকারী পশু-পাখির কথাও বলেছেন। বইয়ে উঠে এসেছে বন-আবহাওয়ার বিশেষত্ব, রয়েছে সেই বন ভ্রমণের সবচেয়ে উপযোগী সময়ের কথা।

সেই বন ভ্রমণে গেলে একজন পর্যটককে কী কী প্রস্তুতি নিতে হবে, কীভাবে তিনি যাবেন, কোথায় থাকবেন, বিশেষ কী কী সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে- খুঁটিনাটি সব কিছু পাওয়া যাবে এই বইয়ে।  যোগাযোগের প্রয়োজনীয় অনেক নম্বরও মিলবে।

ভ্রমণ পিপাসু এই আলোকচিত্রী সাংবাদিকের বনের বর্ণনা হয়ে উঠেছে জীবন্ত। বইয়ের পাতায় পাতায় বনের ছবি এটিকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা।

বাংলাদেশের পুরাতন সাত বিভাগের পাশাপাশি নবগঠিত ময়মনসিংহ বিভাগের বনের বর্ণনাও আলাদা করে রয়েছে বইতে। খুলনা বিভাগের বর্ণনাজুড়ে নয়টি প্রবন্ধে রয়েছে বাংলাদেশের গর্বের সুন্দরবন।

উত্তরের দুই বিভাগ রাজশাহী-রংপুরের বনের বর্ণনাও রয়েছে এখানে। পুরো বইতে ‘প্রাণ-প্রকৃতি আর নির্জনতাপ্রেমীদের’ জন্য সর্বমোট ৩৬টি বন ভ্রমণের বিস্তারিত দেওয়া হয়েছে।

বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো এই আলোকচিত্রী তার লেখায় যেমন সব খুঁটিনাটি বিষয় তুলে এনেছেন, তেমনি মনের গহীনে বনের প্রতি তৈরি হওয়া অসাধারণ মমত্ববোধের কথাও বলেছেন অকপটে।

তিনি লিখেছেন, সাগর-পাহাড়-জঙ্গল-একসঙ্গে এত কিছু পৃথিবীর কম দেশেই আছে। জঙ্গলও আছে আবার অনেক রকম, যেমন ক্রান্তীয় আর্দ্র চিরসবুজ, ক্রান্তীয় আধা-চিরসবুজ। জোয়ারধৌত শ্বাসমূলের সুন্দরবন তো পৃথিবীতেই বিরল এবং বড় অর্থে একমাত্র। বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় ৩৬টি বনাঞ্চল আছে।

“সুন্দরবন আবার আছে তিনটি জেলাজুড়ে-খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট। সে বনে আছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। পৃথিবীর অনেক দেশ এমন একটি প্রাণী পেলে গর্বে আত্মহারা হয়ে যেত।

“জীব বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ আরও দুটি বন হলো-মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া ও রাজকান্দি। ফেলতে পারবেন না হবিগঞ্জের রেমা কালেঙ্গা আর সাতছড়িকে। লাউয়াছড়ার উল্লুক দেখতে দিনের পর দিন শ্রীমঙ্গলে বসে থাকে বিদেশিরা। দেশের লোকজনও যাচ্ছে লাউয়াছড়ায়।

“এরপর সিলেটের রাতারগুলের কথা ধরেন। এটি একটি জলাবন। বর্ষায় পানি থাকে, শুকনায় করে খটখট। তবে সব সময়ই সুন্দর, বর্ষায় বেশি। এমন বনও কিন্তু পৃথিবীতে কম।

“কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান, পাবলাখালি জাতীয় উদ্যানসহ পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম বনেরই দেশ। এছাড়া কক্সবাজারে আছে চুনতি, ফাসিয়াখালি, টেকনাফ গেম রিজার্ভের মত সমৃদ্ধ বনভূমি। অনেকে হয়ত জানেন না, রংপুর বিভাগেও বেশ কিছু বন জঙ্গল আছে।”

লেখকের ভাষায়, ‘বনে বেড়াই’ বাংলাদেশের জঙ্গল ভ্রমণের একটি গাইড বুক। দেশের ভ্রমণ-উপযোগী প্রায় সব বন এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বইটি বনে বেড়াতে পাঠকদের কাজে লাগবে, পাশাপাশি এটি পরিবেশের প্রতি মমতাময়ী হতেও সাহায্য করবে বলে মনে করেন লেখক।

বইয়ের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন, “আমরা বন ও বন্যপ্রাণীর শত্রু হয়ে যাচ্ছি নিজেদের অজান্তেই। বেড়াতে গিয়ে মনের ভুলে চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি ফেলে আসছি বনে বা বনভোজনে গিয়ে জোরে জোরে মাইক বাজাচ্ছি। তাতে বন ও বন্যপ্রাণী উভয়েরই ক্ষতি হয়।”

আর্ট পেপারে চার রঙে মুদ্রিত বইটির মূল্য ৭৩০ টাকা। বইমেলায় থাকছে ২৫ শতাংশ ছাড়। বইটি বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৬৫, ৬৬ নম্বরে বিপিএলের স্টলে। এছাড়া বিপিএলের ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনেও অর্ডার করা যাবে এই বই।