জিহাদের মৃত‌্যু: চারজনের দশ বছরের সাজা

রাজধানীর শাহজাহানপুরে রেলের পরিত্যক্ত নলকূপে পড়ে শিশু জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় প্রকৌশলী ও ঠিকাদারসহ চার আসামিকে দশ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2017, 06:57 AM
Updated : 26 Feb 2017, 07:00 AM

অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলার বাকি দুই আসমিকে খালাস দিয়েছেন বিচারক। 

রোববার ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান আসামিদের উপস্থিতিতে তিন বছর আগের এই আলোচিত মামলার রায় ঘোষণা করেন।

আসামিদের মধ‌্যে শাহজাহানপুর রেল কলোনিতে পানির পাম্প বসানোর প্রকল্প পরিচালক রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ উপ সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেএসআর এর মালিক প্রকৌশলী আব্দুস সালাম, কমলাপুর রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন ও ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার আবু জাফর আহমেদ শাকির সাজার আদেশ দিয়েছেন বিচারক।

ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারার দ্বিতীয় অংশ অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজা দশ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি দুই লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দুই বছর বিনামশ্রম কারাদণ্ডের রায় দেন তিনি।

প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ধরে পড়া রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, এই আসামিদের অবহেলার কারণে একটি চার বছরের শিশুর অকাল মৃত‌্যু হয়েছে খেলতে গিয়ে।

অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) দিপক কুমার ভৌমিক ও সাইফুল ইসলামকে খালাস দেন বিচারক।  

এ মামলার বাদী জিহাদের বাবা নাসির ফকির রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই রায়ে দুইজন খালাস পাওয়ায় তিনি সন্তুষ্ট নন। রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করবেন।

২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর শাহজাহানপুর রেল কলোনিতে খোলা থাকা কয়েকশ ফুট গভীর এক নলকূপের পাইপে পড়ে যায় চার বছরের জিহাদ।

প্রায় ২৩ ঘণ্টা রুদ্ধশ্বাস অভিযানে অনেক নিচে ক্যামেরা নামিয়েও ফায়ার সার্ভিস কোনো মানুষের ছবি না পাওয়ায় পাইপে জিহাদের অস্তিত্ব থাকা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। ওই সন্দেহ রেখেই উদ্ধার অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস।

এর কয়েক মিনিটের মধ্যে কয়েকজন তরুণের তৎপরতায় তৈরি করা যন্ত্রে পাইপের নিচ থেকে উঠে আসে অচেতন জিহাদ। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান, শিশুটি বেঁচে নেই।

জিহাদের মৃত্যুর ওই ঘটনা সে সময় সারাদেশে আলোড়ন তোলে। এর জন্য দায়ীদের শাস্তিরও দাবি ওঠে। এরপর জিহাদের বাবা অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর অভিযোগ এনে শাহজাহানপুর থানায় মামলা করেন।

মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহানপুর থানার পরিদর্শক আবু জাফর ২০১৫ সালের এপ্রিল যে অভিযোগপত্র দেন তাতে শাহজাহানপুর রেল কলোনিতে পানির পাম্প বসানোর প্রকল্প পরিচালক রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ উপ সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেএসআর এর মালিক প্রকৌশলী আব্দুস সালামকে আসামি করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ‘অপরাধজনক প্রাণনাশের’ অভিযোগ আনা হয়।

পরে বাদীর নারাজি আবেদনে গত বছরের ৩১ মার্চ আরও চারজনকে যুক্ত করে নতুন করে অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মিজানুর রহমান।

এই পাইপেই পড়ে গিয়েছিল জিহাদ

তাতে জাহাঙ্গীর ও সালাম ছাড়াও বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম, কমলাপুর রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন, ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার আবু আহমেদ শাকি, সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) দিপক কুমার ভৌমিককে আসামি করা হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, রেল কলোনির একটি পানির পাম্পে লোহার পাইপ দিয়ে কূপ খনন করা হয়। কূপে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা না করে মুখ খোলা অবস্থায় দীর্ঘদিন পরিত্যক্তভাবে ফেলে রাখা হয়। ফলে বাদীর ছেলে জিহাদ কূপের পাশে খেলার সময় পড়ে মারা যায়।

এরপর ২০১৬ সালের ৪ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান।

এ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি শওকত আলম জানান, এ মামলায় বাদীপক্ষে মোট ১১ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। আর আসামিপক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন তিনজন।