অর্ধশতক ধরে বাঙালির আগ্রহজুড়ে থাকা কবরী এই বইয়ের মধ্য দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটালেন। তার বইটি প্রকাশ করেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর পাবলিশিং লিমিটেড- বিপিএল।
শনিবার বইমেলায় কবরীর এই বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আকস্মিকভাবেই উপস্থিত হন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। ষাটের দশকে ডাকসু ভিপি হিসেবে রাজপথ কাঁপানো এই ছাত্রনেতা বলেন কবরীকে নিয়ে তাদের প্রজন্মের মোহাচ্ছন্নের কথা।
মেনন বলেন, “কবরী সম্পর্কে কী বলব, কবরী আমাদের সময়কার হার্টথ্রব। তার সেই স্মৃতি এখনও আমাদের মধ্যে।”
অভিনেত্রী জীবন পেরিয়ে কয়েক বছর আগে কবরী যখন সংসদে ছিলেন আওয়ামী লীগের আইনপ্রণেতা হিসেবে, তখন বিপরীত দিকেই ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দলের কবরীর একটি বই কিনে নেন মওদুদ, বইয়ে নেন অটোগ্রাফও। বেশ কিছুক্ষণ কথাও বলেন তারা।
মওদুদকে দেখে তার বিয়ের কথা মনে করিয়ে দেন কবরী। পল্লীকবি জসীম উদদীনের মেয়ে হাসনা জসীম উদদীনকে বিয়ে করেন মওদুদ।
কবরী হাসতে হাসতে বলেন, বিয়ের দিন হাসনাকে শাড়িটি তিনিই পরিয়ে দিয়েছিলেন।
একই হাসি ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে; যা দেখে “সেই হাসিটি এখনও রয়েছে” স্বগতোক্তি বেরিয়ে আসে হাবিবুল্লাহ শাহিনের।
হাবিবুল্লাহর একথায় তার সঙ্গে থাকা মেয়ে নাফিসা হাবিব হেসে ওঠেন। হেসে ওঠেন হাবিবুল্লাহ নিজেও।
হাবিবুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাজ্জাক-কবরীর অসংখ্য চলচ্চিত্র দেখেছেন তিনি।
অভিনেত্রী কবরী ছাড়াও রাজনীতিক কবরীও প্রিয় হাবিবুল্লাহর। তার মূল্যায়ন- ‘রাজনীতিতে যতদিন ছিলেন, সৎভাবেই ছিলেন, তাই তো কবরীর প্রতি ভালো লাগা আরও বেড়েছে।”
বিকাল ৪টার পর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে আসেন কবরী। তিনি যখন এগিয়ে যাচ্ছিলেন মোড়ক উন্মোচনের জন্য নির্ধারিত স্থানের দিকে, জনস্রোতও তার পিছু যাচ্ছিল।
আবার বিপিএল স্টলে গেলে সেখানেও তাকে ঘিরে ছিল উপচেপড়া ভিড়।
অভিনয় দেখে কবরীর ভক্ত এনআরবি ব্যাংকের কর্মকর্তা দীপক কুমার চক্রবর্তী বলেন, কবরীর অনেক চলচ্চিত্রই দাগ কেটেছে তার মনে, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কেটেছে ‘কাচ কাটা হিরে’।
ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলোজি অ্যান্ড সায়েন্সের শিক্ষার্থী রনি, রিফাত, সারা তাদের শিক্ষক কবরীর বই কিনে নেন।
সারা বলেন, “রংবাজ, সারেং বউ ছবিগুলো যে কতবার দেখেছি তার ইয়ত্তা নেই।”
ছোট্ট নাবিলা এসেছিল মিরপুর থেকে। কবরীর চলচ্চিত্রের গান সে মার মুখে প্রায়ই শোনে। রুপালী পর্দার সেই মুখকে কাছে থেকে দেখে ভীষণ খুশি সে।
বাবা অরূপ বড়ুয়ার সঙ্গে বই কিনতে মেলায় আসা ছোট্ট নির্ঝরা বড়ুয়া শুভার উচ্ছ্বাস ছিল অন্য রকমের। কারণ সে উঠেছে কবরীর কোলে।
‘স্মৃতিটুকু থাক’ শিরোনামে কবরীর এই আত্মজৈবনিক রচনায় ঢাকাই সিনেমার সদর-অন্দরের পাশাপাশি এই শিল্পের উপর মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধ পরবর্তী রাজনীতির অভিঘাতের কথা উঠে এসেছে।
বিপিএলের একজন মুখপাত্র বলেন, এই বইয়ে রয়েছে কবরীর ‘অপ্রকাশিত কিছু ছবি আর অজানা কিছু গল্প’।
ষাটের দশকে স্কুলপড়ুয়া মিনা পালের বাংলা চলচ্চিত্রের ‘কবরী’ রূপে আত্মপ্রকাশ, উত্তাল একাত্তরে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের পক্ষে ভারতের বড় বড় শহরে জনমত সংগঠন, সেলুলয়েডের বাইরে রাজনীতি জীবনের টুকরো টুকরো স্মৃতি দুই মলাটে বেঁধে কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী প্রথমবারের মতো এলেন লেখক পরিচয় নিয়ে।
এই বইয়ের পাণ্ডুলিপি পড়ে কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন- “স্মৃতিটুকু থাক- এর পাণ্ডুলিপি পাঠ করে আমার মনে হলো, আমি কোনো কবির রচিত আত্মজৈবনিক গদ্য পাঠ করছি।”
নিজের বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে কবরী বলেন, “আমি নতুন করে কী বলবো? আপনারা তো আমার মনের কথা জানেন। আমি জানি, আমার দর্শক, শ্রোতা, যারা আমাকে ভালোবাসেন, তারা আমার মনের কথা জানেন।”
“আমি আপনাদের পাশেই ছিলাম। আগামীতেও থাকব,” বলে নিজের বইটি সবাইকে কেনার আহ্বান জানান তিনি।
“বই না পড়লে কিছুই জানা যায় না। বই আপনাকে অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গায় নিয়ে যাবে। বই আপনার সময় কাটাবে। দুঃখমোচন করবে। অনেক কিছু শেখাবে।”