কবরীর বই-এ ব‌্যাপক সাড়া: এলেন মেনন, কিনলেন মওদুদ

একুশের বইমেলায় আসার সঙ্গে সঙ্গে ব‌্যাপক সাড়া ফেলেছে কবরীর আত্মজৈবনিক বই ‘স্মৃতিটুকু থাক’, যাতে ঢাকাই চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়ে তার না বলা কথার পসরা সাজিয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2017, 02:05 PM
Updated : 26 Feb 2017, 03:10 PM

অর্ধশতক ধরে বাঙালির আগ্রহজুড়ে থাকা কবরী এই বইয়ের মধ‌্য দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটালেন। তার বইটি প্রকাশ করেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর পাবলিশিং লিমিটেড- বিপিএল।

শনিবার বইমেলায় কবরীর এই বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আকস্মিকভাবেই উপস্থিত হন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। ষাটের দশকে ডাকসু ভিপি হিসেবে রাজপথ কাঁপানো এই ছাত্রনেতা বলেন কবরীকে নিয়ে তাদের প্রজন্মের মোহাচ্ছন্নের কথা।

মেনন বলেন, “কবরী সম্পর্কে কী বলব, কবরী আমাদের সময়কার হার্টথ্রব। তার সেই স্মৃতি এখনও আমাদের মধ্যে।”

‘স্মৃতিটুকু থাক’ এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন

মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ‌্যান অংশে মোড়ক উন্মোচনের পর কবরী যখন বাংলা একাডেমি অংশ গিয়ে বিপিএলের স্টলে বসেন, তখন সেখানে উপস্থিত সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমেদ।

অভিনেত্রী জীবন পেরিয়ে কয়েক বছর আগে কবরী যখন সংসদে ছিলেন আওয়ামী লীগের আইনপ্রণেতা হিসেবে, তখন বিপরীত দিকেই ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস‌্য মওদুদ।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দলের কবরীর একটি বই কিনে নেন মওদুদ, বইয়ে নেন অটোগ্রাফও। বেশ কিছুক্ষণ কথাও বলেন তারা।

মওদুদকে দেখে তার বিয়ের কথা মনে করিয়ে দেন কবরী। পল্লীকবি জসীম উদদীনের মেয়ে হাসনা জসীম উদদীনকে বিয়ে করেন মওদুদ।

কবরী হাসতে হাসতে বলেন, বিয়ের দিন হাসনাকে শাড়িটি তিনিই পরিয়ে দিয়েছিলেন।

বিপিএলের স্টলে বসে মওদুদ আহমেদের হাতে নিজের বই তুলে দেন কবরী

মেলার বাংলা একাডেমি অংশের ৬৫-৬৬ নম্বরে বিপিএলের স্টলে বসে ভুবনমোহিনী সেই হাসি মুখে রেখেই অটোগ্রাফের আবদার মেটাচ্ছিলেন কবরী।

একই হাসি ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ‌্যানে বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে; যা দেখে “সেই হাসিটি এখনও রয়েছে” স্বগতোক্তি বেরিয়ে আসে হাবিবুল্লাহ শাহিনের।

হাবিবুল্লাহর একথায় তার সঙ্গে থাকা মেয়ে নাফিসা হাবিব হেসে ওঠেন। হেসে ওঠেন হাবিবুল্লাহ নিজেও।

‘স্মৃতিটুকু থাক’-এর মোড়ক উন্মোচনের পর বিপিএলের স্টলে আসেন কবরী; প্রিয় অভিনেত্রীকে কাছে পেয়ে সেলফি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন ভক্তরা।

ঢাকার পল্লবীর বাসিন্দা হাবিবুল্লাহ শাহিন মেয়ে নাফিসাকে অভিনেত্রী কবরীর গল্প শোনাতে শোনাতে আসেন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে।

হাবিবুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাজ্জাক-কবরীর অসংখ‌্য চলচ্চিত্র দেখেছেন তিনি।

অভিনেত্রী কবরী ছাড়াও রাজনীতিক কবরীও প্রিয় হাবিবুল্লাহর। তার মূল্যায়ন- ‘রাজনীতিতে যতদিন ছিলেন, সৎভাবেই ছিলেন, তাই তো কবরীর প্রতি ভালো লাগা আরও বেড়েছে।”

বিকাল ৪টার পর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে আসেন কবরী। তিনি যখন এগিয়ে যাচ্ছিলেন মোড়ক উন্মোচনের জন্য নির্ধারিত স্থানের দিকে, জনস্রোতও তার পিছু যাচ্ছিল।

বিপিএলের স্টলে বসে নিজের বইয়ে অটোগ্রাফ দেন কবরী

মোড়ক উন্মোচনের আগে সেখানে যখন আড্ডা চলছিল আসরের মধ‌্যমনি কবরীকে ঘিরে, তখন চারপাশে ভিড় জমে যায়। কেউ কবরীর সঙ্গে ছবি তুলতে চান, কেউ কথা বলতে চান, আবার কেউ দেখতে চান প্রিয় শিল্পীকে।

আবার বিপিএল স্টলে গেলে সেখানেও তাকে ঘিরে ছিল উপচেপড়া ভিড়।

অভিনয় দেখে কবরীর ভক্ত এনআরবি ব্যাংকের কর্মকর্তা দীপক কুমার চক্রবর্তী বলেন, কবরীর অনেক চলচ্চিত্রই দাগ কেটেছে তার মনে, এর মধ‌্যে সবচেয়ে বেশি কেটেছে ‘কাচ কাটা হিরে’।

ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলোজি অ‌্যান্ড সায়েন্সের শিক্ষার্থী রনি, রিফাত, সারা তাদের শিক্ষক কবরীর বই কিনে নেন।

সারা বলেন, “রংবাজ, সারেং বউ ছবিগুলো যে কতবার দেখেছি তার ইয়ত্তা নেই।”

কবরীর বই স্মৃতিটুকু থাক

চলচ্চিত্র থেকে রাজনীতির বন্ধুর পথ মাড়িয়ে কবরী এখন শিক্ষকতায় থাকলেও তাকে নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই এতটুকুও; আর তা সঞ্চারিত হচ্ছে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে।

ছোট্ট নাবিলা এসেছিল মিরপুর থেকে। কবরীর চলচ্চিত্রের গান সে মার মুখে প্রায়ই শোনে। রুপালী পর্দার সেই মুখকে কাছে থেকে দেখে ভীষণ খুশি সে।

বাবা অরূপ বড়ুয়ার সঙ্গে বই কিনতে মেলায় আসা ছোট্ট নির্ঝরা বড়ুয়া শুভার উচ্ছ্বাস ছিল অন‌্য রকমের। কারণ সে উঠেছে কবরীর কোলে।

বিপিএলের স্টলে এক ক্ষুদে ভক্তকে আদর করছেন ‘স্মৃতিটুকু থাকা’ এর লেখিকা অভিনেত্রী কবরী।

কথা বলতে বলতেই শুভা বলে উঠলো, “তিনি (কবরী) আমাকে বলেছেন, আমি খুব দুষ্টু.. আর বলেছে, আমার চাহনি খুব তীক্ষ্ণ।”

‘স্মৃতিটুকু থাক’ শিরোনামে কবরীর এই আত্মজৈবনিক রচনায় ঢাকাই সিনেমার সদর-অন্দরের পাশাপাশি এই শিল্পের উপর মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধ পরবর্তী রাজনীতির অভিঘাতের কথা উঠে এসেছে।

বিপিএলের একজন মুখপাত্র বলেন, এই বইয়ে রয়েছে কবরীর ‘অপ্রকাশিত কিছু ছবি আর অজানা কিছু গল্প’।

ষাটের দশকে স্কুলপড়ুয়া মিনা পালের বাংলা চলচ্চিত্রের ‘কবরী’ রূপে আত্মপ্রকাশ, উত্তাল একাত্তরে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের পক্ষে ভারতের বড় বড় শহরে জনমত সংগঠন, সেলুলয়েডের বাইরে রাজনীতি জীবনের টুকরো টুকরো স্মৃতি দুই মলাটে বেঁধে কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী প্রথমবারের মতো এলেন লেখক পরিচয় নিয়ে।

এই বইয়ের পাণ্ডুলিপি পড়ে কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন- “স্মৃতিটুকু থাক- এর পাণ্ডুলিপি পাঠ করে আমার মনে হলো, আমি কোনো কবির রচিত আত্মজৈবনিক গদ্য পাঠ করছি।”

নিজের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে কবরী

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে কবির এই উদ্ধৃতি সবার সামনে তুলে ধরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, ‘আমার আর কিছু বলার নেই।”

নিজের বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে কবরী বলেন, “আমি নতুন করে কী বলবো? আপনারা তো আমার মনের কথা জানেন। আমি জানি, আমার দর্শক, শ্রোতা, যারা আমাকে ভালোবাসেন, তারা আমার মনের কথা জানেন।”

“আমি আপনাদের পাশেই ছিলাম। আগামীতেও থাকব,” বলে নিজের বইটি সবাইকে কেনার আহ্বান জানান তিনি।

“বই না পড়লে কিছুই জানা যায় না। বই আপনাকে অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গায় নিয়ে যাবে। বই আপনার সময় কাটাবে। দুঃখমোচন করবে। অনেক কিছু শেখাবে।”