বইমেলায় এল কবরীর ‘না বলা গল্প’

চলচ্চিত্র থেকে রাজনীতির বন্ধুর পথ মাড়িয়ে এখন শিক্ষকতায় কবরী, কিন্তু তাকে নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই এতটুকুও; বাঙালির সেই কৌতূহল মেটাতে এল এই অভিনেত্রীর জীবনকথা ‘স্মৃতিটুকু থাক’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2017, 11:02 AM
Updated : 26 Feb 2017, 03:09 PM

অর্ধ শতাব্দী আগে রুপালি জগতে পা রেখেই মিষ্টি মেয়ের তকমা পেয়ে যাওয়া কবরী নিজেই লিখলেন তার জীবনের না বলা গল্প; আর তা বইয়ের মোড়কে আনল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর পাবলিশিং লিমিটেড- বিপিএল।

শনিবার একুশের বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে এই জীবনগাথার মোড়ক উন্মোচন হয়, আসরের মধ‌্যমনি হয়ে ছিলেন এখনও অনেকের স্বপ্নরানি কবরী, সেই ভুবনমোহিনী হাসি নিয়ে।

কোনো ঘোষণা ছাড়াই মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিতি কবরীর জনপ্রিয়তাই আবার নতুন করে জানান দেয়।

“কবরী সম্পর্কে কী বলবো, কবরী আমাদের সময়কার হার্টথ্রব। তার সেই স্মৃতি এখনও আমাদের মধ্যে,” বলেন ষাটের দশকের ছাত্রনেতা ডাকসুর ভিপি মেনন।

মেনন যখন রাজপথ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, তখন রুপালি পর্দায় কাঁপাচ্ছিলেন এই কবরী, যার হাত ধরে অভিষেক ঘটে ওই সময়ের প্রায় সব তারকা অভিনেতার।

‘স্মৃতিটুকু থাক’ এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন

নিজের বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে কবরী বলেন, “আমি নতুন করে কী বলবো? আপনারা তো আমার মনের কথা জানেন। আমি জানি, আমার দর্শক, শ্রোতা, যারা আমাকে ভালোবাসেন, তারা আমার মনের কথা জানেন।”

“আমি আপনাদের পাশেই ছিলাম। আগামীতেও থাকব,” বলে নিজের বইটি সবাইকে কেনার আহ্বান জানান তিনি।

“বই না পড়লে কিছুই জানা যায় না। বই আপনাকে অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গায় নিয়ে যাবে। বই আপনার সময় কাটাবে। দুঃখমোচন করবে। অনেক কিছু শেখাবে।”

‘স্মৃতিটুকু থাক’ শিরোনামে কবরীর এই আত্মজৈবনিক রচনায় ঢাকাই সিনেমার সদর-অন্দরের পাশাপাশি এই শিল্পের উপর মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধ পরবর্তী রাজনীতির অভিঘাতের কথা উঠে এসেছে।

বিপিএলের একজন মুখপাত্র বলেন, এই বইয়ে রয়েছে কবরীর ‘অপ্রকাশিত কিছু ছবি আর অজানা কিছু গল্প’।

নিজের বই ‘স্মৃতিটুকু থাক’ হাতে কবরী

ষাটের দশকে স্কুলপড়ুয়া মিনা পালের বাংলা চলচ্চিত্রের ‘কবরী’ রূপে আত্মপ্রকাশ, উত্তাল একাত্তরে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের পক্ষে ভারতের বড় বড় শহরে জনমত সংগঠন, সেলুলয়েডের বাইরে রাজনীতি জীবনের টুকরো টুকরো স্মৃতি দুই মলাটে বেঁধে কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী প্রথমবারের মতো এলেন লেখক পরিচয় নিয়ে।

এই বইয়ের পাণ্ডুলিপি পড়ে কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন- “স্মৃতিটুকু থাক- এর পাণ্ডুলিপি পাঠ করে আমার মনে হলো, আমি কোনো কবির রচিত আত্মজৈবনিক গদ্য পাঠ করছি।”

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে কবির এই উদ্ধৃতি সবার সামনে তুলে ধরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, ‘আমার আর কিছু বলার নেই।”

“চিত্রনায়িকা কবরীর এই রচনা শুধু তার জীবনই নয়। পাকিস্তানি ছায়াছবির রাহুগ্রাস থেকে মুক্তিপ্রত্যাশী বাংলা ছায়াছবি এবং পূর্ব বাংলার মানুষের সাংস্কৃতিক মুক্তি সংগ্রামের এক বিশ্বস্ত দলিলও বটে”- কবি গুণকে উদ্ধৃত করে তৌফিক খালিদী পাঠকদের উদ্দেশে বলেন, “আমরা আশা করবো, আপনারা বইটা পড়বেন।”

কবরীকে নিয়ে এক সময় স্বপ্নাবিষ্ট থাকা মেনন বইটি নিয়েও নিজের আগ্রহের কথা জানান।

“আমাদের এখানকার সিনেমা শিল্পের যাত্রা এবং অগ্রগতি যেটা কিছুটা হলেও মুখ থুবড়ে পড়েছে, সেই পুরনো স্বাদটা এখানে খুঁজে পাব।”

নিজের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে কবরী

কবরীকে দিদি সম্বোধন করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান বলেন, “সুন্দর লাগছে বইটা। নিশ্চয়ই বইটা ভালো হবে।”

প্রবাস থেকে আসা শিল্পী মনিরুল ইসলাম বলেন, “কবরী ইজ কবরী। মানুষ হিসাবে উনাকে আমার খুবই ভালো লাগে। অতি সাধারণভাবে থাকেন। সিনেমার শিল্পীরা অন্য রকম বলে প্রচার রয়েছে। কিন্তু তার সরলতা ও হাসি বিরাট জিনিস।”

“বিডিনিউজ পাবলিশিংকে ধন্যবাদ। বইটা খুব সুন্দরভাবে করা। সুন্দর ডিজাইন। কবরীর ৫০ বছরের নিষ্ঠা নিয়ে কাজ, সেটা বিরাট জিনিস। হয়ত অনেক বড় বিরাট বই করা যেত। কিন্তু সহজ সরলভাবে সবটাই করে দেয়া হয়েছে। ৫০ বছরের সব কাজ সৎভাবে তিনি বলে গেছেন।”

কবরীকে ঘিরে পাঠকের আগ্রহ ছিল সারাক্ষণ

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে শিল্পী রোমানা আহমেদ, সাবেক কূটনীতিক শফিউল্লাহ, সাবেক রাষ্ট্রদূত নাসিম ফেরদৌস, অর্থ সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, ইউআইটিএসের উপাচার্য ড. মো. সোলায়মান, বিপিএলের পরিচালক গাজী নাসির উদ্দিন খোকন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হেড অব কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স রাশনা হাসানও ছিলেন।

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেলেও শেষ পর্যন্ত উপস্থিত হতে না পেরে দুঃখ প্রকাশ করে একটি বার্তা পাঠিয়েছেন প্রবীণ চলচ্চিত্র সাংবাদিক ও সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার।

বার্তায় তিনি বলেন, “কবরী অভিনেত্রী হিসাবে দেশ-বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছেন। সেই সঙ্গে একজন সংসদ সদস্য হিসাবেও তিনি জনসেবামূলক কাজে অংশ নিয়েছেন।”

সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের গোলাগুলিতে নিহত সমকাল প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুলের স্মরণ সভায় যোগ দিতে ওই এলাকায় যাওয়ায় এই অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি বলে বার্তায় উল্লেখ করেন তিনি।

কবরীকে ঘিরে ভিড়

বিকাল ৪টার পর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে আসেন কবরী। ধীরে ধীরে তিনি এগিয়ে যান মোড়ক উন্মোচনের জন্য নির্ধারিত স্থানের দিকে। বইমেলার জনস্রোতও এসময় তার পিছু আসছিল।

মোড়ক উন্মোচনের আগে সেখানে যখন আড্ডা চলছিল আসরের মধ‌্যমনি কবরীকে ঘিরে, তখন চারপাশে ভিড় জমে যায়। কেউ কবরীর সঙ্গে ছবি তুলতে চান, কেউ কথা বলতে চান, আবার কেউ দেখতে চান প্রিয় শিল্পীকে।

বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের পর বিপিএলের স্টলে আসেন কবরী; প্রিয় অভিনেত্রীকে কাছে পেয়ে সেলফি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন ভক্তরা

ঢাকার পল্লবীর বাসিন্দা হাবিবুল্লাহ শাহিন তার মেয়ে নাফিসা হাবিবকে অভিনেত্রী কবরীর গল্প শোনাতে শোনাতে আসেন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে।

হাবিবুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কিশোরগঞ্জ শহরে তমালতলা প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় বড় বোনের সঙ্গে প্রথম প্রেক্ষাগৃহে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর রাজ্জাক-কবরীর অসংখ‌্য চলচ্চিত্র দেখেছেন তিনি।

অভিনেত্রী কবরী ছাড়াও রাজনীতিক কবরীও প্রিয় হাবিবুল্লাহর। তার মূল্যায়ন- ‘রাজনীতিতে যতদিন ছিলেন, সৎভাবেই ছিলেন, তাই তো কবরীর প্রতি ভালো লাগা আরও বেড়েছে।”

মিষ্টি মেয়ের সেই হাসি- বলতে বলতে নিজেই হেসে দিলেন হাবিবুল্লাহ। সঙ্গে হেসে ওঠেন তার মেয়েও।

“সেই হাসিটি এখনও রয়েছে,” বলেন প্রৌঢ়ত্বের শেষ সীমানায় থাকা হাবিবুল্লাহ।

মোড়ক উন্মোচনের পর কবরী মেলার বাংলা একাডেমি অংশে বিপিএলের স্টলে যান। সেখানে তাকে ঘিরে ধরে পাঠকদের উপচেপড়া ভিড়। স্টলে বসে মুখে হাসি নিয়েই একে একে অটোগ্রাফ দিতে থাকেন তিনি।

এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস‌্য, সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদও কবরীর বই কিনতে আসেন। অটোগ্রাফ নেন তিনি, কবরীর সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথাও বলেন।

বিপিএলের স্টলে আলাপচারিতায় কবরী ও মওদুদ আহমেদ

মওদুদকে দেখে তার বিয়ের কথা মনে করিয়ে দেন কবরী। পল্লীকবি জসীম উদদীনের মেয়ে হাসনা জসীম উদদীনকে বিয়ে করেন মওদুদ।

কবরী হাসতে হাসতে বলেন, বিয়ের দিন হাসনাকে শাড়িটি তিনিই পরিয়ে দিয়েছিলেন।

ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলোজি অ‌্যান্ড সায়েন্সের শিক্ষার্থী রনি, রিফাত, সারা তাদের শিক্ষক কবরীর বই কিনে নেন।

সারা বলেন, “রংবাজ, সারেং বউ ছবিগুলো যে কতবার দেখেছি তার ইয়ত্তা নেই।”

ছোট্ট নাবিলা এসেছিল মিরপুর থেকে। কবরীর চলচ্চিত্রের গান সে মার মুখে প্রায় শোনে। রুপালী পর্দার সেই মুখকে কাছে থেকে দেখে ভীষণ খুশি সে।

বাবা অরূপ বড়ুয়ার সঙ্গে বই কিনতে আসা মেলায় আসা ছোট্ট নির্ঝরা বড়ুয়া শুভার উচ্ছ্বাস ছিল অন‌্য রকমের। কারণ সে উঠেছে কবরীর কোলে।

কথা বলতে বলতেই শুভা বলে উঠলো, “তিনি (কবরী) আমাকে বলেছেন, আমি খুব দুষ্টু.. আর বলেছে, আমার চাহনি খুব তীক্ষ্ণ।”

 

১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ ছবিতে অভিষেকের পর অর্ধশতকে দুই শতাধ্কি সিনেমায় আলো ছড়িয়েছেন কবরী। শীর্ষ পাঁচ ঢাকাই নায়কের অভিষেক ঘটেছে তার হাত ধরেই।

বই লেখা প্রসঙ্গে কবরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার কিছু অজানা কথা আপনাদের জানানো প্রয়োজন বলে আমি মনে করেছি।”সুতরাংয়ের সেটে প্রথম শটেই চড় খেয়ে কেঁদে ভাসানোর গল্প যেমন বইটিতে রয়েছে, তেমনি আছে কিশোরী মনে প্রথম কারও জন‌্য ‘প্রেম প্রেম অনুভূতি’ হওয়ার কথাও।

ঢাকাই ছবির ইতিহাসে রাজ্জাক-কবরী জুটির আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার রসায়ন আর কবরীর জীবনে বাস্তবের রাজ্জাকও ধরা পড়েছেন এই স্মৃতিকথায়। 

বিপিএলের স্টলে বসে নিজের বইয়ে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন কবরী, সে দৃশ‌্য নিজেদের মোবাইলে ধারণ করেন ভক্তরা।

কবরী লিখেছেন, “এক সাথে কাজ করেছি অনেক ছবিতে- বন্ধুত্ব হবারই কথা, হয়েওছে। কিন্তু রাজ্জাক সাহেব বরাবরই আমাকে হিংসে করেন। আমি করতাম কিনা জানি না। আমি তাকে বন্ধুর পরও আরও এক ধাপ এগিয়েই রেখেছিলাম।”

‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ময়নামতি’, ‘ঢেউয়ের পর ঢেউ’, ‘পরিচয়’, ‘অধিকার’, ‘বেঈমান’, ‘অবাক পৃথিবী’, ‘সোনালী আকাশ’, ‘অনির্বাণ’, ‘দীপ নেভে নাই’সহ অর্ধশতাধিক সিনেমার এই জুটিকে পরে ‘আমাদের সন্তান’ চলচ্চিত্রে বয়স্ক বাবা-মায়ের ভূমিকাতেও দর্শকরা দেখেছেন।

১৯৭৩ সালে ‘রংবাজ’ সিনেমায় দর্শক এক লাস্যময়ী কবরীকে আবিষ্কার করে। সেই চলচ্চিত্রের ‘সে যে কেন এল না, কিছু ভালো লাগে না’ গানটি এখনও বহু দর্শকের বুকে বাজে।

অনেক ভাঙা-গড়ার মধ‌্যে দিয়ে পার করে আসা এই অভিনেত্রী লিখেছেন, “আমার কপালে প্রেমের সুখ কোনোদিন হয়নি। যাক আপদ চুকেছে। প্রেমে পড়ে কার না কার ঘরনী হতাম। তবে যা হবার তা তো হয়েইছে। সবার জীবন কি এক রকম হয়? এই পৃথিবী একটা যুদ্ধক্ষেত্র। যুদ্ধে কেউ জেতে কেউ হারে- মেনে নিতেই হয়। এভাবেই বুঝি জীবন কেটে যায়।”

চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গী বাজারের কিশোরী মিনা পালের স্বপ্ন ছিল- “বড় হয়ে সাদা শাড়ি পরে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে মাস্টারি করবে”। কিন্তু ‘লাইট-অ্যাকশন-কাটের’ পর রাজনীতিতে নেমে জীবনের আরেক চলচ্চিত্রের মুখোমুখি তাকে হতে হয়েছে বিচ্ছেদের মধ‌্য দিয়ে।

‘স্মৃতিটুকু থাক’ ধারণ করেছে কবরীর সেই সময়ের কথাও। এসেছে ভোটের মাঠে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সদস‌্যদের সঙ্গে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা, এক সময় যে পরিবারের বধূ ছিলেন তিনি। সব জয় করেই কবরী নবম সংসদে আওয়ামী লীগের সাংসদ হয়েছিলেন।

২০০৬ সালে মুক্তি পায় কবরীর পরিচালনার প্রথম চলচ্চিত্র ‘আয়না’। সম্প্রতি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি।