ব্রিটিশদের গোলামি করতে ইংরেজি বলতে হবে: প্রশ্ন সংস্কৃতিমন্ত্রীর

কথায় কথায় ইংরেজি ব্যবহারের কঠোর সমালোচনা করেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2017, 05:50 PM
Updated : 23 Feb 2017, 05:50 PM

ব্রিটিশরা দুইশ বছর শাসন করেছে বলে তাদের ‘গোলামি’ করতে ইংরেজি বলতে হবে- এ প্রশ্ন করেছেন তিনি।

রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালা মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ‘সমধারা কবিতা উৎসবে' অংশ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমরা এখন ১০টা শব্দ বললে ৫টাই ইংরেজি বলি। এখন আমরা সুন্দর কিছু দেখলে ‘বাহ’ বলি না, ‘ওয়াও’ বলি। ছোট্ট একটা বাচ্চাকে ‘মিষ্টি’ বলি না, ‘সুইট’ বলি। আমরা ধন্যবাদ দিতে ভুলে গেছি, থ্যাংক ইউ বলি।

“এখন আমরা বিয়ের দাওয়াত দেই ইংরেজিতে। এটি কি সাহেবদের জন্য না বাঙ্গালিদের জন্য? ইংরেজিতে লিখলে সম্মান বাড়ে?”

পরিচিতিফলকে ইংরেজি ব্যবহারের সমালোচনা করে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “জাপান, ফ্রান্স, চীনে ইংরেজিতে না, নিজেদের ভাষায় সাইনবোর্ড লেখা হয়। আমরা বিদেশিরা গিয়ে বুঝব কি না তা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। নিজেরা বুঝলেই হয়।

“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শুনতে কি খারাপ লাগে? কিন্তু এখন হচ্ছে নর্থসাউথ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, ড্যাফোডিল, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার।

“অদ্ভূত লাগে, কোথাও বাংলা নেই! অথচ আমাদের ভাষা আন্দোলন আছে, মুক্তিযুদ্ধ আছে। চুয়াত্তরে বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে গিয়ে বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন। এখনও শেখ হাসিনা জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেন। তাহলে অন্য ভাষা নিয়ে এত মাতামাতি কেন?”

সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, “সরকারি অফিসগুলোতে এখন কেবল বাংলার ব্যবহার হয়। হাই কোর্ট রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু হাই কোর্টের রায় বাংলায় লেখা হয় না।

“সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি দুঃখপ্রকাশ করেছেন দুই দিন আগে, বাংলায় রায় লিখতে পারছেন না এজন্য। এটা তো দুঃখিত হওয়ার মতই, এটা তো লজ্জিত হওয়ার মত বিষয়ই।”

নূর বলেন, “অন্য ভাষার বিপক্ষে আমি নই। কেবল একটি না, একাধিক ভাষা শিখলে আমাদের জানার দিগন্ত প্রসারিত হবে। সব ভাষার প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল, উর্দুর প্রতিও। উর্দুর সাহিত্য অনেক সমৃদ্ধ। অন্য ভাষার প্রতি আমাদের অবহেলা বা বিদ্বেষ নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা আমরা খারাপ করব না।

“ইংরেজি স্কুলে পড়ে কি এমন মহাপণ্ডিত হচ্ছে? হয়ত পাস করে ইংরেজি পড়তে পারে, কিন্তু একজন নির্মলেন্দু গুণ, হেলাল হাফিজ হচ্ছে?

“এটা দাসত্বসুলভ ভাবনা, যেন ইংরেজি না শিখলে মানসম্মান গেল। শিখুক, কিন্তু বাংলা পড়বে না?”

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “একটু বড় হলে নজর চলে যায় আমেরিকায়। ট্রাম্প সাহেবের চড়, থাপ্পড়, গলাধাক্কা খেয়েও থাকতে রাজি। বের করে দিচ্ছে প্রতিদিন, এরপরও ওখানেই যাবে।

“একটু ইংরেজি শিখলেই দেশ ভালো লাগে না। এটা তো আমরা চাইনি। আমরা একটি মানবিক সমাজ চেয়েছি। যেখানে আমরা দেশকে, মানুষকে ভালবাসব।”

তিনি বলেন, “একটা সময় এই স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানো হত। এ মানুষগুলো কারা? কারা প্ল্যাকার্ড ধরে বলেছিল, ‘আফ্রিদি, মেরি মি’।

“এই হীনমন্যতা, নিজেদের ছোট করার প্রবণতা থেকে আমাদের বেরোতে হবে। এখন তো আমাদের খেলোয়াড়রা ভালো করছে। কিন্তু পারি নাই বলে পাকিস্তানকে সমর্থন করতে হবে?”

উগ্রবাদ-জঙ্গিবাদ থেকে সমাজকে রক্ষায় সংস্কৃতি চর্চার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে সংস্কৃতি মন্ত্রী বলেন, “আমরা দানব তৈরি করতে চাই না, মানবিক সমাজ চাই। এজন্য কবিতা সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।

“কবিতা মানুষ হত্যা করে না, মানুষকে উজ্জীবিত করে। এটি আয়নার মত কাজ করে, যার সামনে দাঁড়িয়ে আমরা নিজেদের চিনতে পারি। এই চেহারাটা জরুরি, এই ভিতরের শক্তি আনাটা জরুরি, যা আমাদের হীনমন্যতা দূর করবে।”

সমধারা তৃতীয় কবিতা উৎসবের এই অনুষ্ঠানে কবি নির্মলেন্দু গুণকে ‘সমধারা সাহিত্য পুরস্কার’ দেওয়া হয়েছে।

পুরস্কার গ্রহণের পর নির্মলেন্দু গুণ এ বছর কয়েকটি পুরস্কার পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, “ইদানিং আমার পুরস্কার ভাগ্য ভালো।”

গত বছর ‘সমধারা সাহিত্য পুরস্কার’ পেয়েছিলেন কবি হেলাল হাফিজ।

অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে সাপ্তাহিক সমধারার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি কাইয়ুম নিজামীর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য  মোহিত-উল-আলম, ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ, ভাইস প্রেসিডেন্ট মোশাররফ হোসেন।

দুই বাংলার দুইশ কবি এই আয়োজনে অংশ নিয়েছেন।