গার্মেন্ট পল্লীতে এনজিও অফিস চলবে না: প্রতিমন্ত্রী

আশুলিয়াসহ অন্যান্য পোশাক কারাখানা এলাকায় কোনো এনজিও কার্যালয়ের স্থাপন করা যাবে না বলে জানিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চুন্নু।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2017, 02:06 PM
Updated : 23 Feb 2017, 02:06 PM

বৃহস্পতিবার পোশাক কারখানার মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সরকারের এক সভায় এসব এলাকায় অনিবন্ধিত ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশন অফিস না রাখার সিদ্ধান্তও হয়েছে।

সচিবালয়ে এই বৈঠকের পর তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আশুলিয়া ও গাজীপুর এলাকায় পোশাক কারখানাকে কেন্দ্র করে অনেক অনিবন্ধিত ট্রেড ফেডারেশন, বিভিন্ন এনজিও, যাদের এখানে কোনো কাজ নেই তারাও সেখানে অফিস করে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে শ্রমিকদেরকে বিভ্রান্ত করেন।

“আমরা ঐকমত্যে এসেছি আশুলিয়াসহ বিভিন্ন গার্মেন্ট এলাকায় কোনো রকম আনরেজিস্ট্রার্ড ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশন এবং কোনো এনজিও অফিস থাকবে না।”

তবে রেজিস্ট্রার্ড ট্রেড ইউনিয়নের পাশাপাশি যারা ‘গুড লেবার প্র্যাকটিস’ করছেন তাদের অফিস ওইসব এলাকায় রাখতে সরকারের কোনো আপত্তি নেই বলে চুন্নু জানান।

আশুলিয়ায় গত বছরের শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে বিভিন্ন এনজিওর ইন্ধন ছিল বলে শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ নেতারা দাবি করে আসছিলেন।

প্রতিমন্ত্রীও বলেন, আশুলিয়ায় অপরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা তৈরি করা হয়েছিল। সেই পরিস্থিতি নিয়ে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে সরকারের দূরত্বও সৃষ্টি হয়েছিল।

“সেই দূরত্ব কমানো এবং পোশাকখাতে যেন ক্ষতিকর কিছু হতে না পারে সেজন্য এই খাতের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে গত কয়েক দিন বৈঠক করে শ্রমিক, মালিক ও সরকার যৌথভাবে সমঝোতায় এসেছি।”

আশুলিয়ায় শিল্প মালিকদের মামলায় বেশ কয়েকজন শ্রমিক নেতা গ্রেপ্তার হন।

তাদের বেশিরভাগ জামিনে মুক্ত হয়েছেন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “কয়েকজন থাকতে পারেন জামিন পাননি, আশা করি খুব শিগগিরই মুক্তি পাবেন।”

শ্রমিক নেতা ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো সরকারের পক্ষ থেকে আইনানুগভাবে নিষ্পত্তির চিন্তা চলছে বলেও জানান তিনি।

আশুলিয়ার শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ৪ থেকে ৫ জনের এখনও জামিন হয়নি বলে জানান ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আমিরুল হক আমিন।

নিরীহ কোনো শ্রমিক কিংবা শ্রমিক নেতা গ্রেপ্তার থাকুক, তা মালিক পক্ষও চায় না বলে জানান বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর।

আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের পর যারা ছাঁটাই হয়েছেন, তাদের পাওনা আদায়ে সরকার পদক্ষেপ নেবে বলে জানান চুন্নু।

“শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করা হলে আমরা দায়িত্ব নিয়ে তাদের পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা করব।”

সাময়িকভাবে বরখাস্ত কোনো শ্রমিক যদি চাকরি করতে চান শ্রম আইন অনুযায়ী তাদের চাকরিতে পুনর্বহালের সিদ্ধান্তও এই বৈঠকে হয়েছে বলে জানান তিনি।

আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় দেড় হাজার শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল বলে জানান বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর।

তিনি বলেন, “কিছুদিন আগে আশুলিয়ার কিছু কারখানায় অবৈধভাবে কিছু শ্রমিক কাজ বন্ধ করেছিল। পরিস্থিতি অবনতির দিকে গেলে ফ্যাক্টরি বন্ধ করি। ফ্যাক্টরি খোলার দিন ৯৫ শতাংশ শ্রমিক উপস্থিত ছিল।”

রেজিস্ট্রার্ড ফেডারেশনের অফিসগুলো খুলে দেওয়া হবে বলেও জানান বিজিএমইএ সভাপতি।

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত পোশাক শিল্পকে গতিশীল রাখতে শ্রমিকদের সহযোগিতাও প্রত‌্যাশা করেন তিনি। মালিকরাও সহনশীল হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

“অন্যায়ভাবে কোনো জায়গায় কোনো মালিক যেন শ্রমিকদের কোনো ক্ষতি করতে না পারে এবং কোনো শ্রমিকও যেন কোনো ফ্যাক্টরির কোনো মালিকের ক্ষতিসাধন না করে।”

শ্রমিকদের পক্ষে বৈঠকে অংশ নেওয়া ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আমিন বলেন, “২০২১ সালে পোশাক খাতের রপ্তানি ৫০ বিলিয়ন করার টার্গেট আছে, এর সঙ্গে আমরা শ্রমিক সংগঠনগুলো একমত, আমরা সেখানে সহযোগিতা করতে চাই। সঙ্গে শ্রমিকদের জীবনমানেরও উন্নয়ন চাই।”

জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ ছাড়াও পোশাকখাত সংশ্লিষ্ট শ্রমিক সংগঠনের নেতারাও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।