ফ্লাইওভার পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড বলছে, পথচারীদের ‘সুবিধার জন্যই’ তারা ওই সিঁড়ি বানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু নকশাবহির্ভূত ওই সিঁড়ির কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকির কথা জানিয়ে তা ভেঙে ফেলতে বলেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
ফ্লাইওভারে বাস থামানো বন্ধ এবং সিঁড়ি অপসারণের আরজি জানিয়ে ইতোমধ্যে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেছেন এক আইনজীবী।
যাত্রী ওঠানামার জন্য ফ্লাইওভারের ডেমরা র্যাম্প ও দোলাইরপাড় র্যাম্পে দুটি এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ফ্লাইওভারের ওঠার র্যাম্পে একটি স্টিলের সিঁড়ি বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম রোড থেকে ওঠা র্যাম্পের যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এলাকায় যানবাহনের গতি কমানোর জন্য দেওয়া হয়েছে গতি নিয়ন্ত্রক। টিকাটুলী অংশে সড়ক বিভাজকের একটি অংশ ফাঁকা রাখা হয়েছে যাত্রীদের পারাপারের জন্য। পথচারী পারাপারে ফ্লাইওভারের ওপরে নিরাপত্তাকর্মীরা সংকেত দিয়ে যানবাহন থামিয়ে দিচ্ছেন।
সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে যাত্রীরা ফ্লাইওভারে উঠে বাস ধরেন। আবার অনেকে সায়েদাবাদ থেকে বাস ধরতেও ফ্লাইওভারের সিঁড়ি ব্যবহার করেন। মতিঝিল, টিকাটুলি, হাটখোলা এলাকায় আসা-যাওয়ার জন্য যাত্রীরা নামেন রাজধানী সুপার মার্কেট এলাকায় ।
যাত্রাবাড়ীতে ফ্লাইওভারের ওপরে রাস্তা পার হতে হয় না। কিন্তু সায়েদাবাদ জনপথ মোড়, সায়েদাবাদ টার্মিনাল ও রাজধানী সুপার মার্কেট অংশে ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হন যাত্রীরা।
গুলিস্তান যাওয়ার জন্য ফ্লাইওভারের যাত্রাবাড়ী অংশে উঠেছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আলী আকবর। তার যুক্তি, ফ্লাইওভারের ওপর থেকে বাসে উঠলে ‘সময় কম লাগে’। তবে ফ্লাইওভারের উপর বাসে ওঠানামা যে ঝুঁকিপূর্ণ, সে কথাও তিনি মানছেন।
“নিচ দিয়া গেলে সময় বেশি লাগে। এই জন্য রিস্ক জেনেও ওপরে উঠি।”
শনির আখড়া থেকে এসে টিকাটুলী নামছিলেন সেলিনা বেগম নামের এক গৃহিনী। চলন্ত যানবাহনের সামনে দিয়ে অনেকটা দৌঁড়ে রাস্তা পার হলেন তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের উত্তরে বললেন, “নিচ দিয়া আসার জন্য ভালো গাড়ি নাই। তাছাড়া অনেক যানজট থাকে।”
“আসলে এইখান দিয়া রাস্তা পার হওয়া খুব কঠিন, ঝুঁকিপূর্ণও। কিন্তু সবাইতো আসে। এজন্য আমিও এইখানেই এসে নামি।”
আগে ফ্লাই্ওভারের মাঝখানে যাত্রী কম নামলেও সিঁড়ি বানিয়ে দেওয়ার পর যাত্রীদের নামার প্রবণতা বেড়ে গেছে বলে জানালেন নরসিংদী মেঘালয় লাক্সারি বাসের চালক আবদুল বাতেন।
“ফ্লাইওভারে আগে আমরা গাড়ি থামাইতাম না। আগে সবাই ফ্লাইওভারের গোড়ায় নামত। মাঝেমধ্যে দুইএকজন টিকাটুলী নামত। কিন্তু সিঁড়ি বানানের পরে সবাই ফ্লাইওভারের উপরে নামার চায়। আমরা বাধ্য হইয়া নামাইয়া দেই।”
এভাবে গাড়ি রেখে লোক নামালে যে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে, তা স্বীকার করলেন গুলিস্তান মদনপুর রুটের শ্রাবণ পরিবহনের চালক জহিরুল ইসলাম।
“গাড়ি তো অনেক জোরে চলে। থামাইয়া রাখলে পিছন থোন আরেক গাড়ি আইসা মাইরা দেওয়ার চান্স থাহে।”
সিঁড়ি দেওয়ার পর ফ্লাইওভারে দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে দাবি করেন সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম।
“বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন আইসা নামে আবার ওঠে। আমাদের কাছে প্রায়ই অভিযোগ আসে সেইখানে নামার পর যাত্রীরা ছিনতাইয়ের শিকার হয়। সবচেয়ে বড় কথা এইগুলা দেওয়ার পরে সেইখানে দুর্ঘটনা বাইড়া গেছে। একটা সময় দুর্ঘটনা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এইটা আশঙ্কার বিষয়।”
“এতে যাত্রী ও পথচারীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। ফ্লাইওভারে সবসময় গাড়ি চলে দ্রতগতিতে। এখানে নেমে রাস্তা পারাপারের সময় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দায় কে নেবে?”
তবে এসব সিঁড়ি দেওয়ার কারণে ফ্লাইওভারের ওপর দুর্ঘটনা কমেছে বলে দাবি করেন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের দায়িত্বে থাকা ওরিয়নের প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহজাহান আলী পাটোয়ারি।
“বাধ্য হয়েই আমরা এখানে সিঁড়িগুলো দিয়েছি, যাতে লোকজন চলাচল করতে পারে, সড়ক পার হতে গিয়ে কোনো দুর্ঘটনায় না পড়ে।”
ওরিয়নের প্রকৌশলী সিঁড়ির পক্ষে যুক্তি দেখালেও সেগুলো নকশা বহির্ভূত বলে জানালেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ফরাজী মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন।
তিনি বলেন, “এটা তো একটা দ্রুতগতির সড়ক, কোনো বাস-বে নয়। এখানে কন্টিনিউয়াস পাসিং হবে। ফ্লাইওভারের ওপরে গাড়ি থামানো তো ঠিক না। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা তাদেরকে চিঠি দিয়েছি ভাঙার জন্য। না ভাঙলে আমরা বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেব।”