শহীদ মিনারের মূল বেদীতে উঠে সমালোচনায় খালেদা

ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মূল বেদীতে সর্বোচ্চ ধাপে উঠে সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Feb 2017, 04:49 AM
Updated : 21 Feb 2017, 01:01 PM

এর মধ্য দিয়ে শহীদ মিনারের ‘পবিত্রতা নষ্ট করা হয়েছে’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল।

একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শহীদ বেদীতে ফুল দেন। তারপর ফুল দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।

ঢাকার দুই মেয়র, তিন বাহিনীর প্রধান, পুলিশ প্রধান, কূটনীতিকদের পর ফুল দেয় ক্ষমতাসীন ১৪ দল। সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, অ্যাটর্নি জেনারেলও ফুল দেন প্রথম প্রহরে।

রীতি অনুযায়ী খালি পায়ে দ্বিতীয় ধাপে দাঁড়িয়ে মূল বেদীতে পুষ্পাঞ্জলি রেখে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানান সবাই। রোভার স্কাউট সদস্যরা সেসব পুষ্পস্তবক মূল বেদীতে এনে সাজিয়ে রাখতে থাকেন।

রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শহীদ মিনার সবার জন্য খুলে দেওয়া হয়। এরপর রাত ১টা ২৫ মিনিটে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি নেতৃবৃন্দ শহীদ মিনারের দক্ষিণ দিকের প্রবেশ পথ দিয়ে ফুল নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এগিয়ে যান।

এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোভার স্কাউটের সদস্যরা মানবপ্রাচীর তৈরি করে তাদের শহীদ মিনারের মূল বেদীর কাছে নিয়ে যান। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসন ও দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা শহীদ মিনারের মূল বেদীতে উঠে পড়েন। এ সময় কিছুটা হুড়োহুড়িও হয়।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মাহবুবুর রহমান, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খানও এ সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন। ফুল দিয়ে দক্ষিণ দিকের পথ দিয়ে বের হয়ে যান তারা।

বিএনপি চেয়ারপারসন ও দলটির নেতারা শহীদ মিনারের মূল বেদীতে উঠে পড়ায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন আর্ন্তজান্তিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন এবং যারা নিজেদের জাতীয় নেতা বলে দাবি করে, তাদের কাছ থেকে শহীদ মিনারের অবমাননা কোনোভাবেই কাম্য নয়। শহীদ মিনারে এসে কীভাবে কোথায় ফুল দিতে হবে তা তাদের জেনে আসা উচিৎ।”

গতবছর শহীদ মিনারে খালেদা জিয়ার শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় নেতাকর্মীদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। অবশ্য বিএনপি ওই ঘটনার জন্য  পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের দায়ী করে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শহীদ মিনারের এবারের ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আর মূল বেদীতে ওঠা নিয়ে ‘শাসকদল’ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যেখানে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করার স্থান, সেখানেই বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। আমাদের নেত্রী যখন সেখানে যান, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সদস্যরা ছিলেন, আমরা যেখানে শ্রদ্ধা জানিয়েছি, সেখানে গণমাধ্যমসহ সকলেই ছিলেন, নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখা স্কাউটরাও ছিলেন।

“যারা অভিযোগ তুলছেন, বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, তারা কারা? তারা শাসক দলের বুদ্ধিজীবীরা, তারা এসব কথা বলে একটা বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার চালাচ্ছেস। কেন তারা এটা করছেন তা দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট।”

রিজভী বলেন, “এবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো ছুতা পাচ্ছে না, তাই এখন তারা বিএনপির বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।”