খালেদার কথায় শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানি: হাসিনা

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে ‘পাকিস্তানিদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে’ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানি করছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Feb 2017, 09:22 AM
Updated : 22 Feb 2017, 09:13 AM

সোমবার ‍ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করতে পাকিস্তানের নানা অপপ্রচারের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “পাকিস্তানিদের এই অপপ্রচার আর তার (খালেদা জিয়া) এই বক্তব্যে কোনও সূত্র আছে কি না- আমি জানি না।

“কিন্তু মনে হচ্ছে ওই একই সুরে যেন তিনি কথা বলার চেষ্টা করছেন এবং এটা শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানি করা ও অবমাননা করা ছাড়া আর কিছুই না।”

পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্র এখনো ‘শেষ হয়নি’ এবং কিছুদিন আগে তারা একটি বই প্রকাশ করে ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান। 

একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মিলে তাদের এদেশীয় দোসরদের গণহত্যায় লিপ্ত হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “দুর্ভাগ্য যে, আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি, তারা নতুনভাবে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ওই গণহত্যার ছবিতে মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করেছে বলে ক্যাপশন দিয়ে রিপোর্ট তৈরি করে সব জায়গায় বিলি করার চেষ্টা করছে।

“এখন আমরা স্বাধীন দেশ। অর্থনৈতিকভাবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। বিশ্বে বাংলাদেশ একটি রোল মডেল ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। সেই সময় এ ধরনের অপপ্রচার এখনো তারা করে যাচ্ছে, এটা কারও কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।”

তাই ২৫শে মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস হিসেবে’ গ্রহণ করে আন্তর্জাতিকভাবে এর স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা চালানার ওপর জোর দেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান।

পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের স্বাধিকারের প্রত‌্যাশাকে ১৯৭১ সালে অস্ত্রের মুখে রুদ্ধ করার চেষ্টা করেছিল পশ্চিম পাকিস্তানিরা। সেই চেষ্টায় ২৫ মার্চ মধ্যরাতে ঢাকায় শ্বাপদের হিংস্রতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। 'অপারেশন সার্চলাইট' নামে শুরু হয় তাদের গণহত‌্যা।

শেখ হাসিনা বলেন, “সেই সময় যে জঘন্য ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। দিনের পর দিন হত্যা করেছে। ৩০ লাখ শহীদ জীবন দিয়েছে। দুই লাখ মা-বোন ইজ্জত দিয়েছে। এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য।

“কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমাদের দেশে কোনও কোনও রাজনৈতিক নেতা, আমি নাম ধরেই বলতে চাই, বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া কিছু দিন আগে বলেছিল, ৩০ লাখ শহীদ মৃত্যুবরণ করে নাই, নিহত হয় নাই। এই সংখ্যা নাকি ঠিক না।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এর থেকে লজ্জার আর কী হত পারে! এর থেকে জঘন্য কথা বোধহয় আর কিছু হতে পারে না।”

গণহত্যায় মানুষের মৃত্যুর সেই চিহ্ন সারা বাংলাদেশে রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সেটা নিয়ে প্রশ্ন করা বাঙালি জাতির প্রতি চরম অবমাননা। যে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, তাদের প্রতি চরম অবমাননা ছাড়া আর কিছুই না।”

ভাষার দাবিতে বাঙালির সংগ্রামের ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে ঘোষণা এবং মাতৃভাষা সংরক্ষণে আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিকার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৭ বিশিষ্ট নাগরিক এবার একুশে পদক পেয়েছেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত ও তাদের প্রতিনিধিদের হাতে পদক তুলে দেন।

পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ গঠন ও ভাষা আন্দোলন শুরুর ইতিহাস বর্ণনা করেন।

ভাষা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ছয় দফা আন্দোলন পার হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে উপনীত হওয়ার প্রেক্ষাপটও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুকন‌্যা শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “বাঙালি জাতির যখন যা কিছু অর্জন তখন অনেক ত্যাগ সংগ্রামের মধ্য দিয়েই আমাদের আর্জন করতে হয়। সেই অর্জনগুলি আমাদের ধরে রাখতে হবে। কোনোমতেই কেউ যেন এই অর্জনগুলি নস্যাৎ করতে না পারে, সে বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকতে হবে।”

স্বাধীনতা ও ভাষার সংগ্রামের চেতনা যেন কখনো নস্যাৎ হয়ে না যায় সে বিষয়েও সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “বিজয়ী জাতি হিসেবে কারও কাছে মাথা নত করে চলবো না।”

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরও বক্তব্য দেন।

একুশে পদক পেলেন যারা

ভাষা আন্দোলনের জন‌্য এবার একুশে পদক পেয়েছেন অধ্যাপক ড. শরিফা খাতুন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, গবেষণায় সৈয়দ আকরম হোসেন এবং শিক্ষায় ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন এ পদক পেয়েছেন।

ভাষা ও সাহিত্যে প্রয়াত কবি ওমর আলীর সঙ্গে এবার একুশে পদক পেয়েছেন ছড়াকার সুকুমার বড়ুয়া।

ভাস্কর্যে শিল্পকলায় আবদুল্লাহ খালেদ, চলচ্চিত্রে তানভীর মোকাম্মেল, নাটকে সারা যাকের ও নৃত্যতে শামীম আরা নীপা এ পুরস্কার পেয়েছেন এবার।

সংগীতে একুশে পদক দেওয়া হয়েছে সুষমা দাস, জুলহাস উদ্দিন আহমেদ ও ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম ও উদীচীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ সেলিমকে।

সাংবাদিকতায় এবার এ পদক পেয়েছেন আবুল মোমেন ও স্বদেশ রায়; সমাজসেবায় অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সালের একুশে পদকের জন্য মনোনীতদের নাম ঘোষণা করে। পদক বিজয়ী প্রত্যেকে পেয়েছেন ১৮ ক্যারেট মানের ৩৫ গ্রাম সোনার একটি পদক এবং দুই লাখ টাকা।