আগামী ভোটে ইভিএম নিয়ে সংশয়: ইসি সচিব

নিজেদের তৈরি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন তৈরি শেষ করে সব ধরনের প্রক্রিয়া সেরে একাদশ সংসদ নির্বাচনে তা ব্যবহার করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ী নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Feb 2017, 05:51 PM
Updated : 19 Feb 2017, 06:02 PM

থমকে থাকা ইভিএম নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এক বক্তব‌্যে আলোচনা জেগে ওঠার পর রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নে সংশয় প্রকাশ করেন নির্বাচন পরিচালনাকারী সংস্থাটির সচিব।

নতুন নির্বাচন কমিশন শপথ নেওয়ার পর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সরকার প্রধান শেখ হাসিনা সংসদে বলেন, পরবর্তী অর্থাৎ ২০১৯ সালের নির্বাচন ইভিএমে করার বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।

এর পরপরই প্রতিক্রিয়া আসে বিএনপির কাছ থেকে; যাদের বক্তব‌্য ভোট কারচুপির দুরভিসন্ধি থেকে এই পরিকল্পনা হচ্ছে।

দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি এই অবস্থানে ইভিএমের সর্বশেষ খবরাখবর দিয়ে নিজের কার্যালয়ে রোববার সাংবাদিকদের কৌতূহল মেটানোর প্রয়াস চালান ইসি সচিব।

২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রথম ইভিএম ব্যবহার হয়। এরপর নারায়ণগঞ্জের কয়েকটি ওয়ার্ড, নরসিংদী পৌরসভা ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের পুরো নির্বাচন ইভিএমে হয়েছিল।

২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদায়ের আগে সংসদ নির্বাচনের জন্য ইভিএম প্রস্তুতও রেখে গিয়েছিল এ টি এম শামসুল হুদার কমিশন। তবে কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীঅন কমিশন সে পথে এগোয়নি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির সহায়তায় এ প্রযুক্তি চালু হলেও পাঁচ বছরের মাথায় কারিগরি ত্রুটি নিয়ে ইসি-বুয়েট দ্বন্দ্বে ইভিএম অধ্যায়ের ছেদ পড়ে।

ভোটগ্রহণে আধুনিক এই ব‌্যবস্থার প্রতি পক্ষপাতের প্রকাশ ঘটালেও দুই বছরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো বড় পরিসরের ভোটে তা সম্ভব কি না, প্রশ্ন রাখা হয় আবদুল্লাহর কাছে।

তিনি বলেন, “কয়েক লাখ ইভিএম লাগবে; ইটস নট অ্যা মেটার অব জোক। বহু গবেষণা করতে হবে, বহু পথ বাকি আছে। এত সহজ না। নির্বাচনের আঙ্গিকে মেশিন বানাতে হলে ইন্ড্রাস্টি লাগবে। সেই সক্ষমতা থাকতে হবে। বড় অংকের বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।

“অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যন্ত্রটির ব্যবহার ত্রুটিমুক্ত বলে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। কর্মকর্তা ও ভোটাদেরও ব্যবহার বিধি শেখাতে হবে।”

তিনি জানান, ৪০ হাজার ভোটেকেন্দ্রের তিন লাখেরও বেশি ভোট কক্ষে সমপরিমাণ ইভিএম লাগে। সেই সঙ্গে ঝুঁকি এড়াতে বাড়তি যন্ত্রও রাখতে হয়।

ইসি সচিব বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের নিয়ে এখনও নতুন কমিশনের সঙ্গে তার আলোচনা হয়নি।

স্থানীয় নির্বাচনে ফের ইভিএম চালু করার পক্ষে বলেন তিনি।

ইভিএম নিয়ে টেকনিক্যাল কমিটির প্রতিবেদনের পর ইসি পরিকল্পনা নেবে বলে জানান আবদুল্লাহ।

“পাইলটিং ও টেস্টিং ছাড়া ইভিএম বা প্রযুক্তিটি ব্যবহার করা যাবে না। মেশিন আসার পর পাইলটিং ও টেস্টিং করা হবে।”

প্রযুক্তি নিয়ে সতর্কতার বিষয়ে সচিব বলেন, “বর্তমানে যে নষ্ট ইভিএম রয়েছে, আমরা তেমন কোনো কিছু প্রস্তুত করতে চাই না। আমরা চাই যা দিয়ে কোনো কারসাজি করা যাবে না, ব্যাটারির ব্যাকআপ থাকবে।”

ইভিএম পদ্ধতিতে ছাপানো ব‌্যালট পেপার, বাক্স আ সিল লাগে না। ভোটার একটি যন্ত্রে বোতাম চেপেই তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন এবং গণনা হয় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে। ফলে বিপুল পরিমাণ কাগজের সাশ্রয় হয়।

ইসি সচিব বলেন, “ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে ভোটের দিকে আমাদের যেতেই হবে।

ই-ভোটিংও আসবে এরপর। যে যেখানেই থাকুক, সেখান থেকেই যেন ভোট দিতে পারেন, এই ব্যবস্থার দিকেও আমাদের যেতেই হবে। প্রযুক্তির ব্যবহারকে পাশ কাটানো যাবে না।”

তবে এ প্রযুক্তিতে যাওয়ার জন্য জন‌্য ভোটার, রাজনৈতিক দল সবাইকে এর উপর আস্থাশীল করে তোলাটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন ইসি সচিব।