কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘিরে চার স্তরের নিরাপত্তা

শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘিরে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দিনটিতে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকবে বলে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Feb 2017, 11:07 AM
Updated : 19 Feb 2017, 11:07 AM

রোববার সকালে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “ওই দিন ঘিরে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি নেই। তবে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকবে। পুরো শহীদ মিনার ঘিরে থাকবে চার স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী। অতীতের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তা পরিকল্পনা করা হয়েছে।”

পুলিশ কমিশনার বলেন, “শহীদ মিনার ঘিরে চারটি নিরপত্তা বেষ্টনীর একটি থাকবে বেদী কেন্দ্রীক, একটি থাকবে শহীদ মিনার কেন্দ্রীক, একটি দোয়েল চত্বর, নীলক্ষেত, পলাশী, চানখারপুল এবং আরেকটি অন্য এলাকাগুলো ঘিরে থাকবে।”

শহীদ মিনারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ট্রাফিক বিভাগ তাদের নির্দেশনা দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে শহীদ মিনারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা মৎস্য ভবন থেকে দোয়েল চত্বর হয়ে প্রবেশ করবেন। সাধারণ মানুষ পলাশীর মোড় থেকে প্রবেশ করতে পারবে।

ওইদিনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “শহীদ মিনারের প্রবেশ পথে থাকবে ম্যানুয়াল চেকিং, মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে চেকিং ও সর্বশেষ আর্চওয়ে পার হয়ে শহীদ মিনারে প্রবেশ করতে হবে। চারদিকে থাকবে পুলিশের সতর্ক অবস্থান ও পেট্রোল ব্যবস্থা।

“মৎস্যভবন থেকে নিউমার্কেট এলাকা ও বিশেষ করে দোয়েল চত্বর থেকে পলাশী এলাকার প্রতিটি জায়গা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে, যা কন্ট্রোলরুম থেকে মনিটর করা হবে। সেখান থেকে সার্বক্ষনিকভাবে পুরো এলাকার নিরাপত্তা তথ্য আদান প্রদানের সুযোগ থাকবে। যে যেকোনো পরিস্থিতিতে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনার ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করা হবে। নিরাপত্তায় নজরদারিতে শহীদ মিনারের চারপাশে থাকবে ওয়াচটাওয়ার।”

পুরো এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আট হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। ওই সময়ে কোনো ভাসমান দোকান সেখানে থাকবে না বলেও জানান তিনি।

গত বছর একটি দলের কর্মী সমর্থকরা দোয়েল চত্বর থেকে উল্টোপথে অযাচিতভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পুলিশকে লাঞ্চিত করে শহীদ মিনারে জুতো পায়ে প্রবেশ করেছিল। এই জাতীয় পরিস্থিতি সর্বমহলে নিন্দিত হয়েছিল। এই পরিস্থিতি যেন আর না ঘটে সেজন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করার কথাও বলেন তিনি।

অভিজিৎ হত্যায় জড়িত দুই একজন গ্রেপ্তার বাকি

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “ব্লগার, লেখক অভিজিৎ হত্যার তদন্ত কাঙ্ক্ষিত গতিতে চলছে। এরই মধ্যে মূল অভিযুক্তের দুই একজন পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছেন। বাকি অনেককে চিহ্নিত করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুই একজন গ্রেপ্তারের বাকি আছে। আশা করছি সময় মতো তদন্ত শেষ করতে পারব।”  

আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, “নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় বইমেলা ঘিরে ফেলা হয়েছে। সরেজমিনে বইমেলায় বহুবার গিয়েছি। লেখক, প্রকাশক সবার সঙ্গে কথা বলেছি।”

২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ট্রাফিক নির্দেশনা

এই নির্দেশনা ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টা থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি বেলা ২টা পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে বলে মহানগর পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

আজিমপুর গোরস্থানে যাওয়ার রাস্তাঃ

** নাজিম উদ্দিন সড়ক, বাবুপুরা সড়ক (পুরানো যাদুঘরের সামনের রাস্তা), কলেজ সড়ক (ফজলুল হক হলের পূর্ব পার্শ্বের রাস্তা), এলাকার জনসাধারণ আজিমপুর গোরস্থানে যাওয়ার জন্য দেওয়ান বাজার সড়ক (বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠের পূর্ব পার্শ্বের রাস্তা), কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, টিএসসির মোড়, নীলক্ষেত সড়ক, নিউমার্কেট ক্রসিং, পিলখানা সড়ক হয়ে নিউমার্কেট ১ নম্বর গেইট দিয়ে যাবেন।

** আব্দুল গণি সড়ক, তোপখানা সড়ক এবং শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সরণী (পার্ক এভিনিউ) এর জনসাধারণ পুরাতন হাই কোর্টের সামনের রাস্তা দিয়ে দোয়েল ক্রসিং, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, টিএসসির মোড়, নিউমার্কেট ক্রসিং, পিলখানা সড়ক দিয়ে ১ নম্বর গেইট হয়ে গোরস্থানে যাবেন।

** লালবাগ, আজিমপুর, পলাশী ও চকবাজার এলাকার জনসাধারণ আজিমপুর সড়ক, নিউমার্কেট ক্রসিং, পিলখানা সড়ক, নিউ মার্কেট ১ নম্বর গেইটের পাশ দিয়ে গোরস্থানের নতুন গেইটের ভেতর দিয়ে যাবেন।

** বকশী বাজার সড়ক, চকবাজার, উর্দূ রোড এবং ঢাকেশ্বরী এলাকার জনসাধারণ আজিমপুর সড়ক, নিউমার্কেট ক্রসিং, পিলখানা সড়ক, নিউ মার্কেট ১ নম্বর গেইটের পাশ দিয়ে গোরস্থানের নতুন গেইটের ভিতর দিয়ে যাবেন।

** প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকার জনসাধারণ দোয়েল ক্রসিং, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট ক্রসিং, পিলখানা সড়ক, নিউমার্কেট ১ নম্বর গেইটের পাশ দিয়ে গোরস্থানের নতুন গেটের ভিতর দিয়ে যাবেন।

আজিমপুর গোরস্থান থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাওয়ার রাস্তা

আজিমপুর গোরস্থানের মূল গেইট থেকে (গোরস্থানের দক্ষিণ পার্শ্বে) বের হয়ে আজিমপুর সড়ক, আজিমপুর বেবী আইসক্রিম মোড়, পলাশী ক্রসিং, এসএম হল এবং জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে শহীদ মিনারে যাবেন।

আজিমপুর গোরস্থানে না গিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাওয়ার রাস্তা

** বকশী বাজার, চকবাজার, উর্দূ রোড, ঢাকেশ্বরী সড়ক, নাজিম উদ্দিন সড়ক, বাবুপুরা সড়ক এলাকার জনসাধারণ যারা গোরস্থানে না গিয়ে সরাসরি শহীদ মিনারে যেতে চান তারা পুরাতন রেলওয়ে হাসপাতাল সড়ক, পলাশী ক্রসিং, এসএম হল এবং জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে শহীদ মিনারে যেতে পারবেন।

** আব্দুল গণি সড়ক, তোপখানা সড়ক, শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সরণী (পার্ক এভিনিউ) এলাকার জনসাধারণ গোরস্থানে না গিয়ে শহীদ মিনারে যেতে চাইলে তারা হাই কোর্ট, দোয়েল চত্বর ক্রসিং, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, টিএসসির মোড়, নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি, পলাশী ক্রসিং, এসএম হল এবং জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে শহীদ মিনারে যেতে পারবেন।

** যেসব ছাত্র-ছাত্রী ও জনসাধারণ রোকেয়া হল, সামসুন্নাহার হল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন এলাকা থেকে সরাসরি শহীদ মিনারে যেতে চান তারা নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি, পলাশী ক্রসিং, এসএম হল এবং জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে শহীদ মিনারে যেতে পারবেন।

যানবাহন চলাচল সম্পর্কিত নির্দেশাবলী

পুলিশের নির্দেশনায় থাকা রাস্তা দিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টা থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি বেলা ২টা পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।

গোরস্থান এবং শহীদ মিনারে যারা শ্রদ্ধার্ঘ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে যাবেন তারা অন্যদের অসুবিধার কথা ভেবে রাস্তায় বসা বা দাঁড়ানো থেকে বিরত থাকবেন। সবার চলাচলের সুবিধার জন্য উপরে বর্ণিত রাস্তায় কোনো প্রকার প্যান্ডেল তৈরি না করার জন্য অনুরোধ করা হলো বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।