শহীদ মিনারের পাশে জাদুঘর নির্মাণের অগ্রগতি জানতে চায় হাই কোর্ট

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে একটি পাঠাগারসহ ভাষা জাদুঘর নির্মাণের আদেশ বাস্তবায়নে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে- তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Feb 2017, 10:23 AM
Updated : 19 Feb 2017, 10:31 AM

ছয় মাসের মধ্যে সংস্কৃতি সচিবকে হলফনামা আকারে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

জাদুঘর নির্মাণের পাশাপাশি সেখানে সার্বক্ষণিক গাইড নিয়োগ, ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস সন্নিবেশন করে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ব্রুশিয়ার তৈরির বিষয়ে পদক্ষেপের কথাও ওই প্রতিবেদনে থাকতে হবে।

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের এক সম্পূরক আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেয়।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মর্যাদা রক্ষায় ২০১০ সালে আট দফা নির্দেশনা দিয়েছিল হাই কোর্ট। এসব নির্দেশনার আংশিক বাস্তবায়ন বা বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত বুধবার হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে হাই কোর্টে আবেদনটি করেন করেন মনজিল মোরসেদ।

আবেদনের শুনানি নিয়ে যে সব নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয় আদালত।

জনস্বার্থে এ সংগঠনের করা একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতেই ২০১০ সালের আগস্টে শহীদ মিনারের ‘মর্যাদা ও পবিত্রতা’ এবং ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি রক্ষায় আগের রায়টি এসেছিল।

বিচারপতি মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও বিচারপতি নাইমা হায়দারের বেঞ্চ ওই রায়ের সঙ্গে সরকারকে আট দফা নির্দেশনা দেয়।

সম্পূরক আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মনজিল মোরসেদ বলেন, কিছু নির্দেশনা আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। কিছু নির্দেশনার কিছুই এখনও হয়নি।

নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় এর আগে ২০১২ সালে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। তখন সংস্কৃতি সচিব আদালতে হাজির হয়ে এর ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন।

এরপরও আদালতের রায় সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ায় এই সম্পূরক আবেদন করা হয় বলে মনজিল মোরসেন জানান।

সেই আট নির্দেশনা

১. কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্ধারিত এলাকায় সার্বক্ষণিক পাহারার ব্যবস্থা করে ওই এলাকায় কোনো ভবঘুরে যাতে ঘোরাফেরা করতে না পারে, সে ব‌্যবস্থা নিতে হবে। ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’ যাতে চলতে না পারে, সেজন‌্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

২. শহীদ মিনারের মূল বেদীতে কোনো ধরনের মিটিং, মিছিল, পদচারণা, আমরণ অনশন করা থেকে বিরত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে মূল বেদীতে ফেব্রুয়ারি মাসে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চলতে এবং ভাষা সৈনিকসহ জাতীয় ব্যক্তিত্বদের মরদেহে সর্বস্তরের জনগণের সম্মান প্রদর্শনের জন্য শহীদ মিনারের মূল বেদী ব্যবহার বা বিশেষ দিনে ফুল দিতে কোনো বাধা থাকবে না। মূল বেদীর পাদদেশে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাতেও কোনো নিষেধ থাকবে না। শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষায় কমপক্ষে তিনজন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেবে পূর্ত মন্ত্রণালয়। আর ঢাকা সিটি করপোরেশন তিনজন পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ দেবে।

৩. ভাষা আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের সবাইকে মরণোত্তর জাতীয় পদক এবং জীবিতদের জাতীয় পদক দেওয়ার ব্যবস্থা নেবে সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ভাষা শহীদদের ছবি সম্বলিত সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করে বোর্ড বা ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করে প্রদর্শনের ব‌্যবস্থা করবে।

৪. ভাষা সৈনিকদের মধ‌্যে জীবিত কেউ যদি সরকারের কাছে আবেদন করে, তাহলে তাদের ‘যথাযথ আর্থিক সাহায্য এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা’ সরকারকে করতে হবে।

৫. সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব ভাষা সৈনিকদের প্রকৃত তালিকা তৈরির জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে

একটি এবং জেলায় জেলায় ডিসিদের মাধ্যমে কমিটি গঠনের ব‌্যবস্থা করবেন। কমিটির সদস্য হবেন ভাষা সৈনিক, কবি, সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ ও মুক্তিযোদ্ধারা। ওই তালিকা যাচাই বাছাই করে গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে।

৬. কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে একটি লাইব্রেরিসহ ভাষা জাদুঘর নির্মাণ করতে হবে। সেখানে সার্বক্ষণিক গাইড থাকবে। ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে প্রকৃত ইতিহাস (সংক্ষিপ্ত তথ্যাবলি) সন্নিবেশিত করে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ব্রুশিয়ার তৈরি করে জাদুঘরে রাখতে হবে, যাতে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জানতে পারেন। পূর্ত মন্ত্রণালয়কে ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ‌্যে জাদুঘরের নির্মাণ কাজ শেষ করতে হবে।

৭. জীবিত ভাষা সৈনিকদের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করতে হবে এবং সরকারের সাধ্যমত সব রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা তাদের দিতে হবে।

৮. বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ ও সংরক্ষণ করতে হবে।