ইউনূসের জন্য নিয়মিত থ্রেট করত যুক্তরাষ্ট্র: হাসিনা

পদ্মা সেতু ‘ষড়যন্ত্রে’ মুহাম্মদ ইউনূস নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও তার জন‌্য যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এ প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধের হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সুমন মাহবুব মিউনিখ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2017, 06:42 PM
Updated : 24 Feb 2019, 09:11 AM

তিনি বলেছেন, তার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কেও ‘ভয় দেখানো’ হয়েছিল; বলা হয়েছিল ইউনূসকে গ্রামীণ ব‌্যাংকের এমডি পদ থেকে সরালে পদ্মা প্রকল্পে বিশ্ব ব‌্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ ছাড়াও ‘অসুবিধা হবে’।

মিউনিখে শুক্রবার জার্মানি আওয়ামী লীগের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার এ মন্তব‌্য আসে।

তিনি বলেন, “আমেরিকার অ্যাম্বাসেডর আমার অফিসে এসে এসে সব সময় থ্রেট করত- ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ থেকে সরালে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ হয়ে যাবে।

“অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি ব্লেক (রবার্ট ব্লেক) এল… ওই একই কথা। হিলারি ক্লিনটন আমাকে ফোন করল। সেখানেও একই কথা। এমনকি আমার ছেলে জয়কে তিনবার স্টেট ডিপার্টমেন্টে ডেকে নিয়ে গেল। ওকে বলল, ‘তোমাদের অসুবিধা হবে। হিলারি এটা সহজভাবে নেবে না। তোমার মাকে বোঝাও’।”

২০১২ সালের ওই সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন হিলারি ক্লিনটন

পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নে ২০১১ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে বিশ্ব ব‌্যাংক। একই বছর বয়সসীমা অতিক্রান্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে গ্রামীণ ব‌্যাংকের ব‌্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদ থেকে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব‌্যাংক। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েও হেরে যান তিনি।

গ্রামীণ ব‌্যাংকের এমডি পদ নিয়ে ইউনূসের ‘নানা তৎপরতার’ মধ‌্যে ২০১১ সালেই পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে অর্থায়ন স্থগিত করে বিশ্ব ব‌্যাংক। তাদের শর্ত অনুযায়ী সৈয়দ আবুল হোসেন যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ছাড়তে বাধ‌্য হন, গ্রেপ্তার করা হয় একজন সচিবসহ সাত সরকারি কর্মকর্তাকে।

বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েনের এক পর্যায়ে বিশ্ব ব‌্যাংককে ‘না’ করে দিয়ে নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণে হাত দেয় বাংলাদেশ সরকার।

সম্প্রতি কানাডার একটি আদালতের রায়ে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ার কথা প্রকাশের পর নতুন করে আলোচনায় আসেন ইউনূস।

এই রায় প্রকাশের পর তার শাস্তির দাবিতে সরব হন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-সাংসদরা। ‘দুর্নীতির মিথ্যা  গল্প’ বানানোর নেপথ্যে ‘প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের’ খুঁজে বের করতে হাই কোর্ট একটি রুল জারি করে।

এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার ইউনূস সেন্টারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, মুহাম্মদ ইউনূস পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির সম্ভাবনা বিষয়ে প্রকাশ্যে বা ব্যক্তিগতভাবে কখনো কারো কাছে কোনো বিবৃতি দেননি।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “একটা লোক নোবেল প্রাইজ পেল। এতো সম্মান পাবার পরও একটা ব্যাংকের এমডি থাকার জন্য এত লালায়িত কেন?”

ব্যাংক আইনে ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে না রাখার বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “উনার (ইউনূস) বয়স ৭০। এমডির পদও ছাড়বেন না। এজন্য লবিংও করে বেড়াত… সাথে এক সম্পাদক জুটল।”

সরকার ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ‘একেবারে সরাতে চায়নি’ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা উপদেষ্টার পদ দিতে চেয়েছিলাম। ড. কামাল (কামাল হোসেন) তাকে বুদ্ধি দিল মামলা করতে।

“এই মামলায় হেরে যত রাগ পড়ল আমার উপর, আর পদ্মা সেতুর উপর।”

কানাডার আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আল্লাহর কাছে হাজার শোকর… যে মানুষগুলোর ওপর দিয়ে জুলুম গেছে, তারা তো আর ফিরে পাবে না।

“সে মানুষগুলোর যন্ত্রণা আমরা তো জানি। আমার ছেলে-মেয়েরা, আমার বোন ভোগ করেছে। আমাদের মন্ত্রী, আমাদের উপদেষ্টা মশিউর রহমান সাহেব, সচিবকে তো খামোখা জেলে রাখল।”