বিভিন্ন সময়ে মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে আসা ইউনূস সেন্টার বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ইউনূসের ‘কর ফাঁকি’ ও ‘অবৈধভাবে বিদেশে অর্থ পাঠানো’ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদেরও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
গত মাসে সুইজারল্যান্ড ঘুরে আসার পর সংসদে এক বক্তব্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ আটকানোর জন্য মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়ী করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাং কের অর্থায়ন আটকেছিলেন নোবেলজয়ী বাংলাদেশি মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাতে বাংলাদেশের এক সম্পাদকেরও ভূমিকা ছিল।
এ বিষয়ে আলোচনার মধ্যেই গত শুক্রবার কানাডার একটি আদালতে সেদেশের একটি কোম্পানির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের এই প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রে সম্পৃক্ততার অভিযোগের মামলার রায় প্রকাশ হয়।
বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগ নাকচ করে রায়ে বলা হয়, মামলায় প্রমাণ হিসেবে যেগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলো ‘অনুমানভিত্তিক, গাল-গল্প ও গুজবের বেশি কিছু নয়’।
এ প্রেক্ষাপটে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতিতে বলা হয়, “গত কয়েক দিন ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তার পুত্র প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, কয়েকজন মন্ত্রী ও বেশ কয়েকজন সাংসদসহ দেশের শীর্ষ আইন প্রণেতারা ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে, সংসদের ফ্লোরে দাঁড়িয়ে, সংবাদ সম্মেলন করে এবং বিভিন্ন নীতি-নির্ধারণী বৈঠকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ সৃষ্টির নেপথ্যে থাকার জন্য নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে কঠোরভাবে অভিযুক্ত করে কটূ ভাষায় বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে আসছেন।
“প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির সম্ভাবনা বিষয়ে প্রকাশ্যে বা ব্যক্তিগতভাবে কখনো কারো কাছে কোনো বিবৃতি দেননি। আমরা প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে এই ভিত্তিহীন অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ইউনূস পদ্মা সেতু প্রকল্পের একজন সমর্থক এবং ২০১১ সাল থেকে তিনি এই অবস্থান জানিয়ে আসছেন বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া কয়েকটি পত্রিকায় সূত্র উল্লেখ না করে ইউনূসকে এনবিআর’র ৬৯ লাখ টাকা জরিমানা করার খবর প্রকাশ হয়েছে জানিয়ে ইউনূস সেন্টার বলছে, এই খবর সত্য নয়।
“প্রফেসর ইউনূসের কাছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কোনো অনাদায়ী অর্থের দাবি নেই। আমরা বিভিন্ন সময়ে এ মর্মে জানিয়েছি যে, প্রফেসর ইউনূস তার সকল কর পুরোপুরি ও সময়মতো পরিশোধ করে থাকেন। তার আয় ও কর সংক্রান্ত সকল তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে আছে।
“তিনি তার আইনগত অধিকার বলে সাম্প্রতিক কিছু কর দাবি সম্পর্কে, যা তার নিকট অন্যায্য মনে হয়েছে, আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। বিষয়টি এখনো আদালতে বিচারাধীন এবং এ বিষয়ে আদালতের যে কোনো সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নেবেন।”
এর বাইরে গ্রামীণ ট্রাস্টের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাঠানো নিয়ে একটি অভিযোগ উঠেছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “গ্রামীণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করা হয় অন্যান্য দেশে ক্ষুদ্রঋণ পদ্ধতি রেপ্লিকেশনে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামীণ ট্রাস্ট ১৯৯৬-৯৭ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ইউএসএআইডি ও নেদারল্যান্ডসসহ কয়েকটি সাহায্য সংস্থা থেকে ডোনার ফান্ড বাবদ প্রাপ্ত ৪৭ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা সমপরিমাণ অর্থ ৩৮টি দেশে বিভিন্ন ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পে সহায়তা বাবদ পাঠিয়েছে। প্রতিবেদনে দাবী করা হয়েছে যে, এই স্থানান্তরের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন সংক্রান্ত কোন তথ্য আয়কর ফাইলে নেই। এতে এই ধারণার সৃষ্টি হতে পারে যে, গ্রামীণ ট্রাস্ট বাংলাদেশকে দেয়া সহায়তার অর্থ বিদেশে স্থানান্তর করছে। বিষয়টি তা নয়।
“ডোনাররা গ্রামীণ ট্রাস্টকে এই অর্থ শুধুমাত্র ওই সকল দেশে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি গড়ে তোলার উদ্দেশ্যেই পাঠিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট অন্য সকল কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে ওই দেশগুলোর ওই সকল প্রকল্পে অর্থ প্রেরণের সকল আইনগত অনুমোদন এক্ষেত্রে গ্রহণ করা হয়েছে।”