তদন্তে প্রমাণিত হলে গণিত পরীক্ষা বাতিল: নাহিদ

তদন্তে এসএসসির ঢাকা বোর্ডের গণিত (আবশ্যিক) বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পেলে পরীক্ষাটি বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

শহীদুল ইসলাম, জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2017, 12:57 PM
Updated : 13 Feb 2017, 02:33 PM

রোববার অনুষ্ঠিত ওই পরীক্ষার আগেই হোয়াটসঅ‌্যাপে পাওয়া প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর তা নিয়ে ব‌্যাপক আলোচনা চলছে।

সোমবার সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যদি দেখা যায় যে আগেই (গণিতের) প্রশ্ন আউট হয়ে গিয়েছিল এবং তার ফলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অথবা কেউ লাভবান হয়েছে, তাহলে নিশ্চয়ই আমরা গণিতের পরীক্ষা বাতিলের বিষয়ে ভাবব।”

এটা নিশ্চিত হতে তদন্ত করার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “কমিটি আমাদের করাই আছে। আমরা বিভিন্নভাবে বিষয়টি তদন্ত করছি।”

বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ‌্যে অনেকে ভুয়া প্রশ্ন তৈরি করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ‌্যমে ছড়িয়ে দেয় বলে দাবি করেন নাহিদ।

“শিক্ষকরা ভুয়া প্রশ্ন করলে সেখান থেকে কিছু কমন পড়ে। ৫ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ভুয়া প্রশ্ন বিক্রি হয়।”

শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, আগের রাতে গণিতের যে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল তা মূল প্রশ্নের সঙ্গে মেলেনি।

তবে পরীক্ষা শুরুর ৪০ মিনিট আগে গণিতের প্রশ্ন পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে চলে আসে বলে স্বীকার করেন তিনি।

পরীক্ষার্থী সেজে যোগাযোগ করে মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আগের রাতেই প্রশ্নপত্র পেয়েছিলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক।  

রাতে পাওয়া সৃজনশীল প্রশ্নপত্র এবং সকালে পাওয়া এমসিকিউ প্রশ্ন মূল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়।

এই পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নই ফাঁস হয়েছে

নাহিদ বলেন, “৩০ থেকে ৪০ মিনিট আগে ফেইসবুকে যখন প্রশ্ন এসেছে তখন কিন্তু প্রশ্ন আর আমাদের কাছে নেই। দুই ঘণ্টা আগে প্রশ্ন কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে হয়। তারা প্রস্তুতি নেবে, ভাগ করবে, রুমে রুমে দেবে। দূরের কেন্দ্রে আরও আগে প্রশ্ন দেওয়া হয়।

“৪০ মিনিট আগে যখন প্রশ্ন আউট হয় তখন তা শিক্ষকদের হাতে (প্রশ্ন) থাকে। শিক্ষকরা আমাদের বড় সম্পদ। কিছু যদি শিক্ষক এসবের (প্রশ্ন ফাঁস) সঙ্গে ইনভলব হয়ে যায়, তাহলে আমরা যাব কোথায়?”

গণিত পরীক্ষার প্রশ্ন আগের রাতেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে পাওয়ার কথা জানালে নাহিদ বলেন, “এর আগে (পরীক্ষা শুরুর ৪০ মিনিট) অন্য কোথায় প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে।”

এক্ষেত্রে অভিভাবকদেরও দায় আছে বলে মনে করেন নাহিদ।

“যেসব অভিভাবক সন্তানদের এসব প্রশ্ন কিনে দিতে আগ্রহী তাদের নৈতিকতা কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে? তারা শিক্ষকের মর্যাদাও নষ্ট করছেন, অন্যদিকে লেখাপড়ারও সর্বনাশ হচ্ছে।”

নাহিদ বলেন, “আমাদের দেশে প্রশ্নপত্র ফাঁস বহুকালের পুরনো সংস্কৃতি। আগে এত মিডিয়া ছিল না, ফেইসবুক ছিল না, অনলাইন পত্রিকা ছিল না। মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ ছিল ….।”

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “আমাদের ধারণা ট্রেজারি থেকে প্রশ্ন বের করে কেউ ওই প্রশ্ন বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছিল।”

বিজি প্রেসে ছাপা হওয়ার পর পরীক্ষা শুরুর ১৫ থেকে ২০ দিন আগে সিল করা প্রশ্ন পাঠানো হয় বিভিন্ন জেলার ডিসি অফিসে, রাখা হয় সেখানকার ট্রেজারিতে।

ডিসি অফিসের ট্রেজারি থেকে পরীক্ষা শুরুর তিন দিন আগে প্রশ্ন যায় প্রতি উপজেলার থানায়। থানা থেকে পরীক্ষার দিন সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রশ্ন পাঠানো হয়। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে সিল করা প্রশ্নের ফাইল খুলতে হয়।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ

সরকারি ছাপখানা বিজি প্রেসের একটি সিন্ডিকেট প্রশ্নপত্র ফাঁস করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে বলে দাবি করেন শিক্ষামন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমরা সেখানে হাত দেওয়ার চেষ্টা করলাম … আইনশৃঙ্খলা কমিটি আছে, সবাই মিলে বিজি প্রেসকে… এখন সেখান থেকে প্রশ্ন আউট হয় না।”

বিজি প্রেস থেকে প্রশ্ন ফাঁস না হলেও দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সারাদেশে প্রশ্নপত্র সরবরাহে কিছুটা ঝুঁকি দেখছেন শিক্ষামন্ত্রী।

“প্রশ্ন পাঠাই সেটাও রিস্ক। যেখানে রাখি দুই মাস ধরে প্রশ্ন রাখা হয়…।”

প্রশ্ন ফাঁসরোধে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমরা উদ্বিগ্ন, হতাশার মধ্যেও আছি। এটা (প্রশ্ন ফাঁসকারীদের) খুঁজে বের করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ চালাচ্ছি।

“সত্যি সত্যি কোথাও প্রশ্ন ফাঁসের বিষয় যখনই পাই, পরীক্ষার আগে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি প্রমাণ হলে আমরা পরীক্ষা বন্ধ করে দেব। পরীক্ষার পরেও প্রমাণ পেলে আমরা সেই পরীক্ষা রাখব না।”

প্রশ্ন ফাঁসরোধে আরও কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে জানিয়ে নাহিদ বলেন, কারণ অন্য কোথায় যাওয়ার জায়গা নাই। যেভাবেই হোক এগুলো বন্ধ করতে হবে। শিক্ষকদের মাধ্যমে যদি আউট হয়ে যায় আমরা যাব কোথায়?

“শিক্ষকদের যদি নৈতিকতা না থাকে কীভাবে পরীক্ষা নেব আমরা?  তাদের খুঁজে বের করতে হবে। এসব পথ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিনিয়ত ফাঁক-ফোকর বের হচ্ছে সেসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেব।”