বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের তৈরি ‘ন্যানো স্যাটেলাইট’ যাবে মহাকাশে

জাপানে অধ্যয়নরত বাংলাদেশের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তৈরি করা  ‘ন্যানো স্যাটেলাইট’ মহাকাশে উৎক্ষেপণের জন্য জাপান  অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2017, 05:41 PM
Updated : 8 Feb 2017, 05:41 PM

বুধবার দুপুরে জাপানের কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলোজিতে (কেআইটি) স্যাটেলাইটটি হস্তান্তর অনুষ্ঠান ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাখালী ক্যাম্পাসে সরাসরি সম্প্রচার করা হয় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে।

সেটি হস্তান্তর করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ সাদ আন্দালিব এবং কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলোজির প্রেসিডেন্ট ইউজি অই। এ সময় সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন কিউটেক ল্যাবরেটরি অব স্পেসক্রাফট এনভায়রনমেন্ট ইন্টারকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরিচালক মেংগু চো, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. খলিলুর রহমান এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী, যারা বর্তমানে কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলোজিতে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত ।

‘ন্যানো স্যাটেলাইটটি’ জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির মাধ্যমে মার্চ মাসে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হবে।

অনুষ্ঠানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈয়দ সাদ আন্দালিব বলেন, “ন্যানো স্যাটেলাইটের মতো প্রযুক্তি কীভাবে বানাতে হয় তা শিক্ষার্থীরা শিখে নিয়েছে এবং আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে যে ইস্যুগুলো আছে সেগুলো দিয়ে শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন স্যাটেলাইট তৈরি করতে পারবে।

“আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, এই প্রযুক্তিটা শিখে নেওয়া, কেননা পরবর্তীতে যেন আমাদের শিক্ষার্থীরা নিজেরাই স্যাটেলাইটের ডিজাইন থেকে শুরু করে সামগ্রিক কাজটা নিজেরাই করতে পারে। সেটাই আমরা শুরু করলাম।”

ন্যানো স্যাটেলাইট প্রকল্পের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. খলিলুর রহমান বলেন, “ন্যানো স্যাটেলাইটটির মাধ্যমে আমাদের তৈরি প্রযুক্তি স্থানান্তর হচ্ছে, এতে জাতি হিসেবে আমরা এগিয়ে গেলাম।”

গত বছরের জুন মাসে ন্যানো স্যাটেলাইট নির্মাণ ও মহাকাশে তা উৎক্ষেপণের জন্য জাপানের ইনস্টিটিউট অব টেকনোলোজির সঙ্গে চুক্তি করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। ন্যানো স্যাটেলাইটটির নকশা তৈরি থেকে শুরু করে এর চূড়ান্ত কাঠামো তৈরির কাজ করেছেন ব্র্যাক বিশ্বদ্যিালয়ের তিন শিক্ষার্থী রায়হানা শামস ইসলাম, আবদুল্লা হিল কাফি ও মাইসুন ইবনে মানোয়ার।

মাইুসুন ইবনে মানোয়ার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “প্রথমে আমরা স্যাটেলাইট তৈরির কাজটি জানতাম না। যখন জানতে পারি, তখন মনে হয় কাজটি আমাদের আয়ত্ত্বের বাইরে নয়। ২০১৪ সাল থেকে আমরা কাজটি শুরু করি। কাজটি করতে কিউটেকের সিনিয়রদের গাইডলাইন পেয়েছি।”

স্যাটেলাইটটি থেকে মানসম্মত ছবি নেওয়া, জাতীয় সঙ্গীত সম্প্রচার, মহাকাশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ, প্রতি মুহূর্তে স্যাটেলাইটটির অবস্থান মনিটর করার উদ্দেশ্য সামনে রেখেই এ কাজটি তারা করেছেন বলে জানান মাইসুন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ন্যানো স্যাটেলাইটটি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৪০০ কিলোমিটার উপরে অবস্থান করবে এবং এটি পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণ করতে ৯০ মিনিট সময় লাগবে। এটি ১৬ বার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করবে আর বাংলাদেশকে প্রদক্ষিণ করবে ৪ থেকে ৫ বার।

জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির মাধ্যমে ন্যানো স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের কাজ হলেও ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণের জন্য গ্রাউন্ড কন্ট্রোল সেন্টার হচ্ছে বাংলাদেশেই। স্টেশন তৈরির কাজটি করবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক দল শিক্ষার্থী।

ঢাকায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাজাহান মাহমুদ, জাপান দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি তোশিয়ুকি নোগুচি, স্পারসো’র সদস্য ড. হাফিজুর রহমান, বুয়েটের কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. কায়কোবাদ।