মঙ্গল শোভাযাত্রার বিশ্বস্বীকৃতিতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আনন্দযাত্রা

ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় মঙ্গল শোভাযাত্রার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি উদযাপন করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2017, 02:48 PM
Updated : 21 Jan 2017, 02:48 PM

শনিবার বিকালে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ পর্যন্ত করা হয় এই আনন্দযাত্রা।

প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে চারুকলা অনুষদ আয়োজিত এই মঙ্গল শোভাযাত্রার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি উদযাপনে এরপর চারুকলা প্রাঙ্গনেই বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা, যাত্রা খেলা, বম নৃত্য ও লোকজ নৃত্যের আয়োজন করে মন্ত্রণালয়।

২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় ইউনেস্কোর ‘ইন্টারগভার্নমেন্টাল কমিটি ফর দ্য সেইফগার্ডিং অফ দ্য ইনটেজিবল কালচারাল হেরিটেজ’ এর ১১তম অধিবেশনে চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা ‘নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক’ ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর নানা আনন্দ-আয়োজনে এই স্বীকৃতি উদযাপন চলছে সংস্কৃতি অঙ্গনে।

বিকাল ৩টায় শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গন থেকে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রার খুদে সংস্করণ। বাঘ, পাখি, হরিণের পাশাপাশি শাপলা, কাগজের চরকি, বিশাকৃতির হাতপাখাসহ নানা উপকরণে ভরপুর ছিল এ আয়োজন। মঙ্গল শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে এসে শেষ হয় এই শোভাযাত্রা।

এ শোভাযাত্রা শেষে চারুকলার বকুলতলায় বসে আলোচনা সভা।

সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ আর মৌলবাদের বিরুদ্ধে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ‘অনন্য হাতিয়ার’ হিসেবে উল্লেখ করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী।

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “পাকিস্তান আমল থেকেই নববর্ষ উদযাপন আন্দোলনের প্রেরণা হিসাবে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এখন জঙ্গিবাদের বিস্তার দেখছি, হলি আর্টিজানের হামলায় আমাদের তরুণদের সম্পৃক্ততা দেখছি। এই তরুণদের বিপথগামিতা রুখতে তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।”

তিনি জানান, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের বাউল গান, জামদানি বুনন শিল্প ইউনেস্কোর ‘নির্বস্তুক’ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। আরও বেশকিছু সাংস্কৃতিক উপাদান স্বীকৃতিপ্রাপ্তির জন্য আবেদন করা হয়েছে।

সংস্কৃতিসচিব আক্তারী মমতাজের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ও চারুকলা অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন শেখ আফজাল হোসেন।

অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “স্বৈর সরকারের আমলে কথা বলারও স্বাধীনতা ছিল না। সেই সময় আমাদের তরুণরা সৃজনশীলতাকে ব্যবহার করে নিজেদের কথা বলেছেন। তখন এই মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে তারা সত্য প্রকাশের চেষ্টা করেছে। তাদের সেই সাহসী পদক্ষেপের কারণেই আজকের এই স্বীকৃতি।”

আলোচনা পর্ব শেষে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এ পর্বের শুরুতেই দীপা খন্দকারের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করে দিব্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের নৃত্যশিল্পীরা। তারা ‘মঙ্গল হোক এই শতকে মঙ্গল সবার...’ গানের সঙ্গে মঙ্গল নৃত্য পরিবেশন করেন, যার সঙ্গে ছিলো মঙ্গল শোভাযাত্রায় ব্যবহৃত বিভিন্ন উপাদানের উপস্থাপনা।

দোতারা শিল্পীদের সমবেত বাদন পরিবেশিত হয় নির্মল কুমার দাসের পরিচালনায়। তাদের দোতারায় উঠে ‘লোকে বলে বলেরে ঘর বাড়ি বালা না আমার’, ‘সোনার বান্দাইলেনও’সহ আরও কয়েকটি লোকজ গানের সুর।

উপস্থিত দর্শকদের আনন্দ দেয় ঢাক-ঢোলের লড়াই ও ঢাকী নৃত্য।  কিশোরগঞ্জের ওসমান লাঠিয়াল ও তার দলের লাঠিখেলার মুগ্ধতার রেশ কাটতে না কাটতেই মঞ্চে কুদ্দুস বয়াতী। তিনি গেয়ে শোনান ‘পাগলা ঘোড়া’, ‘আমার যমুনার জল দেখতে কালো’সহ বেশ কয়েকটি গান।

এরপর শিল্পকলার রেপার্টরি যাত্রাদল মঞ্চস্থ করে যাত্রা ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’র চুম্বক অংশ। অন্তর দেওয়ানের পরিচালনায় রাঙ্গামাটির বম সম্প্রদায়ের শিল্পীদের পরিবেশনায় ছিলো বাঁশ নৃত্য। অনিক বসুর পরিচালনায় নৃত্যদল স্পন্দন ‘আইলো আইলো রে রঙে ভরা বৈশাখ আমার আইলো রে’ গান এবং পহেলা বৈশাখের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ঢাক-ঢোলের সুরের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে।