নগরে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে গ্রামীণ ঐতিহ্যকে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরার প্রত্যয় ধ্বনিত হল ‘রসের মেলা’য়।
অন্যদিকে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপনী পর্ব ছাড়াও আজিজুল ইসলামের বাঁশি-সন্ধ্যায় জমজমাট ছিল ছুটির দিনের সাংস্কৃতিক অঙ্গন।
শীতের সকালে ‘রসের মেলা’
মাঘের সকালে রাজধানীর চারুকলা অনুষদে বসেছিল ‘রসের মেলা’। ‘রঙ্গে ভরা বঙ্গ’ সংগঠনের আয়োজনে চারুকলার বকুলতলায় মেলা শুরু হয় সকাল ৮টায়।
মাটির হাঁড়ি থেকে মাটির মগে টাটকা খেজুরের রস পান করতে ভোর হতে না হতেই ছুটে এসেছিলেন রসিকজনেরা। শিশুদের নিয়ে এসেছিলেন অনেকেই, শহুরে শিশুদের জন্য এটি একটি নতুন অভিজ্ঞতাও বটে।
মেলায় এসে সংস্কৃতি সচিব আক্তারী মমতাজ বলেন, “নাগরিক পরিমণ্ডলে খেজুরের রস নিয়ে এই আয়োজন খুব ভালো উদ্যোগ। খেজুরের রসের ঐতিহ্য গ্রামেও হারাতে বসেছে। গাছীও কমে গেছে। এ ধরনের আয়োজনে রস পানকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য তৈরি হবে। এভাবেই গড়ে উঠবে মানবিক বাংলাদেশ।’’
সপরিবারে রসের মেলায় এসেছেন কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ।
মেলার সাংস্কৃতিক পর্বে ছিল আলী হোসেন বয়াতীর জারি গান। টাঙ্গাইলের নাচারি দল ‘চারণ’ পরিবেশন করে মনসামঙ্গল কাব্যের ‘বেহুলা ভাসান পালা’।
পর্দা নামল ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের
চলচ্চিত্রে ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে পর্দা নামলো রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ আয়োজিত পঞ্চদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে ছিল সমাপনী আয়োজন। এতে উৎসবে প্রদর্শিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে থেকে জুরিদের ভোটে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকার পুরস্কার প্রদান করা হয়।
এবারের উৎসবে সেরা শিশুতোষ চলচ্চিত্র হিসেবে বাদল রহমান পুরস্কার পেয়েছে ফিলিপাইনের মারসেইল সি কারিগার ‘পিটং কাবাং পালাই’, দর্শকদের বিচারে সেরা চলচ্চিত্র ভারতের ববি সারমা বারুহের ‘সোনার বরণ পাখি’, সেরা ফিচার চলচ্চিত্র আজারবাইজানের মিরবালা সালিমলির ‘কিরমিজি বাগ’, সেরা ফিচার চলচ্চিত্রে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশের নাদের চৌধুরীর ‘লালচর’, সেরা প্রামাণ্যচিত্র নেদারল্যান্ডের অ্যানি ক্রিস্টেন তিরারডটের ‘আইসল্যান্ডস অব দ্য মনকস’, প্রামাণ্যচিত্রে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে ইতালির মার্কো জুইনের ‘লা সেদিয়া ডি কার্টুনে’, সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ইরানের আলি মারদোমির ‘দ্যা সেমেন্টারি ম্যান’।
নারী চলচ্চিত্রকার বিভাগে সেরা ফিচার চলচ্চিত্র হয়েছে ইরানের ইদা পানাহানদেহের ‘নাহিদ’, ফিচার চলচ্চিত্রে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে তুরস্কের ইমিনে ইমেল বালচির ‘আনটিল আই লস মাই ব্রেথ’, সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র সাইপ্রাসের মাইরসিনি আরিস্টোদাওয়ের ‘সিমেল’, স্বল্পদৈর্ঘ্য বিভাগে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে নেপাল ও ইরানের দুই নির্মাতা ফাতেমে আহমাদি ও আসমিতা শিরিষের ‘চন্দ্র’, সেরা প্রামাণ্যচিত্র বাংলাদেশের শবনম ফেরদৌসীর ‘জন্মসাথী’, প্রামাণ্যচিত্রে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে মেক্সিকোর নাতালিয়া ব্রুসচেস্টেইনের ‘এল টেম্পো সাসপেন্ডিডো’।
স্বল্প ও মুক্ত চলচ্চিত্র বিভাগে সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র সিরিয়ার আমের-আল-বারঝাওইয়ি ‘ইয়ামান’, বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে ভারতের শিবপ্রসাদ কে ভি’র ‘আপ্পোপানথাডি’ ও বাংলাদেশের তারেক আজিজ নিশকের ‘প্যারালাল জার্নি’, সেরা প্রামাণ্যচিত্র মিয়ানমারের সো আর্কার হুটানের ‘এ পলিটিক্যাল লাইফ’ ও নেপালের গনেশ পাণ্ডের ‘নেপাল আর্থকুইক: হিরোজ, সারভাইরস অ্যান্ড মিরাকেল’।
এশিয়ান ফিল্ম প্রতিযোগিতা বিভাগে এফআইপিআরএসসিআই জুরি পুরস্কারে সেরা চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে কাতারের হুসেইন হাসানের ‘দ্যা ডার্ক উইন্ড’।
আন্তর্জাতিক জুরি অ্যাওয়ার্ডে সেরা চিত্রগ্রাহক কেভাজির শাহীন ও কুসরাত উরসেইন, সেরা চিত্রনাট্য সায়েদ রুস্তাতি ও সোনার ক্যানের, সেরা অভিনেত্রী হয়েছে ফিলিস্তিনের মাইশা আবদ এলহাদি, সেরা অভিনেতা ইরানের ফারহাদ আসলানি, সেরা পরিচালক ইরানের পারভিজ শাহবাজি এবং সেরা চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে ইরানের ‘ডটার’।
এছাড়াও বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয় তৌকির আহমেদের ‘অজ্ঞাতনামা’ চলচ্চিত্রকে।
১২ জানুয়ারি থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত চলা এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশসহ মোট ৬৭টি দেশের ১৭৭ টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।
উৎসবে এশিয়ান কমপিটিশন, রেট্রোস্পেকটিভ, সিনেমা অফ দ্য ওয়ার্ল্ড, চিল্ড্রেন্স ফিল্মস্, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, শর্ট ও ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্মস, নরডিক ফিল্ম সেশন এবং উইমেন্স ফিল্মমেকারস্ সেকশনে এই চলচ্চিত্রসমূহ প্রদর্শিত হয়।
চলচ্চিত্র উৎসবের অংশ হিসেবে ১৫ জানুয়ারি দিনব্যাপী ’বাংলা সিনেমার বিশ্ব যাত্রা’ শিরোনামে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন।
জাদুঘরে বাঁশরীসন্ধ্যা
ক্যাপ্টেন আজিজুল ইসলাম সমুদ্রচারী হয়ে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন সারা জীবন, কিন্তু সুরের প্রতি ছিল তার অসীম টান। সে টানে তিনি তুলে নিয়েছেন বাঁশি। ধ্রুপদী সংগীতের মূর্ছনায় মাতিয়েছেন দেশ-বিদেশের শ্রোতাদের।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনের খ্যাতিমান এই শিল্পীর অর্জিত সম্মাননা স্মারক প্রদর্শনী নিয়ে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী প্রদর্শনী।
শুক্রবার সন্ধ্যায় এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
উদ্বোধনী সন্ধ্যায় আজিজুল ইসলাম বাঁশিতে রাগ ইমন, বেহাগ, দুর্গা, কাহারবা তালে ভৈরবী রাগ পরিবেশন করেন।
আজিজুল ইসলামকে উপমহাদেশের ‘প্রথম সারির’ বংশীবাদক হিসেবে অভিহিত করে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, “পৃথিবীতে যত প্রকার সুরযন্ত্র আছে, তার মধ্যে বাঁশি অন্যতম। এটি একটি প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র, যার কোনো ভাষা নেই কিন্তু সুর আছে।
“ঠিক তেমনি শাস্ত্রীয় সংগীতের ভাষা অনেকের কাছে বোধগম্য না হলেও তার সুর আমাদের আনন্দিত করে, প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হতে সহায়তা করে।”
অর্ধশতকের সংগীত জীবনে আজিজুল ইসলাম পারফর্ম করেছেন ডোভারলেন মিউজিক কনফারেন্স, সিঙ্গাপুরের ইন্টারন্যাশনাল মিউজিক কনফারেন্স ফর ইন্ডিয়ান ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক অ্যান্ড ড্যান্স- এর মতো উৎসবগুলোতে।
ভারত, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া,কানাডাসহ বিশ্বের নানা দেশে তিনি পারফর্ম করেছেন।