ধুলা ঝাড়বে যে, সে-ই ধুলায় ঢেকে

শুষ্ক শীত মৌসুমের সড়কে কয়েকটি উন্নয়ন কাজ এক সঙ্গে চলায় যখন ধুলার দুর্ভোগ, তা পরিষ্কারের জন্য কেনা চারটি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ট্রাক তখন কোনো কাজে আসছে না।

ওবায়দুর মাসুম নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2017, 03:03 AM
Updated : 20 Jan 2017, 12:15 PM

কম সময়ে রাজধানীর রাস্তার ধুলোবালি পরিষ্কারের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে দুটি করে অত্যাধুনিক ‘ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ট্রাক’ দিয়েছিল।

‘পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় কর্তৃক সরকারের অর্থায়নে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় গৃহীত থ্রি আর পাইলট উদ্যোগ বাস্তবায়ন (ফেজ-১)’ নামে প্রকল্পের আওতায় এসব ট্রাক কেনা হয়।

চীনের তৈরি জ্যাক ব্র্যান্ডের ছয়টি ট্রাক কেনায় ব্যয় হয় ৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ২০১৩ সালের ২২ মে ঢাকার ২ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে বাকি দুটো ট্রাক দেওয়া হয়েছিল।

সিটি করপোরেশন এলাকার ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার, বর্জ্য হ্রাস, বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার ও পুনর্চক্রায়ন (রিডিউজ, রিইউজ, রিসাইকেল) পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এ ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ট্রাক দেওয়া হয়।

কিন্তু বছর না ঘুরতেই ট্রাকগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, উদ্বোধনের পর এক মাসও এসব ট্রাক চালানো সম্ভব হয়নি। খুব দ্রুত যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে যাওয়ায় এগুলো চালানো কঠিন হয়ে পড়ে।

কয়েকবার মেরামতের পর সেগুলোর জায়গা হয়েছে ধলপুরে ঢাকা সিটি করপোরেশনের কেন্দ্রীয় মেরামত কারখানায়।

এসব ট্রাক দিয়ে এখন সড়ক ঝাড়ু দেওয়া ‘যায় না’ বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু সালেহ মো. মাঈনুদ্দিন।

“এগুলো এখন চলে না। আমরা অনেকদিন চেষ্টামেষ্টা করে চালাইছিলাম। এটাকে সার্ভিসেবল করতে পারি নাই। উত্তরে তো চালাইতেই পারে নাই। আমরা কয়েকদিন চালাইছি।”

ধলপুরে সিটি করপোরেশনের মেরামত কারখানায় সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় ধুলা-বালির আস্তরণ জমেছে ট্রাক দুটির উপর, গায়ের বিভিন্ন জায়গায় রংও চটে গেছে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক যান্ত্রিক শাখার একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, ধুলা পরিষ্কারের সময় সড়কের ধুলা ‘এয়ার ফিল্টার হয়ে’ ট্রাকের ইঞ্জিনে ঢুকে যায়। এ কারণেই কিছুদিন পর ইঞ্জিন বসে যায়।

একজন কর্মচারী বলেন, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ট্রাকের দুটি ইঞ্জিন। এর একটি দিয়ে ট্রাক চলে। আরেকটি ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের কাজ করে। ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের ইঞ্জিনটি বেশি সমস্যা করে।

“এই গাড়িগুলা আনার পর এখন পর্যন্ত তিন বার ইঞ্জিন ওভারহোলিং করা লাগছে। অন্য যে কোনো গাড়ির ইঞ্জিন ওভালহোলিং করা লাগে চার বছর পরপর। এই গাড়ির ভ্যাকুয়াম সিস্টেমও কয়দিন পরপর খারাপ হইয়া যায়।”

এসব ট্রাক মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশও সহজলভ‌্য নয় বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মচারী।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আনোয়ারুল ইসলামের কথাও দক্ষিণের কর্মকর্তাদের সুর।

“যে ট্রাকগুলো আমাদের ভাগ্যে পড়েছে সেগুলো রাস্তায় বের করতে পারি না। এগুলো রাস্তায় নামালে তা অন্যকে ধুলায়িত করে। ধুলা পরিষ্কার করার চেয়ে আরও বেশি ধুলা উদগিরণ করে,” বলেন তিনি।

তবে ভ্যাকুয়াম ট্রাকগুলো নষ্ট হয়নি বলে দাবি করেন এই প্রকল্পের পরিচালক আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। তার মতে,

সিটি করপোরেশন ট্রাকগুলো ঠিকমতো ব্যবহারে অনাগ্রহী।

“সিটি করপোরেশনে ট্রাকগুলো দেওয়া হয়েছে, তাদেরও তো দেখার দায়িত্ব ছিল। এগুলো ঠিকই আছে, এরা চালাতে চায় না। মূল বিষয় অন্য।”

‘অন‌্য বিষয়’ কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সব বিষয় তো আর বলা যায় না।”

তবে ঢাকার সড়কগুলো এ ধরনের যন্ত্র ব্যবহারের উপযোগী নয় বলে স্বীকার করেন প্রকল্প পরিচালক আনোয়ার।

“আমাদের রোডগুলো তো বিদেশের রোডের মতো ক্লিন না। তাদের ওখানে (বিদেশে) হালকা ডাস্ট থাকে, যা সহজেই পরিষ্কার করা যায়। কিন্তু আমাদের এখানে ডাস্টের সঙ্গে আরও অনেক বড় বড় ইটের টুকরা-ভাঙা জিনিস ঢুকে যায়। এই কারণে এগুলো সমস্যা দিচ্ছে।”

ট্রাকগুলো কেনার আগে ঢাকার রাস্তাঘাটের বিষয়টি তাহলে মাথায় রাখা হয়নি কেন- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি তখন প্রকল্প পরিচালক ছিলাম না।”