‘রিভিউ চাইবেন’ মুফতি হান্নান

সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ তিন জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে সর্বোচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করবে আসামিপক্ষ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2017, 06:17 PM
Updated : 19 Jan 2017, 06:17 PM

রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার পরই পুনর্বিবেচনার আবেদনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে বলে বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন আসামি পক্ষের এক আইনজীবী।

গত মঙ্গলবার আপিল বিভাগের ৬৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে পুনর্বিবেচনা করতে হবে আসামি পক্ষকে।

রায়ে আপিল বিভাগ বলেছে, “আমরা হাই কোর্টের দেওয়া দণ্ড কমানোর মতো কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাইনি। দণ্ডাদেশ প্রশ্নে হাই কোর্ট যথাযথ সিদ্ধান্তই নিয়েছে। যে কারণে হাই কোর্টের দেওয়া সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে দণ্ডাদেশ সংশোন করে আপিল খারিজ করা হয়েছে।”

মুফতি হান্নানের আইনজীবী মোহাম্মদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুনেছি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। তবে তা এখনও হাতে পাইনি।

“পূর্ণাঙ্গ রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি হাতে পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যেই পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হবে। আমরা রায়টি পেতে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন করেছি।”

পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর দণ্ডাদেশ কার্যকর করার ক্ষেত্রে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন এবং সর্বশেষ দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবে আসামিরা। রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করে দিলেই দণ্ডাদেশ কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকবে না।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাষ্ট্র চাইলে দণ্ডাদেশ কার্যকরের প্রস্তুতি নিতে পারে। আসামিরা যদি রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করে, তবে তা দ্রুত শুনানির ব্যবস্থা করা হবে।”

তিনি জানান, আপিল বিভাগের রায়টি প্রথমে যাবে হাই কোর্টে। হাই কোর্ট হয়ে রায়টি পাঠানো হবে বিচারিক আদালতে। বিচারিক আদালত মৃত্যুপরোয়ানা জারি করার পর তা মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের পড়ে শোনানো হবে।

তখন আসামিদের কাছে জানতে চাওয়া হবে যে, তারা দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না?

“যদি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চায়, তবে তাদের প্রাণভিক্ষা চাওয়ার চূড়ান্ত আবেদনের সুযোগ দেওয়া হবে। রাষ্ট্রপতি আবেদন নিষ্পত্তি করলেই রায় কার্যকরের ক্ষণ গণনা শুরু হবে,” বলেন মাহবুবে আলম।

গত ৭ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ওই তিন জঙ্গির আপিল শুনানি করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বিভাগ তা খারিজ করে দেয়।

আপিলে এই তিন আসামির মধ‌্যে মুফতি হান্নান ও বিপুলের পক্ষে শুনানি করেছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ আলী। আর রিপনের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. হেলাল উদ্দিন মোল্লা।

এ মামলার বাকি দুই আসামি মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে হাই কোর্ট যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। আপিল না করায় তাদের ওই সাজাই বহাল থাকে। দণ্ডিত পাঁচ আসামির সবাই কারাগারে আছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টাসহ হরতাকাতুল জিহাদের ১৩টি নাশকতামূলক ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তিতে হত্যার পেছনের মূল ব্যক্তি বলা হয় মুফতি হান্নানকে।

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় মুফতি হান্নানের বাড়ি। ২০০০ সালের ২০ জুলাই সেই কোটালীপাড়াতেই শেখ হাসিনার সভামঞ্চের কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। মুফতি হান্নান ওই মামলারও আসামি।