সার্কের কার্যকারিতা শেষ হয়ে যায়নি: প্রধানমন্ত্রী

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোট সার্কের কার্যকারিতা ‘এখনো শেষ হয়ে যায়নি’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রিয়াজুল বাশার ডাভোস থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2017, 09:16 AM
Updated : 18 Jan 2017, 10:24 AM

তিনি বলেছেন, “সার্কের কাযকারিতা এখনো শেষ হয়ে যায়নি বলে আমি মনে করি। এখনো যথেষ্ট কাজ করার সুযোগ আছে।”

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুইজারল্যান্ডের ডাভোস কংগ্রেস সেন্টারে ৪৭তম ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে ‘হারনেসিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ইন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক একটি ইন্টারেক্টিভ সেশনে মতবিনিময়ে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহ, ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ছাড়াও সার্কভুক্ত বিভিন্ন দেশের জনপ্রতিনিধি এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এই সেশনে প্রশ্নোত্তরে অংশ নেন।

দক্ষিণ এশিয়াকে এক সূত্রে গাঁথার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৮৫ সালে গঠিত জোট সার্ক কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণের পথে বারবারই দিশা হারিয়েছে। গত বছর নভেম্বরে পাকিস্তানে নির্ধারিত ১৯তম সার্ক সম্মেলন চার দেশের বর্জনের কারণে বাতিল হয়ে গেলে সার্কের সাফল‌্য-ব‌্যর্থতার আলোচনা নতুন করে শুরু হয়।

কাশ্মির নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার জের ধরে ভারত ইসলামাবাদ সম্মেলন বয়কটের ঘোষণা দেয়। পরে আফগানিস্তান, ভুটান ও বাংলাদেশও সম্মেলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানালে সম্মেলনই স্থগিত হয়ে যায়।

পরে ভারতের পত্রিকা হিন্দুকে এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ভারত সার্ক শীর্ষ সম্মেলন থেকে সরে গিয়েছিল উরি হামলার কারণে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কারণটি ভিন্ন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বিচার ও সাজা কার্যকরের প্রক্রিয়া নিয়ে পাকিস্তান সরকার যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, সে কারণেই বাংলাদেশ ওই সম্মেলনে যায়নি।

ইন্টারেক্টিভ সেশনে শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান শত্রু দারিদ্র্য। দারিদ্র্য কীভাবে মোচন করা যায় সেটাই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।

এ অঞ্চলের মানুষের কল্যাণ ও তাদের ভাগ‌্যোন্নয়নে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কানেকটিভিটি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিসিআইএম, বিবিআইএন, বিমসটেক-এর মত আঞ্চলিক ফোরামগুলোকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করার ওপর জোর দেন তিনি।

বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশীদের কানেকটিভিটি বাড়াতে সাম্প্রতিক বিভিন্ন উদ‌্যোগ এবং সাফটাকে শক্তিশালী করার কথা প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন এবং সার্ক স্যাটেলাইট উত্তেক্ষেপণের পরিকল্পনার কথা জানান।

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি ও তা বাস্তবায়ন এবং ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স ট্রাস্ট ফান্ড গঠনসহ বাংলাদেশ সরকারের বিভিণ্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “কারও জন্য অপেক্ষা না করে আমরা নিজেরাই বাস্তবায়ন শুরু করেছি।”

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের পরিবেশের ক্ষতি করবে কি না-এ প্রশ্ন করেন অনুষ্ঠানে সঞ্চালক।

উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হতে হলে বাংলাদেশকে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। আর সেজন‌্যই বাংলাদেশ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতে যাচ্ছে।

“পারমাণবিক ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিভিন্ন উৎস  থেকে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্ব দিচ্ছি। কিন্তু কয়লার ব্যবহার বাড়াতে হবে। তবে দূষণ সর্বনিম্ন মাত্রায় রাখতে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমরা উন্নত প্রযুক্তির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।”

পাকিস্তানের সুশীল সমাজের এক প্রতিনিধি বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গ তুললে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একাত্তরে তারা হত্যা, ধর্ষণসহ নানা ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তাদের বিচার হচ্ছে।”

প্রধানমন্ত্রীকে প্রবাসীদের শুভেচ্ছা

প্রথম বাংলাদেশি নির্বাচিত নেতা হিসেবে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সভায় যোগ দিতে সুইজারল্যান্ড সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের প্রবাসী বাংলাদেশীরা।

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর আবাসস্থল সিলভ্রেত্তা পার্ক হোটেলে জড়ো হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা ও শুভ কামনায় বিভিন্ন স্লোগান দেন।

প্রধানমন্ত্রীকে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে আমন্ত্রণ জানানোয় প্রবাসীরা এ সংস্থার নির্বাহী চেয়ারম্যানকেও ধন্যবাদ জানান।