তথ্য-প্রযুক্তিতে বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প

বাংলাদেশে প্রান্তিক পর্যায়ে ডিজিটাল সংযোগ নিয়ে যেতে এক বিলিয়ন ডলারের (প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা) একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।

শামীম আহমেদ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2017, 02:04 PM
Updated : 17 Jan 2017, 03:11 PM

তথ্য-প্রযুক্তিতে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় এই প্রকল্পে সব জায়গায় ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দেওয়াসহ তরুণ প্রজন্মের জন্য বিভিন্ন পার্ক বা হাটবাজারে এক হাজার ওয়াই-ফাই জোন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

এছাড়া দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, পোস্ট অফিস, কৃষিসহ অন্যান্য সরকারি দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানকে ফাইবার অপটিক কেবল সংযোগের আওতায় আনার লক্ষ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য স্থাপন করা হবে তিন লাখ কিলোমিটার ফাইবার অপটিক কেবল।

‘এস্টাবলিশিং ডিজিটাল কানেকটিভিটি’ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। 

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই প্রকল্পের মাধ্যমে একটি প্লাটফর্মসহ পেমেন্ট গেটওয়ে প্রস্তুত করার মাধ্যমে সকল বাণিজ্যিক ও আর্থিক সেবা সহজলভ্য করতে ব্যবসা প্রসার কেন্দ্রে ডিজিটাল মানি পে পয়েন্ট স্থাপন করা হবে।”

এছাড়া গবেষণা, মাল্টিমিডিয়া ল্যাব স্থাপন, সাইবার সিকিউরিটি, হার্ডওয়্যার শিল্পের বিকাশ, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ল্যাব, শিক্ষার্থীদের নিবন্ধনের জন্য বায়োমেট্রিক ডিভাইস সরবরাহ, ইন্টারনেট সাসটেইনেবিলিটি সেন্টার স্থাপনসহ ডিজিটাল সংযোগ প্রতিষ্ঠায় নানা উদ্যোগে রয়েছে এতে। 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব বনমালী ভৌমিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত কানেকটিভিটি পৌঁছে দেওয়া এবং সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ, সংস্থা ও দপ্তরের সকল সেবাকে একটি সসন্বিত প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।”

প্রকল্প বাস্তবায়নে একশ কোটি মার্কিন ডলার প্রয়োজন হবে জানিয়ে তিনি বলেন, চীন সরকারের ঋণ সহযোগিতা এবং সরকারি তহবিল থেকে অর্থায়নের কথা রয়েছে।

চলতি বছরেই প্রকল্পের কাজ শুরু করার আশা প্রকাশ করে বনমালী বলেন, তিন বছরের মধ্যে এর কাজ শেষ করার পরিকল্পনা তাদের।

প্রকল্পটি নিয়ে ইতোমধ্যে  অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা শেষ হয়েছে জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব বলেন, “খুব শিগগিরই অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।”

দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, পোস্ট অফিস, কৃষিসহ অন্যান্য সরকারি দপ্তর এবং প্রতিষ্ঠানকে ফাইবার অপটিক কেবল সংযোগের আওতায় আনাসহ এই প্রকল্পে প্রায় ১৮টি মৌলিক কাজ রয়েছে বলে জানান বনমালী ভৌমিক।

তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় ১০ হাজার পয়েন্ট অব প্রেজেন্স (আর্থিক লেনদেন কেন্দ্র) ও ব্যবসা প্রসার (গ্রোথ সেন্টার) কেন্দ্রগুলোর কানেকটিভিটি সম্প্রসারণ করা হবে।

চার হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১০ হাজার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এক হাজার কলেজে (স্নাতক) ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’ স্থাপন করা হবে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) রেগুলেটরি ল্যাব স্থাপনও হবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে।

গবেষণা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগে একটি আধুনিক মাল্টিমিডিয়া ল্যাব স্থাপনসহ সাইবার সিকিউরিটি প্রশিক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাইবার সিকিউরিটি ল্যাব স্থাপন করা হবে।

হার্ডওয়্যার শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানে ভিএলএসআই ল্যাব স্থাপন করা হবে।

দেশের সব সরকারি দপ্তরে ই-সার্ভিস বাস্তবায়নের ক্ষেত্র প্রস্তুতির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ সরবরাহ এবং ডিজিটাল কন্টেন্ট ডেলিভারি, তথ্য সংরক্ষণ, সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, যন্ত্রপাতি ও নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির জন্য সুইচ রুম সংস্কার ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ল্যাব স্থাপন করা হবে।

জনগণকে তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি সেবা দিতে ইমার্জেন্সি সার্ভিস সেন্টার (৯৯৯) স্থাপন, জাতীয় সংসদ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডিজিটাইজেশন এবং ই-পার্লামেন্ট স্থাপন করা হবে। ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে ইন্টারনেট সাসটেইনেবিলিটি সেন্টার স্থাপন করা হবে।

১২টি আইটি পার্ক ও ৬৪টি শিল্পকলা একাডেমিতে ডিজিটাল লাইব্রেরি ও মাল্টিমিডিয়া সেন্টার স্থাপনসহ ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত ইন্টারঅ্যালকটিভ ডিজিটাল কন্টেন্ট উন্নয়নসহ আরও অনেক কার্যক্রম রয়েছে এ প্রকল্পে।

পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প চূড়ান্ত হলে তা তোলা হবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক)। সেখানে অনুমোদন পেলেই গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সুলভে ইন্টারনেট সেবা পাওয়ার কাজ শুরু হবে।