আসামি মরেছে ৯ মাস আগে, তবু মামলা চলছে

পলাতক অবস্থায় মারা যাওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধ মামলায় ময়মনসিংহের ওয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা চলায় অসন্তোষ প্রকাশ করে এর পেছনে কার গাফিলতি রয়েছে তা তদন্ত করতে বলেছে আদালত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2017, 09:15 AM
Updated : 16 Feb 2017, 08:09 AM

বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার প্রসিকিউশন ও আসামি পক্ষকে এ বিষয়ে মৌখিক নির্দেশনা দেন।

আদালতে এ সময় উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিটর হায়দার আলী ও ঋষিকেষ সাহা; আসামি পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম।

পরে হায়দার আলী সাংবাদিকদের বলেন, “ট্রাইব্যুনাল বলেছেন মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা চলতে পারে না। এটা আইনবিরুদ্ধ কাজ। আদালত আমাদের মৌখিকভাবে এ বিষয়ে যাদের গাফিলতি আছে তা খতিয়ে দেখতে বলেছে।”

আসামি পক্ষের আইনজীবী তামিম বলেন, “মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর বিষয় ট্রাইব্যুনাল আমাকেও খতিয়ে দেখতে বলেছেন।”

বুধবার একটি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত ‘মৃত ওয়াজ উদ্দিনকে পলাতক ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের নজরে আসে।

ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ময়সিংহের ফুলবাড়িয়ার বাসিন্দা ওয়াজউদ্দিন ২০১৬ সালের ৭ মে মারা যান। তার মৃত্যুর নয় মাস পরও ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে মামলা চলছে।

এবিষয়ে প্রসিকিউটর ঋষিকেশ সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি তদন্ত সংস্থা প্রসিকিউশনে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জেমা দেয়। আমরা যাচাই বাছাই করে চার দিন পরে অর্থাৎ ২৩ ফেব্রুয়ারিই ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করি।

“২৯ মার্চ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। ১৬ জুন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় আসামি পলাতক। এর ৯ দিন পর আত্মসমর্পন করে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।  গত বছরের ১১ ডিসেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।”

ওয়াজ উদ্দিনের মৃত্যুসনদ

৩১ জানুয়ারি এই মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থানের দিন নির্ধারিত রয়েছে বলে জানান তিনি।

ট্রাইব্যুনালের নির্দেশনার পর আসামির মৃত্যুর বিষয়ে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপারের প্রতিবেদন পেয়েছেন বলে জানান রেজিস্ট্রার শহীদুল আলম ঝিনুক।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আজকে চিঠি দিয়ে ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করেছেন, আসামি ৭/৫/১৬ তারিখে মারা গেছেন। এর আগে ট্রাইব্যুনাল আসামির মৃত্যুর বিষয়ে কোনো ধরণের তথ্য জানত না।”

চিঠি পাওয়ার পর পরই তা ট্রাইব্যুনালের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান রেজিস্ট্রার।

তিনি বলেন, “পলাতক অবস্থায় আসামির মৃত্যুর পর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন কিংবা বিচারিক কার্যক্রম শুরুর দায় কোনোভাবেই ট্রাইব্যুনালের না। আসামি গ্রেপ্তার করার দায়িত্ব যাদের, এর দায় তাদের।”

এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি এখন আদালতের উপর ন্যস্ত বলে বলে জানান ট্রাইব্যুনালের এই কর্মকর্তা।

এ মামলার আসামিদের মধ্যে রিয়াজ উদ্দিন গ্রেপ্তার হয়েছেন; মামলাটির আরেক আসামি আমজাদ আলী গ্রেপ্তারের পর মারা যাওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। আর পলাতক ওয়াজ উদ্দিনের মৃত্যু নিয়ে এ জটিলতা তৈরি হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকউশনের তদন্ত সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, একাত্তরে রিয়াজ ছিলেন আলবদর সদস্য, আর ওয়াজ ছিলেন রাজাকার। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিন জনই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

২১ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালে দেওয়া অভিযোগপত্রে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও ধর্ষণের পাঁচ ঘটনায় রিয়াজ ও ওয়াজ ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২২ অগাস্ট থেকে ২১ নভেম্বরের মধ্যে ফুলবাড়িয়া উপজেলার বেবিট্যাক্সি স্ট্যান্ড, রাঙ্গামাটিয়া ঈদগাহ সংলগ্ন বানা নদী, দিব্যানন্দ ফাজিল মাদরাসা, ফুলবাড়িয়া ঋষিপাড়া, আছিম বাজার ও ভালুকজান গ্রামে আসামিরা মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্ত করেন।