‘ভুলে ভরা’ পাঠ্যবই প্রত্যাহারের দাবি

পাঠ্যবইয়ে ভুলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি এসব বই প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন শীর্ষস্থানীয় ৮৫ জন অধ্যাপক, লেখক, গবেষক ও সংস্কৃতিকর্মী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2017, 06:15 PM
Updated : 10 Jan 2017, 07:17 PM

মঙ্গলবার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে পাঠ্যবইয়ে পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িকতা ঢোকানোর অভিযোগ করা হয়েছে। এর পরিণতি হিসেবে জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের উত্থানের বিষয়ে সতর্ক করেছেন বিবৃতিদাতারা।

বিবৃতিদাতার মধ্যে রয়েছেন- অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক, যতীন সরকার, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ড. হায়াৎ মামুদ, সনৎ কুমার সাহা, ড. অজয় রায়, লেখক-গবেষক আহমেদ রফিক, সৈয়দ হাসান ইমাম, ড. সফিউদ্দিন আহমদ, সাইদুর রহমান বয়াতী, কাজী মদিনা, আবুল মোমেন, রামেন্দু মজুমদার, শিল্পী আনোয়ার হোসেন, দ্বিজেন শর্মা, বেগম মুশতারী শফি, ডা. রশিদ ই মাহবুব, লায়লা হাসান, মামুনুর রশিদ, মাহফুজা খানম, ড. ইনামুল হক, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, কবি আসাদ চৌধুরী, অধ্যাপক শফি আহমেদ, অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম, অধ্যাপক বদিউর রহমান, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, আকমল হোসেন, সঞ্জীব দ্রং, অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন ও তানজিমউদ্দিন খান।

বিবৃতি বলা হয়, “অবিলম্বে ভুলে ভরা এ পাঠ্যপুস্তকসমূহ প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে নবীন শিক্ষার্থীদের সাম্প্রদায়িক ও কূপমণ্ডুক হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে আধুনিক ও মানবিক একটি রাষ্ট্রের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এ পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে তাদের শিক্ষা দান বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।”

তিন কারণে পাঠ্যপুস্তকে ভুল এবং তথ্য ও ইতিহাস বিকৃতি হচ্ছে অভিযোগ করে বিবৃতিতে বলা হয়, “এক, বানান ও তথ্যগত বিকৃতি; দুই, বাক্য গঠনে ভুল; তিন, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তির অনুপ্রবেশ ঘটানো।”

এর মধ্যে প্রথম দুই ভুলের জন্য পরিকল্পনা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবকে দায়ী করলেও ‘তৃতীয় ভুলটি পরিকল্পিত’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে এতে।

বিবৃতিতে বলা হয়, “সরকার নিজেকে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতাবিরোধী বলে ঘোষণা করলেও এবং এর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চাকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বললেও পাঠ্য পুস্তকে উল্লিখিত বিষয়ে তার পশ্চাদপসরণের আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

পাঠ্যপুস্তকে পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িকতা ঢোকানো হচ্ছে অভিযোগ করে বিবৃতিদাতারা বলেন, “জঙ্গিবাদের যে ভয়াল রূপ আমরা দেখছি, তা যে কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে নির্মূল করা সম্ভব নয়-একথা সকলেই মানবেন। এই ক্যান্সারের মতো জঙ্গিবাদকে দমনের জন্যে প্রয়োজন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন।

“একদিকে পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকতার চাষ করছে সরকার, অন্যদিকে শিশুর মনোজগতে প্রবেশ করাচ্ছে বিদ্বেষ আর বৈষম্যের বিষ।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লালন শাহ, সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্ত, এস ওয়াজেদ আলী, হুমায়ুন আজাদের মতো লেখকদের বিভিন্ন রচনা পাঠ্যবই থেকে বাদ দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে তারা বলেন, “যে হীন চক্রান্তে বাদ (এটা) দেওয়া হয়েছে, সেই চক্রান্তেরই ভয়ানক রূপ হিসেবে ভবিষ্যতে জঙ্গিবাদ আর মৌলবাদের প্রসার ঘটবে বাংলাদেশে। শুধু তাই নয়, লেখকদের লেখা-কবিতার লাইন পরিবর্তন করার দুঃসাহসও দেখিয়েছে কর্তৃপক্ষ।”