নেভেনি ডিসিসি মার্কেটের আগুন, ধসে পড়েছে একাংশ

রাজধানীর গুলশান-১ নম্বরের ডিসিসি মার্কেটের ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি ১২ ঘণ্টা পরও; ভোরের দিকে ধসে পড়েছে মার্কেটের একাংশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Jan 2017, 09:55 PM
Updated : 3 Jan 2017, 08:36 AM

ফায়ার সার্ভিসের ২২টি ইউনিট সোমবার রাত আড়াইটা থেকে আগুন নেভানোর চেষ্টা শুরু করলেও কতক্ষণে তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে- তা মঙ্গলবার দুপুরেও বলতে পারেননি অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর কর্মীরা। 

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক সকালে ঘটনাস্থলে এসে জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডে কারও মৃত‌্যুর কোনো তথ‌্য তারা পাননি। 

ক্ষতিগ্রস্ত ব‌্যবসায়ীদের কেউ কেউ নাশকতার সন্দেহের কথা বললেও মেয়রের ধারণা, বৈদ‌্যুতিক গোলযোগ থেকেই ওই মার্কেটে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের কমকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব‌্য করেননি।

পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার মুসতাক আহমেদ রাত পৌনে ৪টায় ঘটনাস্থলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভয়াবহ আগুন লেগেছে। কীভাবে লেগেছে তা বলা যাচ্ছে না। ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে।”

ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার পলাশ চন্দ্র মোদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হয় মার্কেটের পূর্ব দিকে। পরে তা অন‌্যান‌্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রাত আড়াইটার দিকে কাজ শুরু করে।

একজন ব‌্য‌বসায়ী জানান, দুই তলা এই মার্কেটে দোকান আছে আড়াইশর মত। নিচতলায় বড় একটি অংশে রয়েছে আসবাবপত্রের দোকান। বেশ কিছু খাবারের দোকানও রয়েছে। দোতলায় রয়েছে আমদানি করা খাদ‌্যপণ‌্য, প্রসাধনী, পোশাক, প্লাস্টিক পণ‌্য ও গয়নার দোকান।

মার্কেটের নিচতলায় গ‌্যাস সিলিন্ডার মেরামতের কয়েকটি দোকান আছে। সকালেও সেখান থেকে বিস্ফোরণের মত শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল।   

নিচতলায় পূর্ব অংশে রয়েছে কাঁচাবাজার। ওই দিকেই ডিসিসি মার্কেটের লাগোয়া চার তলা গুলশান শপিং সেন্টার। তবে সেখানে আগুন লাগেনি বলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জানিয়েছেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আলোকচিত্র সাংবাদিক মুস্তাফিজ মামুন জানান, ভোর সোয়া ৪টার দিকে মার্কেটের পেছনের একটি অংশ ধসে পড়ে। কাছাকাছি সময়ে ধসে পড়ে সামনের একটি অংশও।

গভীর রাতে কর্মচারীদের কাছ থেকে আগুন লাগার খবর পেয়ে ব‌্যবসায়ীরা ছুটে আসেন মার্কেটে। তাদের অনেককেই মরিয়া হয়ে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায়। যাদের দোকান তখনও অক্ষত, তারা মালামাল নামিয়ে মার্কেটের সামনের খোলা অংশে জড়ো করতে থাকেন।

চোখের সামনে দোকান আর মার্কেট পুড়তে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন ব‌্যবসায়ীদের কয়েকজন। এ ঘটনা নাশকতা বলেও অভিযোগ করেন কেউ কেউ।

এক দোকান মালিক বলেন, মার্কেটের এক নিরাপত্তারক্ষীর কাছে রাত ২টায় তিনি আগুন লাগার খবর পান। ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ওই নিরাপত্তাকর্মী তাকে জানিয়েছেন।

আরেক দোকানী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমার কসমেটিকসের দোকান ছিল দোতলায়। চোখের সামনে সব ছাই হয়ে গেল, কিছুই করতে পারলাম না।”

দোকান মালিক সমিতির এক নেতাকে ফায়ার সার্ভিসের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায়। ভোর পৌনে ৫টার দিকে মার্কেটের একদল ব্যবসায়ী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের উপর চড়াও হলে তারা সরে যান। প্রায় ১৫ মিনিট পর পানি নিয়ে নতুন করে আগুন নেভাতে শুরু করেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।

ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা জানান, পানির স্বল্পতার কারণে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে। পেছনের লেক থেকে পানি এনে কাজ চালাচ্ছেন তারা।

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে এসে মেয়র আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “স্বাভাবিকভাবে মনে হয় বিদ‌্যুতের আগুন। এতে দাহ‌্য পণ‌্য, খাবার, পারফিউম... কোনো জীবনহানি হয়েছে বলে আমাদের জানা নাই।”

মেয়র বলেন, ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশের ভবন যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে চেষ্টাও তারা করছেন। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে কত সময় লাগবে তা বলা সম্ভাব হচ্ছে না।

এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল বলেন, “নাশকতা কিনা, এটা মেয়রের পক্ষে বলা সম্ভাব না, মেয়র নাশকতা এক্সপার্ট না। পুলিশ ভালো বলতে পারবে। তবে মেয়র হিসেবে আমার মনে হয়, নাশকতা না হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ পারসেন্ট।”