শেষে এসে কাজী রকিব বললেন, ‘দেখিয়ে দেব’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে পাঁচ বছরের দায়িত্ব পালনে নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনে ‘উদাসীনতার’ জন্য সমালোচিত কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলছেন, দুষ্কৃতকারী সামনে এলে দেখিয়ে দেবেন তিনি।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Dec 2016, 05:00 PM
Updated : 28 Dec 2016, 05:47 PM

আগামী ফেব্রুয়ারিতে মেয়াদ শেষ হতে চলা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে শেষ ভোট হয়ে গেল বুধবার দেশের ৬১ জেলা পরিষদে। বিরোধী ও সমমনা সব দলের বাইরে শুধু আওয়ামী লীগ মনোনীত ও বিদ্রোহীদের মধ্যে এ ভোটেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি জোটের বর্জনের মধ্য দিয়ে দশম সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এর আগে-পরে সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ মিলিয়ে ডজনখানেক নির্বাচন হয়েছে তাদের অধীনে।

জেলা পরিষদ নির্বাচনে বুধবার মাদারীপুরের হোসেনপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মারামারি।

অনেক নির্বাচনেই সংঘাত, সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ ছয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে কারচুপির অভিযোগে ভোটের মাঝখানে নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি।

তাদের অভিযোগ, সরকারের ‘আজ্ঞাবহ’ এই কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরাধ ঠেকাতে উদাসীন থেকেছে, ক্ষমতার প্রয়োগ তারা করেনি।

তবে মেয়াদের শেষ দিকে এসে গত ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে অনেকের প্রশংসা কুড়িয়েছেন তারা। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী বিপুল ব্যবধানে এই নির্বাচনে জিতলেও নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন পর্যবেক্ষকরা। সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটা দৃষ্টান্ত হতে পারে বলেও মন্তব্য এসেছে অনেকের কাছ থেকে।

মেয়াদের শেষ নির্বাচন আয়োজন করে বুধবার বিকালে সিইসি বলেন, “সংসদ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত আমরা অনেকগুলো নির্বাচন করেছি। কিছু কিছু স্থানে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া সার্বিকভাবে নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু হয়েছে।”

সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে চেষ্টা করেছেন বলে দাবি করেন কাজী রকিব। কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব সে বিষয়ে দাওয়াইও দিয়েছেন তিনি।

“আমরা দেখেছি কিছু স্থানে গুটি কয়েক ‘পকেট’ আছে, যার কারণে সেই স্থানে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে একটু সমস্যা সঙ্কুল হয়ে যায়। আমি আশা করব, ভবিষ্যতে সবাই সচেতন হবেন। সবাই সচেতন হলেই সামনের নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করা সম্ভব।”

নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী এবং দুষ্কৃতকারীদের কঠোর হাতে মোকাবেলা করতে হয় বলে মন্তব্য করেন সাবেক আমলা কাজী রকিব।

চলতি বছরে পঞ্চম ধাপের ইউপি ভোটে সহিংসতার এই চিত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার।

ইউপি ভোটে সংঘাতের এই ছবিটি কুমিল্লার

তিনি বলেন, “দুষ্কৃতকারী ইজ অ্যা দুষ্কৃতকারী। সে কোনো দলের সদস্য হতে পারে না। সব রাজনৈতিক দল আমাদের বলেছে- দুষ্কৃতকারীরা আমাদের কেউ না, সর্ট দেম আউট। আমরাও তাদের সর্ট দেম আউট করে দেব।”

দুষ্কৃতকারীদের প্রতিরোধে ইসি কী ধরনের ব্যবস্থা নেবে-এক সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, “ইমিডিয়েট ব্যবস্থা আছে। র্যােব-বিজিবি আছে। আপনি আসেন সামনে, ইমিডিয়েট ব্যবস্থা বুঝায় দেব।”

নির্বাচন সুষ্ঠু

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদের নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটার সংখ্যা কম হলেও নির্বাচন কমিশন এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়েছিল।

“আপনারা জানেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন অন্যান্য নির্বাচন হতে ভিন্ন। বিভিন্ন স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন।

“কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে যাতে কোনো শঙ্কা না থাকে, প্রতিটি ভোটার যাতে নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে এসে স্বচ্ছন্দে তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন সেজন্য ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেওয়া হয়।”

নিজে রাজধানীর দুটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ হতে দেখেছেন বলে জানান কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ।

সংসদ সদস্যরা যাতে এলাকায় থেকে প্রভাব বিস্তার করতে না পারেন তা নিশ্চিত করতে তাদের এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন।

কাজী রকিব বলেন, “এ নির্বাচনে যেহেতু ভোটার কম, সেজন্য ভোটের গোপনীয়তা রক্ষা ছিল একটি চ্যালেঞ্জ। এজন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কোনো ভোটার যাতে প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল না মারেন এবং ব্যালটের ছবি তুলতে না পারেন সে ব্যবস্থাও নিয়েছি। মোবাইল ফোনসহ সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।”