নারায়ণগঞ্জে স্বস্তিতে সবাই

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে উৎসবের আমেজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেদের রায় দিচ্ছেন ভোটাররা। অর্ধেক বেলা পর্যন্ত ভোটের যে চিত্র তাতে ভোটার থেকে শুরু করে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী ও নির্বাচন কর্মকর্তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

মাসুম বিল্লাহফয়সাল আতিক ও , নারায়ণগঞ্জ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Dec 2016, 07:59 AM
Updated : 22 Dec 2016, 09:18 AM

দলীয় প্রতীকে এই সিটির প্রথম নির্বাচন ঘিরে শুরুতে নানা শঙ্কার কথা শোনা গেলেও বৃহস্পতিবার ভোটের দিন সবার মধ‌্যে স্বস্তি দেখা গেছে।  

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর কেন্দ্রে সুষ্ঠু ভোট হওয়ার কথা জানিয়েছেন সেখানে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দেলোয়ার হোসেন দিলু।

সকালের পশ্চিম দেওভোগ এলাকার শিশুপার্ক স্কুলের ওই কেন্দ্রে ভোট দেন আইভী।

বেলা সাড়ে ১২টার দিকে দিলু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা আইভীর কেন্দ্র। এখানে অর্ধাঅর্ধি ভোট পাইলেই আমরা খুশি।”

কেন্দ্রের ভেতরে পোলিং এজেন্টরা ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন বলেও জানান তিনি।

“জেলা বিএনপির নেতারা খোঁজখবর করছেন, আমরা তাদের বলেছি, সার্বিক অবস্থা ভালই। এ পর্যন্ত ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের মোট ৫টি কেন্দ্র থেকে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।”

সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৩৭৯৫ ভোটের মধ্যে প্রায় ১৪০০ জন ভোট দিয়েছেন বলে জানান ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম।

১৭ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্রে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা হাজী সেলিম মিয়াও সেখানে সুষ্ঠু ভোট হওয়ার কথা জানান।

ওয়ার্ড বিএনপির এ সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, “এই এলাকায় এমনিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সবসময় সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ। ভোটগ্রহণও সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ হচ্ছে।”

ওয়ার্ডের অন্যান্য কেন্দ্র থেকেও কোনো খারাপ খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

নগরীর শহীদনগরের নতুন গোপনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারীদের কেন্দ্রেও ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ হওয়ার কথা জানান প্রিজাইডিং কর্মকর্তা তৌহিদ রেজা।

বেলা ১২টায় তিনি বলেন, “সার্বিক অবস্থা ভাল। এখন পর্যন্ত ৪০ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছেন। এই সংখ্যা ৮০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে।”

প্রিজাইডিং কর্মকর্তার মতো বিএনপির পোলিং এজেন্ট রুমা আক্তারও ভোট শান্তিপূর্ণ হওয়ার কথা জানান। সব কক্ষেই দলের পোলিং এজেন্ট আছে বলে জানান তিনি।

১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ১৩ নম্বর নলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর কথা হয় ভোটার মোহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে।

তিনি বলেন, “এখানে নৌকা আর ধানের শীষ নিয়ে কোনো আলোচনা নাই। দুইপক্ষের লোকজন তাদের ভোট দিয়ে যাচ্ছেন। কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোটারদের কার্যক্রম বেশি।”

শিশুবাগ স্কুল কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা একজন নারী বলেন, “যোগ্য ও ভালো প্রার্থীকে ভোট দেব। প্রথমবার ভোট দিতে এসে বেশ ভালো লাগছে, পরিবেশও ভালো।”

বন্দরও শান্ত

নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায় সব সময়ই বিএনপির অবস্থান শক্ত। মেয়র প্রার্থী ছাড়াও কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদের নিয়েও এখানকার ভোটাদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে স্বস্তিতে ভোট দিতে পারার কথাই বলেছেন সবাই।

সকাল থেকে বন্দরের বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের লম্বা সারি দেখা গেছে। কোনো গোলযোগ নেই। স্বস্তিতে ভোট দিতে পেরে খুশি সবাই।

কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটাদের সঙ্গে কথা বলে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আইভীর পক্ষে বেশি মানুষের মতামত পাওয়া যায়। তবে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেনের সমর্থকরা বলছেন- বন্দর এলাকা থেকে বিপুল ভোটে জয় নিয়ে যাবেন তাদের প্রার্থী।

নবীগঞ্জ ভোটকেন্দ্রের পাশে নিজেই আগ্রহী হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন গৃহিণী রেখা বেগম, রুনা আক্তার ও রুমা বেগম।

সোহেল রহমান নামের এক ভোটার জানালেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে।

নবীগঞ্জ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই কেন্দ্রে ৩৩শর মতো ভোটার আছে, যার অর্ধেকই নারী। সকাল ১০টা পর্যন্ত ৭শ’র মতো ভোট পড়েছে।”

সকাল ৯টার দিকে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কদম শরীফ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কথা হয় দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই কামাল হোসেনের সঙ্গে

তিনি বলেন, “এই কেন্দ্রে কোনো ধরনের ঝামেলা বিশৃঙ্খলা নেই। ঝামেলা হওয়ার আশঙ্কা নেই।”

দুই হাজার ৫৪টি ভোটের এই কেন্দ্রে মাত্র চারটি বুথ ও জায়গার সংকীর্ণতার কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

কেন্দ্রে কেন্দ্রে নৌকা, ধানের শীষসহ অন্যান্য প্রার্থীদের এজেন্টদের ব্যস্ত দেখা গেছে। তাদের কারও মুখে ছিলনা কোনো অভিযোগ।