আমরা মূলত গৃহস্থ, চাষাভূষা: শ্রম প্রতিমন্ত্রী

মজুরি বাড়ানোর দাবিতে তৈরি পোশাক খাতের বেশকিছু কারখানায় চলমান শ্রমিক আন্দোলনকে শ্রম আইনের পরিপন্থি মন্তব্য করে শ্রমিকদের কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Dec 2016, 07:09 PM
Updated : 20 Dec 2016, 07:09 PM

সোমবার রাজধানীতে আলোচনা সভায় ঢাকার আশুলিয়ায় চলমান শ্রমিক আন্দোলন সম্পর্কে তিনি বলেন, “এই আন্দোলন শ্রম আইনের পরিপন্থি এবং অযৌক্তিক। মৌখিকভাবে দাবি জানালে তা পূরণ করার কোনো সুযোগ নেই, লিখিতভাবে জানাতে হবে।”

বক্তব্যে শ্রমিক রাজনীতি বোঝেন না বলে দাবি করেন আইন পেশা থেকে রাজনীতিতে আসা চুন্নু।

“আমি শ্রমিক রাজনীতি, শিল্প অর্থাৎ ইন্ডাস্ট্রিও বুঝি না। আমার জুডিশিয়াল ব্যাকগ্রাউন্ড, তবে গত ৪০ বছর ধরে মানুষের সাথে আছি। আসল ব্যাপার হচ্ছে আমরা শিল্প সম্পর্কে কিছু জানিই না। আমরা মূলত গৃহস্থ, চাষাভূষা; এই শিল্প তো কিছুদিনের।”

বেতন বৃদ্ধি, ঘরভাড়া না বাড়ানো, ‘কথায় কথায়’ ছাঁটাই না করাসহ বিভিন্ন দাবিতে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের জামগড়া, বেরন, বাইপাইল, নরসিংহপুরসহ আশপাশে বিভিন্ন পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা গত আট দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।

চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় মঙ্গলবার ঘোষণা দিয়ে আশুলিয়ার এলাকার ৫৫টি গার্মেন্টস বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক খাতের (আরএমজি) শ্রমিকদের অধিকারের পাশাপাশি দায়িত্বও থাকতে হবে বলে মনে করেন প্রতিমন্ত্রী।

“একজন শ্রমিকের রাইটস অ্যান্ড রেস্পন্সিবিলিটিস উভয়ই থাকতে হবে। শ্রমিক নেতারা শুধু বলেন ইউনিয়ন আর রাইটস। আপনি রাইটস চাবেন কিন্তু দায়িত্ব পালন করবেন না, তবে কিভাবে হবে।”

নারী শ্রমিকরা ইউনিয়ন ও অধিকার সম্পর্কে কিছুই বোঝে না বলেও মন্তব্য করেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী।

“মহিলা শ্রমিকরা তো কিছু বোঝেই না। তাদের ইউনিয়ন, অধিকার সম্পর্কে কোনো মাথা ব্যথাই নাই। আপনারা সংবিধানের দোষ দিবেন আর বলবেন মিনিমাম ওয়েজ, ফেয়ার ওয়েজ; আমাদের সঙ্গতিটাও তো বুঝতে হবে আপনাদের।

“বিদেশি ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলাকে বলেন না দাম বাড়াতে। এক্সপোর্টের পিকটাইমটা এখন চলছে, আর এখনি আনরেস্টটা শুরু হয়েছে। সমস্ত এক্সপোর্ট এখন বন্ধ। এগুলো আমাদের সেক্টরকে শেষ করে দিতে একটা ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই না।”

রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে এএস মাহমুদ হলে আরএমজি সেক্টরের সামাজিক আলোচনা, লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা এবং জীবনধারণ উপযোগী মজুরি বিষয়ে এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশন।

আলোচনায় শ্রমিকের জীবনধারণ উপযোগী মজুরির (লিভিং ওয়েজ) সঠিক সংজ্ঞা জানা নেই স্বীকার করলেও বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার সময় এখনও আসেনি বলে মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী চুন্নু।

তিনি বলেন, “লিভিং ওয়েজ বিষয়টা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার সময় মনে হয় এখনও আসেনি আমাদের। এটা অনেক ব্রডার সেন্সে বলা কথা। মিনিমাম ওয়েজ আর লিভিং ওয়েজের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে। এর মধ্যে আরও অনেক ব্যাপারই অন্তর্ভুক্ত।”

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের চলমান অগ্রগতির বিষয়টি যেন গুরুত্ব পায় সেজন্য পোশাকশিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করাই পাবে গোলটেবিল আলোচনাটি আয়োজনের প্রধান উদ্দেশ্য বলে আয়োজকরা জানান।

বৈঠকে জাতীয় পোশাক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, “ফ্যাক্টরিতে বিদ্যমান শ্রমিক সংগঠনের বিকল্প হিসেবে অংশগ্রহণকারী কমিটি হতে পারে না, বরং অংশগ্রহণকারী কমিটি শ্রমিক সংগঠনের সহযোগী হতে পারে।”

নারী উদ্যোগ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদা খাতুন শেফালী বলেন, সমাজের পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব কর্মপরিবেশকেও প্রভাবিত করে। নারীদের কাজের পরিবেশ নিরাপদ করতে কারখানাগুলোর লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা উচিত।

বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিসের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার কর্মীরা বৈঠকে ছিলেন।