ঝুঁকি: নারায়ণগঞ্জে ৭৯% কেন্দ্রে থাকবে ‘বিশেষ নজর’

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ১৭৪টি কেন্দ্রের মধ‌্যে ১৩৭টিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বিবেচেনা করে ভোটের নিরাপত্তা সাজাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।  

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Dec 2016, 07:16 AM
Updated : 20 Dec 2016, 10:29 AM

রাজধানীর লাগোয়া এই শিল্প নগরীতে আগামী বৃহস্পতিবার ভোট সামনে রেখে সোমবার মাঠে নামছে ২২ প্লাটুন বিজিবি। অন‌্য এলাকার বাসিন্দাদের নারায়ণগঞ্জে অবস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে সোমবার মধ্যরাত থেকে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার বলছেন, সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে পুরো শহর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলার পরিকল্পনা নিয়েছেন তারা।

নগরীর ১৭৪টি কেন্দ্রের প্রতিটিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ২৪ জন করে সদস্য থাকবেন। তবে ১৩৭টি ভোটকেন্দ্রে ‘বিশেষ নজর’ রাখা হবে।

রোববার আইন-শৃঙ্খলা সমন্বয় ও মনিটরিং সেলের বৈঠক শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, “এবার নারায়ণগঞ্জে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর ৫৬০০ সদস‌্য মাঠে থাকবে।... ১৩৭টি কেন্দ্রের তালিকা পেয়েছি একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে। এগুলোকে বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হবে।”

ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে যে কোনো সময় ‘পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে’, তা মাথায় রেখে ‘গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে’ টহল জোরদার করা হবে বলে জানান ইসির এ উপ সচিব।

রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ নির্বাচনের ৭৯ শতাংশ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। এসব কেন্দ্রে গোলযোগের পাশাপাশি স্থানীয় প্রভাবশালীদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা হতে পারে।

প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারের জন‌্য নারায়ণগঞ্জে আসা ‘বহিরাগতদের’ এলাকা ছাড়তে হবে সোমবার মধ্যরাতেই। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে নিষিদ্ধ হবে সব ধরনের প্রচার।

রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, “আমরা মাইকে প্রচারণার শেষ সময় স্মরণ করে দিতে বলব। ভোটের আগে ৩২ ঘণ্টা সব ধরনের মিছিল, জনসভাসহ প্রচার নিষিদ্ধ থাকবে।”

বিএনপি সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে এলেও নুরুজ্জামান নারায়ণগঞ্জের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, তার ‘দরকার পড়বে না’।

“সোমবার বিজিবি, মঙ্গলবার র‌্যাব, বুধবার পুলিশ, এপিবিএন, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ডসহ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী মাঠে নামবে। শিল্প পুলিশও থাকবে মাঠে। কেন্দ্রে যেখানেই ঝামেলা হবে, সেখানে অভিযোগকারীকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে যাবে টহল টিম।”

নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ‘কঠোর’ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, “কেন্দ্রে কেন্দ্রে অস্ত্রসহ পুলিশ সদস্য থাকবে। যে কোনো অনিয়ম হলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নিতে বলেছি।”

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন

২২ ডিসেম্বর ভোট

সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ

২৭টি ওয়ার্ডে ১৭৪টি কেন্দ্র, ভোটকক্ষ ১ হাজার ৩০৪টি

মেয়র পদের ৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৫৬ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের ৩৮ জন প্রার্থী

নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রোববার নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে রুদ্ধদার বৈঠক করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন কৌশল নির্ধারণ নিয়ে মূলত এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাকে ‘বেশি ঝুঁকিপূর্ণ’ বিবেচনা করে সেখানে ‘বাড়তি ফোর্স’ মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। যে ২২ প্লাটুন বিজিবি সদস‌্যের নারায়ণগঞ্জে দায়িত্ব পালনের কথা রয়েছে, তার মধ‌্যে ১০ প্লাটুনই থাকবে সিদ্ধিরগঞ্জে। তারা দুটি স্থানে অবস্থান নিয়ে টহলে থাকবেন। এছাড়া শহর এলাকায় সাত প্লাটুন ও বন্দর এলাকায় পাঁচ প্লাটুন বিজিবি থাকবে।

মঙ্গলবার র‌্যাবের ২৭টি মোবাটিমটীম মাঠে নামবে। প্রতিটি দলে থাকবেন ১২ জন করে। প্রতিটি ওয়ার্ডে পুলিশের তিনটি করে মোট ৮১টি টিম টহলে থাকবে। প্রতিটি টিমের সদস্য সংখ্যা হবে ১২ জন।

নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বৈঠকে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। ভোটের সময় শিল্প পুলিশের ২০০ জন সদস্য জেলা পুলিশের সঙ্গে যোগ দেবেন বলে ইসি কর্মকর্তারা জানান। 

তারা বলছেন, ভোটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অস্ত্রসহ সাতজন পুলিশ, অস্ত্রসহ তিনজন ব্যাটালিয়ন আনসার, অঙ্গীভূত আনসার/ভিডিপর ১৪ সদস্যসহ মোট ২৪ জন থাকবেন প্রতিটি কেন্দ্রে।

২৭টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ৫ ডিসেম্বর থেকে মাঠে রয়েছেন নির্বাহী হাকিম। আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে ভোটের দিন আরও নয় জন যোগ হবেন। তখন ১৪ জন বিচারিক হাকিম মাঠে থাকবেন।