বাঙালির বিজয়ের কুচকাওয়াজে রাষ্ট্রপতির সালাম গ্রহণ

বাংলাদেশের জন্মযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের ৪৫ বছর পূর্তিতে জাতীয় প্যারেড ময়দানে কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Dec 2016, 04:51 AM
Updated : 16 Dec 2016, 08:12 AM

শুক্রবার সকালে শেরেবাংলা নগরে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বর্ণাঢ্য এই কুচকাওয়াজে মুক্তিযোদ্ধা কন্টিনজেন্ট, সশস্ত্র বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন শাখা ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অগ্রগতির তথ্য জানানো হয় অতিথিদের।

বাংলাদেশ টেলিভিশন জাতীয় প্যারেড ময়দান থেকে এ অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করে।

সকাল ১০টায় রাষ্ট্রপতি জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এবং তিন বাহিনীর প্রধানরা তাকে স্বাগত জানান।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় এবং সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের আয়োজনে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী, বিএনসিসি, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও ভিডিপি, কোস্ট গার্ড এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা সুসজ্জিতভাবে এই কুচকাওয়াজে অংশ নেন।

ধূসর স্যুট ও সাদা শার্ট পরিহিত রাষ্ট্রপতি খোলা জিপে চড়ে কুচাকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং পরে অভিবাদন মঞ্চে দাঁড়িয়ে সালাম গ্রহণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক এবং তিন বাহিনীর প্রধানরা অভিবাদন মঞ্চে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও তার বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ, সচিব, সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা, বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও বিভিন্ন মিশনের প্রধান এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর ২৭ সদস্যের একটি দল কুচকাওয়াজে উপস্থিত ছিলেন। এই দলের নেতৃত্ব দেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন‌্যান্ট জেনারেল জিএস সিহোতা। এছাড়া রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর একটি প্রতিনিধি দলও উপস্থিত ছিলেন।

এবারের কুচকাওয়াজের অধিনায়ক ছিলেন নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

অভিবাদন মঞ্চের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশাল প্রতিকৃতি রাখা হয়। তার পাশে ছিল জাতীয় চার নেতা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির উপরে ছিল মুক্তিযুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠর ছবি।

বাদক দলের মঞ্চের পাশে প্রদর্শন করা হয় লাল-সবুজ পাতা দিয়ে তৈরি জাতীয় পতাকা।

সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েক হাজার মানুষ দুই ঘণ্টাব্যাপী মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন।

আর্মি ও নেভাল এভিয়েশন ও র‌্যাব ফ্লাই পাস্ট করে কুচকাওয়াজে রাষ্ট্রপতিকে সালাম জানায়। বাংলাদেশ সেনা বাহিনী, নৌ ও বিমান বানিহীতে নতুন সংযোজিত বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জাম প্রদর্শিত হয়।

পদাতিক বাহিনীর কুচকাওয়াজের পর অত্যাধুনিক রণসাজে সজ্জিত দল রাষ্ট্রপতিকে অভিবাদন জানায়। এছাড়া ওয়ার ডগ ও সম্মিলিত অশ্বারোহী কন্টিনজেন্ট রাষ্ট্রপতিকে অভিবাদন জানায়।

কুচকাওয়াজে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সুসজ্জিত গাড়ি বহর উন্নয়নের প্রদর্শন করেন। এছাড়া বিমানবাহিনীর কে-৮ ডব্লিইউ, এফ-৭ বিজিওয়ান ও মিগ-২৯বি যুদ্ধ বিমানের অ্যারোবেটিক ডিসপ্লে দর্শকদের মুগ্ধ করে।

বিমান বাহিনীর অংশগ্রহণে রাষ্ট্রপতিকে ‘ফ্লাইং স্যালুট’ দেয় যুদ্ধ বিমান ‘মিগ-২৯’। যুদ্ধ বিমানগুলো লাল সবুজ ধোঁয়া উড়িয়ে রাষ্ট্রপতিকে অভিবাদন জানায়।

এছাড়া ২০০ ফুট দীর্ঘ ও ১২০ ফুট প্রস্থের একটি জাতীয় পতাকাও প্রদর্শিত হয় কুচকাওয়াজে।

সব শেষে সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার চাইলা প্রু মারমার নেতৃত্বে সম্মিলিত বাদক দল রাষ্ট্রপতিকে অভিবাদন জানায়।

আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল জাতীয় পতাকা ও রাষ্ট্রপতির পতাকাসহ প্যারাশুট জাম্প।

কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ শেষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী প্যারেডে অংশ নেওয়া কন্টিনজেন্ট কমান্ডারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।