গুরুত্বের নারায়ণগঞ্জে ‘অনুকরণীয়’ নির্বাচনের আশায় সিইসি

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ‘অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত’ হিসাবে তুলে ধরার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন মেয়াদের শেষের দিকে থাকা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।

নিজস্ব প্রতিবেদক নারায়ণগঞ্জ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2016, 10:31 AM
Updated : 15 Dec 2016, 10:31 AM

বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, “এ পর্যন্ত আপনাদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার পর্যবেক্ষণ থেকে আমি আশাবাদী আপনারা ইচ্ছা করলেই এই নির্বাচনকে সমগ্র বাংলাদেশের জন্য একটা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবেন।”

আইনশৃঙ্খলাবাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আপনারা আশ্বস্ত হোন, একটিমাত্র নির্বাচন হচ্ছে, সারাদেশে আর কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। আমার কাছে অনেক ফোর্সেস অ্যাভেলেভল আছে। মোবাইল কোর্টের সংখ্যাও প্রয়োজনবোধে বাড়ানো হবে।”

আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে উদ্দেশ করে সিইসি বলেন, “আপনারা সকল সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবেন। তবে, অযথা কেউ যেন হয়রানি না হন, সে ব্যাপারেও সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন। একজন নিরাপরাধ ব্যক্তিও যেন হয়রানির শিকার না হন।

“এই নির্বাচনকে আমরা অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। এ কারণে আমরা সবাই এখানে। নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পক্ষ থেকে যা করার তা করা হবে। সে অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলবাহিনী আমরা মোতায়েন করব।”

কাজী রকিব বলেন, “নির্বাচনের সুষ্ঠু ও শান্তিপুর্ণ পরিবেশ সব সময়ে মেনটেইন করতে হবে। কেবল ভোটের দিন নয়, তার আগের দিন থেকে আমার মালপত্র ভোটকেন্দ্রে পৌঁছানোর পর থেকে সারারাত্রি পাহারা দিতে হবে।

”কোনো রকমের বিশৃঙ্খলা আমরা বরদাস্ত করব না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আমার নির্দেশ, তারা যেন দুষ্কৃতিকারীদেরকে দৃষ্কৃতকারী বলেই মনে করে। তারা যেন কাউকে প্রশ্রয় না দেয়।”

প্রার্থীদের বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে সিইসি বলেন, “এখানে সবাই বলেছেন, তারা কেউ মারামারির পক্ষে নন, হানাহানির পক্ষে নন। কাজে যারাই দুষ্কর্ম করবে তাদের যথাযথ শাস্তির বিধান করতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা কোনো ছাড় দেব না।

সিইসি বলেন, “আমাদের আইনেই আছে ভোটকেন্দ্রেই ফলাফল প্রকাশ করতে হবে, আমরা করিও তা। এবারও কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। প্রিজাইডিং অফিসারদেরকে সেটা প্রতিপালনের কথা পুনরায় মনে করিয়ে দিচ্ছি।”

রিটার্নিং অফিসার ও ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে অভিযোগ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা ঢালাও অভিযোগ করবেন না। সুনির্দিষ্ট ঘটনা উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দিবেন। যাতে আমরা আইন মোতাবেক দ্রুত প্রতিকার করতে পারি। আমরা অত্যন্ত সচেষ্ট। কী ঘটনা, কে করেছে সুনির্দিষ্টভাবে বলবেন।”

“আমি আবারও নির্দেশনা দিচ্ছি, প্রতিটি অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে আমাদের”, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন সিইসি।

বানোয়াট অভিযোগ দিলে দণ্ডবিধি অনুযায়ী বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।

কাজী রকিব বলেন, “কোনো গুরুতর ঘটনা ঘটলে সংক্ষুব্ধরা বাদী হয়ে মামলা করবেন। সংক্ষুব্ধ কেউ না থাকলে সহকারী রিটার্নিং অফিসাররা আমাদের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন।”

পোলিং এজেন্ট নিয়ে বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, “কোনো সেন্টারে পোলিং এজেন্টকে যেন ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া না হয়। এ বিষয়ে নির্বাচনী কর্মকর্তাগণ এবং আইনশৃঙ্খলবাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন “

নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা শান্তিপূর্ণ থাকবে বলে প্রার্থীদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, “আমি আইনশৃঙ্খলার সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা আছে আছেন। আমি তাদের নির্দেশ দিচ্ছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না।”

২৭টি ওয়ার্ডে ২৭টি মোবাইল কোর্ট দায়িত্ব পালন করছে জানিয়ে সিইসি বলেন, প্রয়োজনে ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। শেষ কয়েকদিনে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরাও অংশ নেবেন।”

সিইসি বলেন, “নিজেরা কালো টাকার ব্যবহার করবেন না, কেউ করলে আপনারা জানাবেন। আমরা রাতের বেলায় পাহারা বজায় রাখব। কোনো ধরনের খবর পেলে রেইড করব, যাতে কেউ কারচুপির করতে না পারে।

ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা যাতে কোনো ধরনের সহিংসতার শিকার না হয় সে বিষয় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীসহ সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

কাজী রকিব বলেন, “আমরা কোনো প্রার্থীকে চিনি না। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে এসে যেন নির্বিঘ্নে তাদের ভোট দিতে পারে। আপনারা ভোটারদের রায় মেনে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সুনাম ও ঐতিহ্য আরও সমৃদ্ধ করেন।”

জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়ার সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার হেলাল উদ্দিন, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান, রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার, পুলিশ সুপার মইনুল হক, বিজিবির ৩৯ ব্যাটালিয়নের প্রধান শামীম ইফতেখার, র‌্যাব-১১’র অধিনায়ক কামরুল আহসান এবং প্রতিদ্বন্দ্বী ৭ মেয়র প্রার্থী বক্তব্য দেন।